অবিরাম বর্ষণ ও জোয়ারে ফের তলিয়েছে চট্টগ্রাম

অবিরাম বর্ষণের সাথে জোয়ারের মিতালিতে আবার তলিয়ে গেছে চট্টগ্রাম মহানগরের দুই তুতীয়াংশ এলাকা। শনিবার গভীর রাত থেকে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ শুরু হয়। যা এখনও চলছে।

বর্ষণে কাকভেজা দুর্ভোগ আর ভোগান্তি পোহালেও নগরীর জনজীবন মোটামুটি সচল ছিল। কিন্তু বিকাল থেকে পানি মাড়িয়ে চলতে গিয়ে নিশ্চল গতিহীন ভোগান্তির শিকার হন নগরবাসী। চলতি বর্ষা মৌসুম শুরুর আগ থেকে একের পর এক জলাবদ্ধতার ভোগান্তি মানুষের মাঝে দীর্ঘশ্বাস হয়ে বাজছে।

পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ ফরিদ আহমেদ বলেন, সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে চট্টগ্রামে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। রোববার দুপুর ১২টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘন্টায় ৮৭ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, বৃষ্টিতে নগরীর চকবাজার, বাদুরতলা, বহদ্দারহাট, আরাকান হাউজিং, মোহাম্মদপুর আবাসিক এলাকা, ফরিদের পাড়া, সমশের পাড়া, বাকলিয়া, মুরাদপুর, দুই নম্বর গেইট, জিইসি, হালিশহর, আগ্রাবাদ এক্সেস রোড, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকাগুলো হাঁটু থেকে কোমর সমান পানিতে তলিয়ে গেছে।

বকশির হাট ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর জামাল হোসাইন বলেন, অবিরাম বর্ষণে বঙ্গোপসাগরে বিকেল তিনটা থেকে প্রবল জোয়ার বাড়তে থাকে। এ সময় চাক্তাই খালের পূর্ব পাশের এলাকাগুলো পানিতে তলিয়ে যায়। অনেক বাসাবাড়িতেই এখন হাঁটু থেকে গলা পর্যন্ত পানি জমে গেছে।

মোহরা এলাকার বাসিন্দা ইকবাল হোসেন বলেন, ‘১৯৯১ সালের ভয়াবহ ঘুর্ণিঝড়ে আমাদের এলাকায় পানি উঠেনি। কিন্তু অবিরাম বর্ষণ ও প্রবল জোয়ারের মিতালিতে আজ বিকালে রাস্তা-ঘাট ছাড়িয়ে বাড়ি-ঘরে পর্যন্ত পানি উঠে গেছে। অনেকেই বিকেল থেকে এখনো পর্যন্ত রান্না করতে পারছেন না।’

খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ স¤পাদক ছগির আহমদ বলেন, আসাদগঞ্জ, চাক্তাই, খাতুনগঞ্জের অনেক গুদাম, আড়ত ও দোকানে পানি ঢুকে পণ্যসামগ্রী নষ্ট হয়েছে। প্রায় ছয় হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানিতে ডুবেছে। জনপ্রতিনিধিরা শুধু ভোটের সময় আসেন, আমাদের দুর্ভোগের সময় দেখতেও আসেন না।

অভিযোগ রয়েছে, নগরীর খাল নর্দমাগুলো প্রতিনিয়ত পরিষ্কার করা হয় না। লোক দেখানো পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কারণে জলাবদ্ধতা থেকে নগরবাসী মুক্তি পাচ্ছে না। নগরীর প্রায় খালগুলোতে আবর্জনা দিয়ে ভরাট হয়ে গেছে। এইসব খালগুলো ভালো করে খনন করার তেমন উদ্যোগ নেই। বরং কিছু কিছু খাল থেকে আবর্জনা তুলে খালের পাড়ে রাখা হয়। ফলে বৃষ্টি হলে সেই আবর্জনাগুলো ফের খালে গিয়ে পড়ছে।

এদিকে কালুরঘাট-আগ্রাবাদ সড়কে ফ্লাইওভারের কাজ চলায় এবং ওয়াসার মেরামত কাজের জন্য রাস্তা কাটা থাকায় আরাকান সড়কের বিভিন্ন স্থানেও পানি জমে গেছে। রাস্তায় যানজট ও জলজট থাকায় যানবাহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এদিকে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক জিল্লুর রহমান চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম জেলায় চলমান অতি বৃষ্টির কারণে পাহাড় ধসে ব্যাপক প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। সবাইকে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান হতে নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে আমরা কাজ করছি। এছাড়া অব্যাহত অতি বৃষ্টির ফলে পাহাড়ি ঢলে বন্যা ও নদী ভাঙনের আশঙ্কা রয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সবাইকে নিরাপদ আশ্রয় গ্রহণ করতে বলা হচ্ছে।