অবশেষে বাজলো ‘ছুটির ঘণ্টা’

১৯৮০ সালে নির্মিত হয় ছুটির ঘণ্টা ছবিটি, বাংলা চলচ্চিত্রের খ্যাতিমান সঙ্গীত পরিচালক সত্য সাহার প্রযোজনায় যার পরিচালক ছিলেন আজিজুর রহমান। ছুটির ঘণ্টা ছবিটির নাম শুনেনি বা দেখেনি এমন দর্শক বাংলা চলচ্চিত্রের খুব কমই আছে। যারা মূলধারার বাণিজ্যিক ছবির যে ৪/৫টি ছবির নাম বলতে পারে তাদের কাছেও এই ছুটির ঘণ্টা নামটি থাকে।

এই ছবিটির একটি বৈশিষ্ট্য ছিল সেই সময়ে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া একটি নির্মম ও বেদনাদায়ক সত্য ঘটনা চলচ্চিত্রে তুলে ধরা হয়েছিল। যা সেই সত্য ঘটনাকে আরও বেশি মানুষের মনে নাড়া দিয়েছিল। আজও ছবিটির কথা উঠলে দর্শকদের মন নাড়া দিয়ে উঠে।

ছবিটি মুক্তির আগে সেন্সর বোর্ড ছবির মুক্তি নিয়ে ঝামেলা করে। তাদের মতে, এই ছবি দেখলে কোমলমতি শিশুরা ভয় পাবে, তাদের উপর বাজে প্রভাব সৃষ্টি করবে। আজিজুর রহমান বিপদে পড়লেন। তিনি একটা বুদ্ধি বের করলেন। ছবির একটা বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করলেন, যেখানে বেশিরভাগ শিশুকে দাওয়াত করা হল তাদের বাবা মাসহ।

কিন্তু ছবি শেষে দেখা গেল, শিশুরা ভয় তো পেলই না, উল্টো চোখ মুছতে মুছতে হল থেকে বের হচ্ছে, এমনকি অভিভাবকেরাও। এরপরে এই ছবির মুক্তিতে আর কোন বাধা থাকল না।

ঢাকা শহরের নিজের বাড়ীতে একমাত্র কিশোর ছেলে খোকন (মাস্টার সুমন) কে নিয়ে মিসেস খান (সুজাতা) বসবাস করেন। খোকন ঢাকার শহরের একটি স্কুলে পড়ে। হাসিখুশি চঞ্চল ও উচ্ছল কিশোর খোকন কে স্কুলের শিক্ষক -শিক্ষিকা ও ছাত্রছাত্রীরা খুব পছন্দ করে। সেই স্কুলের দপ্তরি আব্বাস মিয়া (রাজ্জাক) ও ঝাড়ুদাড় আঙ্গুরি বেগম (শাবানা)। আব্বাস ও আঙ্গুরি বেগমের খুনসুটি সবসময় লেগে থাকে যা একসময় তাদের মধ্য প্রেমের সম্পর্কের দিকে গড়ায়। আব্বাস এর সাথে খোকনের খুব ভালো সম্পর্ক। দপ্তরী আব্বাস কিশোর খোকনকে খুব স্নেহ করে।

২দিন পরেই স্কুল ঈদের বন্ধ শুরু হবে। এই ছুটিতে খোকন মায়ের সাথে নানাবাড়ী যাবে ঈদ করতে। নানা শওকত আকবর মেয়ে ও নাতীকে নিতে স্কুলের ছুটি শুরু হওয়ার দুদিন আগেই চলে এসেছেন ঢাকায়। খোকন তার মা ও নানাভাইয়ের সাথে ঈদের কেনাকাটা করতে যায়। পথে যাদুকর জুয়েল আইচের যাদু প্রদর্শনী দেখে যাদু দেখার বায়না ধরে। মা ও নানাভাই সহ খোকন জুয়েল আইচের যাদু দেখে অবাক হয়।

এভাবেই খোকনের দিনগুলো খুব ভালোই যাচ্ছিল। যেদিন স্কুলে ঈদের ছুটি ঘোষণা করা হবে সেদিন সকালে স্কুলে আসতে খোকনের মন চাইছিল না, কিন্তু খোকন মায়ের আদর ভরা কণ্ঠের আদেশ মেনে স্কুলে আসতে বাধ্য হয়।স্কুল ছুটির পর খোকন দপ্তরী আব্বাস কে নতুন কাপড় দিয়ে আব্বাস এর কাছ থেকে বিদায় নিলো। খোকন কে স্কুল থেকে নিতে গাড়ী আসতে দেরি হওয়ায় খোকন তার বন্ধু পিকলু, রবার্ট, গনেশ কে বেবি ট্যাক্সিতে তুলে বিদায় দিয়ে প্রকৃতির ডাকে স্কুলের বাথরুমে যায়। দপ্তরী আব্বাস মিয়া স্কুলের সব কক্ষ তালা মেরে চলে যাওয়ার সময় ভেতর থেকে লাগানো বাথরুমে থাকা খোকনের বাথরুমের দরজা তালা মেরে চলে যায়।

খোকন বাথরুম থেকে বের হওয়ার সময় বুঝতে পারে সে ভেতরে আটকা পড়েছে। সেদিনের পর স্কুল আর খুলবে ১১ দিন পর। এই বাথরুমে আটকে পড়া খোকনের দিনগুলো আর খোকন কে খুঁজে না পাওয়ার অসহ্য কষ্টের দিনগুলো নিয়ে ছবিটা শেষ পর্যন্ত এগিয়ে যায়। পরিশেষে খোকনের জীবনে বাজে ‘ছুটির ঘন্টা।’ ছবির মূল ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন নায়করাজ রাজ্জাক। সোমবার (২১ আগস্ট) কিংবদন্তি এই অভিনেতার জীবনের শেষ ‘ছুটির ঘন্টা’ বাজলো। ৬.১২ মিনিটে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ইউনা্ইটেড হাসপাতালে মারা যান কিংবদন্তি এই অভিনেতা।