অশান্ত দার্জিলিং, হোস্টেল ছেড়েছে বিদেশি শিক্ষার্থীরা

পৃথক রাজ্য ‘গোর্খাল্যান্ড’ ঘোষণার দাবিতে পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিংয়ে বনধের জের ধরে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে সেখানকার বোর্ডিং স্কুলগুলো। এরই মধ্যে পাহাড় ছেড়ে গেছে এসব বোর্ডিং স্কুলের দেশি-বিদেশি শিক্ষার্থীরা।

সম্প্রতি দার্জিলিংয়ের স্কুলে বাংলা ভাষা বাধ্যতামূলক করায় এর প্রতিবাদে আন্দোলন শুরু করে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা (জিজেএম)। গত বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীদের শুক্রবার সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে হোস্টেল ছাড়ার নির্দেশ দেয় আন্দোলনরত সংগঠনটি।

প্রথমে বাংলা ভাষা নিয়ে প্রতিবাদ শুরু হলেও এখন পৃথক রাজ্য ‘গোর্খাল্যান্ডে’র দাবিতে বেশ ক’দিন করে টানা বনধ ডেকেছে জিজেএম। তাদের জ্বালাও-পোড়াওয়ে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গের পাহাড়ি জেলা দার্জিলিং। ভাটা পড়েছে পর্যটনেও।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, শুক্রবার ভোর ৫টা থেকেই নিজস্ব বাসে করে স্কুল কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের সমতলের শহর শিলিগুড়ি পৌঁছে দেয়। সেখান থেকে তাদের অভিভাবকরা নিয়ে যান শিক্ষার্থীদের।

বোর্ডিং স্কুলের জন্যে ভারতের দার্জিলিং বিখ্যাত। সেখানে কমপক্ষে ৫০টিরও বেশি বোর্ডিং স্কুল আছে। এসব স্কুলে শুধু ভারতীয়-ই নয়, নেপাল, ভুটান, হংকং, থাইল্যান্ডের শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। রয়েছে প্রচুর সংখ্যক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী।

শুক্রবার সকালে জিজেএম এর স্টুডেন্ট উইং গোর্খা জনমুক্তি বিদ্যার্থী মোর্চা দার্জিলিংয়ের চকবাজারে ডেস্ক বসায়। সেখানে তাদের রেজিস্ট্রার খাতায় স্কুলবাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পরিচয়পত্র দেখে তাদের নাম লিপিবদ্ধ করে। এরপরই শিলিগুড়ির উদ্দেশে দার্জিলিং ছেড়ে যায় এসব বাস।

এদিকে শুক্রবার সকাল থেকেই দার্জিলিংয়ের বিখ্যাত সেন্ট পলস, সেন্ট জোসেফস, মার্টিন হারমনসহ বিভিন্ন বোর্ডিং স্কুল পাহাড় ত্যাগের জন্যে প্রস্তুত ছিল। বাসে ওঠার আগে স্কুল শিক্ষার্থীদের একে অপরের কাছ থেকে বিদায় নিতে দেখা গেছে। এ সময় উচ্ছ্বসিত এসব শিক্ষার্থী একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে বিদায় নেয়।

একটি বোর্ডিং স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ও গৌহাটির বাসিন্দা দয়ামন্তি দেবী বলে, `আমরা খুব আনন্দিত…। সাধারণত স্কুলে মা-বাবা এসে আমাদের বাড়ি নিয়ে যান। কিন্তু এখন আমরা সহপাঠীদের সবাই একই বাসে চড়ে স্কুল ছাড়ছি।

শিলিগুড়িতে দুই ছেলের জন্যে অপেক্ষারত নেপালের বাসিন্দা অঞ্জয় শাহ বলেন, `দার্জিলিংয়ের নর্থ পয়েন্টে আমার দুই ছেলে পড়ে। সৃষ্টিকর্তার কৃপায় নিরাপদে ওরা শিলিগুড়ি পৌঁছেছে। এখন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওদের নিয়ে বাড়ি যাবো।‘

আন্দোলনরত জনমুক্তি মোর্চার পক্ষ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়েছিল, শুক্রবারের মধ্যে গোর্খা টেরিটরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে (জিটিএ) থাকা মোর্চার ৪৩ সদস্যকে পদত্যাগ করতে হবে। তাদের জিটিএর সদর দফতরে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিতে বলা হয়।

এরই মধ্যে ৪৩ জন সদস্যই পদত্যাগ করেছেন। কেবল জনমুক্তি মোর্চার প্রধান বিমল গুরুং রোববার পদত্যাগ করবেন বলে জানা গেছে।

২০১১ সালে প্রথমবারের মতো ক্ষমতায় এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাহাড়ের সমস্যা সমাধানে একটি চুক্তি করেন। সেই চুক্তির বলে পাহাড়ি এ অঞ্চলের স্বায়ত্তশাসনের জন্য গঠিত হয়েছিল জিটিএ। পরে জিটিএর নির্বাচনে জয়ী হয়ে এর চেয়ারম্যান হন জিজেএম নেতা বিমল গুরুং।

সম্প্রতি জিজেএম ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে দার্জিলিংয়ে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় কমপক্ষে চারজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় মামলার প্রধান আসামি বিমল গুরং। তাকে খুঁজছে পুলিশ। বর্তমানে আত্মগোপনে থেকে বার্তা পাঠিয়ে নানা হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন তিনি। সম্প্রতি পাহাড়ে সমস্যা নিয়ে ডাকা বৈঠকেও উপস্থিত হননি বিমল গুরং।

গোপন অবস্থান থেকে এক বার্তায় বিমল গুরুং জানান, পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্যের দাবিতে তাদের আন্দোলন চলবে। আমাদের একটাই দাবি, গোর্খাল্যান্ড। আমাদের আন্দোলন চলবে। পারলে আমাকে ধরুন।