অমিতাভ ছাড়াও রেখার জীবনে কে কে ছিলেন?

বলিউডের পুরুষশাসিত মনোভাবের শিকার হলেন রেখা। তার ব্যক্তিগত জীবন ও পুরুষসঙ্গই সব সময়ই ছিল আছে থাকবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। ৬৩তে পা দিয়েছেন রেখা। ১৯৫৪ সালের ১০ অক্টোবর তার জন্ম।

এখনও তার নাম শুনলে অনেক পুরুষেরই বুকের বাঁ দিকটা চিন চিন করে ওঠে। অমিতাভের সঙ্গে তার প্রেমের কথা তো বহুল প্রচলিত। কিন্তু তার বাইরেও অনেকের সঙ্গে নাম জড়িয়ে গসিপ রয়েছে। এক সময় রেখার বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন খোদ নার্গিস দত্ত। শোনা যায়, ডিম্পল কাপাডিয়া রেখাকে রাজেশ খান্নার কাছে ঘেঁষতে নিষেধ করেছিলেন।
বিনোদ মেহেরা-সঞ্জয় দত্ত-শেখর সুমন-জিতেন্দ্র-ধর্মেন্দ্র-সুনীল দত্ত—কে নেই গসিপের সেই তালিকায়! বিবাহিত পুরুষদের সবচেয়ে বড় ‘থ্রেট’‌য়ের নাম রেখা। ম্যান-ইটার’, ‘নিম্ফোম্যানিয়াক’, ‘সেক্স কিটেন’… রেখার তখন কত নাম ইন্ডাস্ট্রিতে। সাফল্যের মধ্যগগনে থেকেও ব্যক্তিগত জীবনে বারবার রক্তাক্ত হতে হয়েছে রেখাকে। তার ‘ম্যান-ইটিং’ নিয়ে যখন জোর গসিপ বলিউডে।
সত্তরের দশকের প্রথমদিকে রেখার সঙ্গে অভিনেতা বিনোদ মেহেরার সম্পর্ক নিয়ে এতটাই গুঞ্জন ছড়িয়েছিল যে তাদের মধ্যে বিয়ে হবার খবরও ছিল মুখে মুখে। যদিও ২০০৪ সালে সিমি গারেওয়ালের সঙ্গে এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে রেখা ওই বিয়ের কথা উড়িয়ে দেন। শুধু জানিয়েছিলেন বিনোদ মেহেরা তার একজন শুভাকাঙ্খী।
আবার আশি সালে ঋষি কাপুর আর নীতু সিংয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান সাদা শাড়ি ও লাল টিপ পরে হাজির হয়ে বিতর্ক ছড়িয়েছিলেন রেখা। মুহূর্তের মধ্যে সবার চোখ তখন সরে গিয়েছিল রেখার দিকে। হবে না-ই বা কেন! তার মাথায় যে এক চিলতে সিঁদুর।
সেখানে তখন স্ত্রী জয়া ও বাবা-মাকে সঙ্গে নিয়ে উপস্থিত অমিতাভ বচ্চন। নীতুর ঘনিষ্ঠ বন্ধু হওয়ার সুবাদে রেখাও আমন্ত্রিত। এমনই পরিস্থিতি ক্যামেরার ফোকাস সদ্যবিবাহিত ঋষি-নীতু থেকে সরে গিয়েছিল শুধুই রেখার দিকে। বিয়ের পার্টিতে তখন জোর ফিসফাস চলতে থাকে- তবে কি রেখা বিয়ে করলেন?

