অপরাধীকে ধরিয়ে দেবে মশা?

সব আলামত লুকিয়ে ফেলার পর হত্যাকারীর মুখে তৃপ্তির হাসি। ঘটনার কোনো সাক্ষী নেই, আঙুল বা পায়ের কোনো ছাপও অবশিষ্ট নেই। একটা চুল পর্যন্ত পড়ে নেই, যার সূত্র ধরে খুনির পরিচয় শনাক্ত করা যেতে পারে।

কিন্তু এ রকম অবস্থায় একটা মশা যদি ঘটনাস্থলে সেই চতুর খুনিকে কামড়ায়, একদিন সেটা তাকে আদালতে দোষী সাব্যস্ত করার পথ খুলে দিতে পারে।

জাপানের নাগোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক এ তথ্য দিয়েছেন।
এ বিষয়ে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্লস ওয়ান সাময়িকীতে গত সোমবার প্রকাশিত হয়েছে। এতে গবেষকেরা লিখেছেন, মশার পাকস্থলী থেকে সংগৃহীত রক্তের সূত্র ধরে সেই নমুনার মূল ধারককে ৪৮ ঘণ্টা পরও শনাক্ত করা সম্ভব।

গবেষক দলটির প্রধান বিজ্ঞানী তোশিমিচি ইয়ামোমোতো বলেন, এই কৌশল অপরাধের ঘটনাস্থলে পুলিশের কাজে লাগতে পারে। ভবিষ্যতে এটা অপরাধীকে দোষী সাব্যস্ত করার জন্য প্রমাণ হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

মশা কতক্ষণ পর্যন্ত নিজের পাকস্থলীর ভেতরে শনাক্তের উপযোগী ডিএনএ প্রোফাইল ধরে রাখতে পারে, সেটা এত দিন কেউ জানত না। তাই ইয়ামোমোতো ও তাঁর সহযোগী একদল ফরেনসিক বিজ্ঞানী সেটা খুঁজে বের করার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁরা স্বেচ্ছাসেবীদের দংশনকারী কয়েকটি মশার পেটের ভেতর থেকে রক্ত উদ্ধার করে সেগুলো পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন (পিসিআর) নামের পদ্ধতি ব্যবহার করে পরীক্ষা করেন। অতি ক্ষুদ্র ডিএনএকে হাজারবার সম্প্রসারণে এটা কাজে লাগে। বিজ্ঞানীরা দেখতে পান, মশার পাকস্থলীতে হজম হওয়ার দুই দিন পরও স্বেচ্ছাসেবীদের রক্ত শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। তবে তিন দিন পেরিয়ে যাওয়ার পর আর সেই উপায় থাকে না।

কিউলেক্স পিপিয়েনস এবং অ্যাডিস অ্যালবোপিকটাসপ্রজাতির মশার ওপর এ পরীক্ষা চালানো হয়েছে। এরা ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় অঞ্চলে বসবাস করে।

অধিকাংশ মশা কয়েক শ মিটার ব্যাসার্ধের মধ্যেই ঘোরাফেরা করে। আর তাদের আয়ু কয়েক দিন থেকে শুরু করে কয়েক মাস পর্যন্ত স্থায়ী। স্ত্রী মশাগুলোই সাধারণত মানুষকে কামড়ায়। আর তারা পুরুষ মশার চেয়ে বাঁচে বেশি।