অধিকাংশ দল নির্বাচনকালীন সরকার ও সেনা মোতায়েনের পক্ষে

৪০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ শেষ করে নিজেদের সফল ভাবছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সংলাপে অংশ নেয়া অধিকাংশ রাজনৈতিক দল সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচনকালীন সরকারের পক্ষে মত দিয়েছে। আর বেশিরভাগ দলই নির্বাচনের সেনা মোতায়েনের পক্ষে।

রাজনৈতিক দলগুলোর দাবি-দাওয়ার মধ্যে বিস্তর ফারাক এবং অনেক প্রস্তাব ইসির এখতিয়ারভুক্ত না হওয়া সত্বেও এ সংলাপের মাধ্যমে দলগুলোর আস্থা অর্জন করছে বলেও মনে করছে ইসি। তাদের দাবি এই সংলাপের মাধ্যমে অনেক পথ ও উদ্যোগের সন্ধান মিলেছে।

নির্বাচনী কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে চলতি বছরের জুলাই থেকে অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ শুরু করে ইসি। বৃহস্পতিবার ইসিতে নিবন্ধিত ৪০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক শেষ করেছে ইসি। গত ৩১ জুলাই সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং ১৬ ও ১৭ আগস্ট গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে ইসি। পরবর্তীতে ২৪ আগস্ট থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় শুরু হয়।

জানতে চাইলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা বৃহস্পতিবার বলেন, বৃহস্পতিবার ছিল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে শেষদিনের শেষ সংলাপ। দলগুলো আমাদের আহ্বানে সংলাপে অংশ নিয়ে আমাদের সমৃদ্ধ করেছে। আমি বলতে পারি, আমাদের উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। এ সংলাপের মাধ্যমে যে আস্থার সেতু তৈরি হলো তা আগামীতে আব্যাহত থাকবে বলে আমরা আশা করি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কীভাবে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করা যায় সে বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করি।

তিনি বলেন, সংলাপের মাধ্যমে আমরা অনেক পথের সন্ধান পেয়েছি, উদ্যোগের সন্ধান পেয়েছি। এগুলো আমরা কাজে লাগাব। প্রয়োজনে আমাদের পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনায় তাদের প্রস্তাব কাজে লাগাব।

তিনি বলেন, সার্বিকভাবে বলতে গেলে সংলাপে আমরা সফলতা অর্জন করেছি।

বাংলাদেশ ন্যাশনালিষ্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, ইসলামীক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী লীগ, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল (পিডিপি), গণফ্রন্ট, গণফোরাম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামী বাংলাদেশ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ, জাকের পার্ট, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল –জাসদ, জাতীয় পার্টি, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, গণতন্ত্রী পার্টি, বিএনপি, আওয়ামী লীগ, কমিউনিষ্ট পার্টি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এমএল), জাতীয় পার্টি –জেপি, ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি সংলাপে অংশ নেয়।

জানা গেছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় আসা প্রস্তাবগুলো একত্র করে বই আকারে প্রকাশ করবে ইসি। এরপর সে বই সরকার ছাড়াও অংশীজনদের কাছে পাঠানো হবে। দাবিগুলোর মধ্যে নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা চালুর বিষয়ে ইসির করার কিছু নেই। ওই পদ্ধতিতে নির্বাচন করতে চাইলে সংবিধান পরিবর্তন সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে। তবে বিষয়টি সরকারের নজরে আনবে বলেও ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানান।

সংসদে অংশ নেয়া দু’চারটি দল ছাড়া সবাই ইসির ইখতিয়ারভুক্ত প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে নির্বাচনকালীন বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন আসন্ন নির্বাচন করা। আর সংলাপে কয়েকটি বিষয় নিয়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এর একটি হলো—জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) প্রধান তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রার্থীদের হলফনামার বিধান না রাখার পক্ষে মত দেন। এর প্রতিবাদ জানায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

আর বিএনপির সঙ্গে সংলাপের দিন সিইসি দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে ব‘হুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠাতা’ বলায় সমালোচনার মধ্যে পড়েন তিনি। কিন্তু একদিন পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করে সিইসি বিষয়টি সামলে নেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ইসির সংলাপে অনেকগুলো প্রস্তাব এসেছে যা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির এখতিয়ারভুক্ত না। যেমন নির্বাচনকালীন সরকার পরিবর্তন, সংসদ বাতিল করা- এ সব তারা করতে পারে না। কিন্তু ইসি যদি মনে করে এগুলো ছাড়া তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হবে না, তাহলে তারা সরকারকে বলতে পারে। সরকার শুনবে কি শুনবে না সেটা ভিন্ন কথা। সরকার যদি না শোনে, তারা বলতে পারে আমরা এ অবস্থায় নির্বাচন করবো তাহলে সংলাপ করে কোনো লাভ হবে না। তবে ইসি যে সফলতার সঙ্গেই সংলাপ শেষ করেছে তা বলা যায়।

জানা যায়, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শেষ হলেও ২২ অক্টোবর সকাল ১১টায় অরাজনৈতিক সংগঠন নির্বাচনী পর্যবেক্ষক, ২৩ অক্টোবর সকাল ১১টায় নারী নেত্রী এবং ২৪ অক্টোবর সকাল ১১টায় নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে মতবিনিময় করবে ইসি। শেষ সংলাপে সাবেক নির্বাচন কমিশনারদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সূত্র : জাগো নিউজ