রেখা পার্টি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরও সেখানে থেকে যায় অনেক অনুচ্চারিত প্রশ্ন। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছিল- ওইদিন মাথায় সিঁদুর লাগিয়ে কী প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন রেখা? তিনি বিবাহিত এই বার্তাই তিনি কী সকলকে দিতে চেয়েছিলেন? অনেক পরে রেখা বিতর্কে পানি ঢালতে জানিয়েছিলেন, শুটিং সেরে সরাসরি চলে যান ওই পার্টিতে আর তাড়াহুড়োতে ভুলে গিয়েছিলেন মেক আপ তুলতে। ফলে মাথার সিঁদুরটাও তখন না তোলায় তা রয়ে গিয়েছিল সিঁথিতে।
তবে তখন অমিতাভের সঙ্গে রেখার প্রেম ঘিরে কম পানি ঘোলা হয়নি। রেখাকে ঘিরে বচ্চনবাড়িতে সেই সময় অশান্তির গ্রাস করেছিল। এমনকী রটে ছিল অমিতাভ সঙ্গে তার স্ত্রী জয়া ভাদুড়ীর বিয়ে ভাঙার খবরও।
তবে অনেকের সঙ্গে অনেক প্রেমের কথা শোনা গেলেও অবশেষে ১৯৯০ সালে দিল্লীর শিল্পপতি মুকেশ আগারওয়ালকে বিয়ে করেছিলেন রেখা। কিন্তু সে বিয়ে টেকেনি। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই বৈধব্য বরণ করেন এই অভিনেত্রী। রেখা লন্ডনে থাকাকালীন আত্মহত্যা করেন মুকেশ।
এরপরেও বিশেষ করে তার কপালের সিঁদুর নিয়ে প্রতিনিয়তই একটা প্রশ্ন সকলের মনে ঘুরপাক খায়। যার কোনও সদুত্তর কেউ পায়নি। বিধবা হওয়ার পর তিনি নতুন করে বিয়ে করেছেন, এমন ঘটনাও জানা যায়নি। ফলে তার সিঁথিতে সিঁদুর ঘিরে রহস্য দানা বাঁধে।
এই বিতর্কের আগুন উস্কে দিয়েছিলেন এক সময় অভিনেতা পুনীত ইসারের স্ত্রী দীপালীর মন্তব্য। তিনি জোর গলায় বলছিলেন, ‘অমিতাভের জন্যই সিঁদুর পরেন রেখা।’ শুধু তাই নয় ম্যাগাজিনের সাক্ষাৎকারে তিনি দাবি করেন, ‘আমার স্বামী পুনীত অমিতাভ-রেখার বিয়ে নিয়ে অনেক কিছুই জানেন।’
ভারতের কলকাতা২৪ পত্রিকার খবরে বলা হয়, রেখার পুরোনো বান্ধবী দীপালির বক্তব্য ধরেই অনেকের ধারণা হয়, ‘রেখা আজও অমিতাভের জন্যই সিঁদুর পরেন?’ কারণ দীপালির ওই বক্তব্যে তখন প্রতিবাদ করেননি রেখা।
হিন্দু শাস্ত্রমতে, নারীদের কপালে সিঁদুর দেয়া মানেই স্বামী বেঁচে আছেন। ফলে রেখার ভক্তরা অনেকেই ধরে নিয়েছেন, অমিতাভের নামেই আজো সিঁথিতে সিঁদুর পরেন রেখা। তবে সম্প্রতি প্রকাশিত ইয়াসের উসমানের বই ‘রেখা দ্য আনটোল্ড স্টোরি’ অন্যরকম ইঙ্গিত দিয়েছে।
যেখানে মনে করা হচ্ছে, গোপনে সঞ্জয় দত্তকেই বিয়ে করেছিলেন এই বলিউড অভিনেত্রী। জানা যায়, ১৯৮৪ সালে জমিন আসমান ছবির শুটিংয়ের সময় রেখা এবং সঞ্জয় দত্ত একে অপরের খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন। এতটাই গভীর এবং গোপন ছিল সে সম্পর্ক যে তারা বিয়েও করেছিলেন গোপনে। যা আজ অবধি কেউ জানে না।

তবে এই তথ্য কতটা সত্য সে বিষয়ে কেউই নিশ্চিত করে কিছু বলেনি এখনও পর্যন্ত। তাই বলিউড গুঞ্জনেই আপাতত ঘুরপাক খাচ্ছে রেখা-সঞ্জয়ের সম্পর্ক।