অবৈধ বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠাতে কঠোর হচ্ছে ভারত

ভারতে বসবাসরত অবৈধ বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠাতে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে দেশটির সরকার। সম্প্রতি দেশটিতে থাকা অবৈধ অভিবাসীরা বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িয়ে পড়ায় এ সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে নয়াদিল্লি। অবৈধদের শনাক্ত করে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে ইতোমধ্যে প্রত্যেক রাজ্য সরকারের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে কেন্দ্র।

দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই চিঠির বরাত দিয়ে রোববার ভারতের প্রভাবশালী দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

কেন্দ্রীয় সরকার চিঠিতে বলছে, ‘রোহিঙ্গাদের মতো অন্যান্য অবৈধ অভিবাসী শুধুমাত্র গুরুতর নিরাপত্তা উদ্বেগ তৈরি করছে না বরং ভারতীয় নাগরিকদের অধিকারও লঙ্ঘন করছে।’ অবৈধ সব অভিবাসীকে শনাক্ত ও তাদের ফেরত পাঠানোর কড়া নির্দেশ দেয়া হয়েছে চিঠিতে।

গত সপ্তাহে প্রত্যেক রাজ্য সরকারের কাছে পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়, জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোতে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিতে আছে অবৈধ অভিবাসীদের। দেশটির কর্মকর্তারা বলছেন, ‘এটি ভারতের জন্য সুখকর কিছু নয়, কারণ ইতোমধ্যে দুই কোটিরও বেশি অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী ভারতে বসবাস করছে।’

চিঠিতে বলা হয়, গত কয়েক দশকে সন্ত্রাসবাদের উত্থান দেশের অধিকাংশ মানুষের কাছে গুরুতর উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠেছে। অবৈধ অভিবাসীরা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোতে নিয়োগের ঝুঁকিতে থাকায় এ উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

৮ আগস্ট কেন্দ্রের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, ‘এই অবৈধ অভিবাসীরা শুধুমাত্র ভারতীয় নাগরিকদের অধিকারে আঘাত হানছে না বরং ভয়াবহ নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জও তৈরি করছে।’

ভারতের উত্তরপ্রদেশের মুজফফরনগর থেকে ‘আনসারুল্লা বাংলা টিম’র সদস্য সন্দেহে বাংলাদেশি এক ‘জঙ্গি’কে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার নাম আবদুল্লাহ।

এর আগে ৬ আগস্ট দেশটির উত্তরপ্রদেশ থেকে আল-কায়েদার আদর্শে অনুপ্রাণিত বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য আবদুল্লাহকে গ্রেফতার করে ভারতের জঙ্গি দমন ইউনিটের সদস্যরা। মুজাফ্ফরনগরের চারথাবাল এলাকার কুতেসারা থেকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

এসময় রাজ্যের জঙ্গি দমন শাখার আইজি অসীম অরুণ জানান, অনেক দিন ধরেই আবদুল্লার খোঁজ চালিয়েছেন তারা। আবদুল্লাহর বাড়ি থেকে একাধিক ভুয়া আধার কার্ড এবং ১৩টি ভুয়া পরিচয়পত্র উদ্ধার করা হয়।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে ভারতের ভূখণ্ডে রোহিঙ্গারা ঢুকে পড়ছে। অবৈধ অভিবাসীরা দেশের সীমিত সম্পদের ওপর চাপ ও নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করছে।

দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলাসহ বিভিন্ন কারণে প্রতিবেশি দেশগুলোর নাগরিকরা ভারতে প্রবেশ করছে। প্রতিবেশি দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের সাংস্কৃতিক ও জাতিগত মিল রয়েছে। অনেক সময় তারা দৃষ্টির আড়ালে থাকছে এবং ভারতীয় ভূখণ্ডে বসতি স্থাপন করছে।

মন্ত্রণালয় বলছে, ভারত একটি বৃহৎ দেশ। যার সঙ্গে অনেক দেশের সীমান্ত রয়েছে। উপ-মহাদেশের মানুষের একটি প্রচলিত ইতিহাস এবং শারীরিক মিল রয়েছে।

চিঠিতে প্রত্যেক রাজ্যের জেলায় জেলায় অবৈধ অভিবাসীদের সনাক্ত করতে একটি টাস্ক ফোর্স গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এই টাস্ক ফোর্স অভিবাসীদের সনাক্তের পর নিজ দেশে ফেরত পাঠাবে।

ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য বলছে, মিয়ানমারের অনেক রোহিঙ্গা ভারতে অনুপ্রবেশের পর জম্মু-কাশ্মিরের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। কাশ্মির ও ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো এই রোহিঙ্গাদেরকে ভারতবিরোধী কাজে লাগাতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন গোয়েন্দারা।

অতীতে রাখাইনে সহিংসতার ঘটনায় রোহিঙ্গাদের প্রতি সহমর্মিতা ও একাত্মতা প্রকাশ করতে দেখা গেছে কাশ্মিরের ইন্ডিয়ান মুজাহিদীন ও লস্কর-ই-তাইয়েবা গোষ্ঠীকে। মিয়ানমারে রোহিঙ্গা হত্যার প্রতিশোধ নিতে ২০১৩ সালের ৭ জুলাই ভারতের বোধ গয়ার মহাবোধি মন্দিরে হামলা চালায় ইন্ডিয়ান মুজাহিদীন।

এছাড়া লস্কর-ই-তাইয়েবোর বোমা প্রস্তুতকারী জঙ্গি আব্দুল করিম টুন্ডা একই বছরে গ্রেফতার হওয়ার পর জানান তিনি রোহিঙ্গাদের দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করছেন। লস্কর-ই তাইয়েবার পাকিস্তান প্রধান হাফিজ সাইদ বিভিন্ন সময়ে রোহিঙ্গাদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে আসছেন।

গত বছর অবৈধ বাংলাদেশিদের ব্যাপারে ভারত সরকার জানায়, দেশটিতে দুই কোটিরও বেশি অবৈধ বাংলাদেশি রয়েছেন।