অতিথি পাখির কলতানে মুখর ঠাকুরগাঁওয়ের রামরাই দিঘি

সকাল হতেই অতিথি পাখির কলতানে মুখর হয়ে ওঠে রামরাই দিঘি। দল বেধে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি খাবারের সন্ধানে দিঘির এ পাড় থেকে ও পাড় উড়ে বেড়ায়। দেখলে মনে হয় কীসের যেন মহড়া দিচ্ছে ওরা। কেউ কেউ টুপ করে ডুব দিয়ে জলে থাকা মাছ ধরে আবারও উড়াল দেয়। সে কী এক অপরূপ দৃশ্য।

ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার রামরাই দিঘির পানিতে সারাবেলাই এমন খেলা চলে। এখানে প্রতি বছরই নাম না জানা অচেনা অতিথি পাখিরা এসে ভিড় জমায়। শীতপ্রধান দেশ মূলত রাশিয়ার সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, চীনের জিনজিয়াং ও ভারত মহাসাগরে খুব শীত পরে। মূলত শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতেই এরা হাজার হাজার মাইল থেকে উড়ে এদেশে আসে। এখানকার খাল, বিল, নদী দিঘিতে এসে এরা আশ্রয় নেয়, বাসা বাঁধে।

মজার ব্যাপার হলো, এ বছর পঞ্জিকায় শীত ঋতু শেষ হয়ে বসন্ত আসলেও অতিথি পাখিগুলো এখনো রয়ে গেছে এই দিঘিতে।

বুধবার (৩ মার্চ) দুপুরে রাণীশংকৈল উপজেলার রামরাই দিঘিতে সরেজমিনে গেলে দেখা মিলে, খয়রা চখাচখি, বালিহাঁস, কার্লিউ, বুনোহাঁস, ছোট সারস, বড় সারস, কাদাখোঁচা, হেরন, নিশাচর ডুবুরি, চিতি প্রভৃতি অতিথি পাখি। তাদের কিচিরমিচির শব্দে প্রাণ জুড়িয়ে যায়। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গেই রামরাই দিঘির পাড়ের লিচু গাছে আশ্রয় নেয় এই অতিথি পাখিরা। ভোর হলেই আবার খাবারের সন্ধানে দিঘির পানিতে ভিড় জমায়। দিঘির পানিতে খাবার সংগ্রহ, পাখিদের গোসল করার দৃশ্য, ছুটোছুটি, জলকেলি যে কারো মনকে আকৃষ্ট করবেই। তাই এই ঐতিহ্যবাহী দিঘি দেখতে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন দর্শনার্থীরা। এখানকার মনোরম দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হন তারা।

রামরায় দিঘি এলাকার বাসিন্দা রাফসান জ্যানি আওয়ার নিউজ বিডিকে বলেন, ‘প্রতি বছর বহু প্রজাতির অতিথি পাখি এই দিঘিতে আসে। পাখি থাকলে এখানকার দৃশ্য খুবই মনোরম। এখানে দূর-দূরান্তের মানুষের সমাগম হয়।’

উপজেলার গোগর গ্রাম থেকে আগত রিপন সাফি ও হারুনুর রশিদ নামে দুই দর্শনার্থী আওয়ার নিউজ বিডিকে, ‘ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখি যখন বিচিত্র স্বরে ডাকতে ডাকতে আকাশে উড়ে বেড়ায়, তখন মন নিমেষেই প্রফুল্ল হয়ে যায়। জলাশয়গুলোতে অতিথি পাখির অনাবিল সৌন্দর্য দেখতে পাখিপ্রেমীরা ভিড় করেন। এখানকার পরিবেশ ও পাখিগুলো দেখে এতো ভালো লেগেছে, যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।’

রামরাই দিঘির মৎস্য চাষি নওরোজ কাউসার কানন বলেন, ‘পাখিরা মাছের ক্ষতি করলেও যাতে তারা এখানে নির্ভয়ে থাকতে পারে তার ব্যবস্থা আমরা করে থাকি। এখানকার পরিবেশ অনেক ভালো। সরকার যদি উদ্যোগ নেয় এখানে আরও ভালো কিছু করার, তাহলে আরও ভালো হবে। তাহলে বেশি বেশি করে দর্শনার্থী আসবে। আশা করি, সরকার এই সুযোগ সৃষ্টি করে দিবেন।’

রাণীশংকৈল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহরিয়ার আজম (মুন্না) আওয়ার নিউজ বিডিকে বলেন, ‘রামরাই দিঘি অতিথি পাখির জন্য এক অভয়াশ্রম। এই দিঘিটিকে উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা ও বিশেষ করে শীতকালীন পাখিদের জন্য এটিকে অভয়াশ্রম করার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।’

রাণীশংকৈল উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির জানান, অতিথি পাখিদের এখনো এই দিঘিতে অবস্থান করার কারণ দুইটি। প্রথমত সেখানে নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত নৌকা চালানো বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল জলাশয় ইজারাদারদের। আর দ্বিতীয়ত এবার শীতের স্থায়ীত্ব বেড়ে যাওয়ার ফলে এখনো পাখিগুলো সেখানে অবস্থান করছে। পাখিরা থাকলে দিঘির সৌন্দর্য অনেক বেড়ে যায়।