অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশ সিরিজে আলোচনায় ‘ছয় ফ্যাক্টর’

বাংলাদেশ আর অস্ট্রেলিয়ার বর্তমান দলের কারোরই একে অন্যের বিপক্ষে টেস্ট খেলা হয়নি। সাদা পোশাকে দুদলের শেষ দেখায় যারা মাঠে ছিলেন তাদের মধ্যে মাশরাফি এখনো খেলে যাচ্ছেন। তবে সেটা কেবল রঙিন পোশাকে। প্রায় এক যুগ পর দুদল একে অন্যের বিপক্ষে টেস্ট খেলতে নামবে তাই নতুন মেজাজে। সেই নামাটাও বড্ড কাঠখড় পুড়িয়ে। ২০১৫ সালেই বাংলাদেশে আসার কথা ছিলো অস্ট্রেলিয়ার। নিরাপত্তার কথা বলে শেষ মুহূর্তে সিরিজ স্থগিত করে তারা। এবার যখন নিরাপত্তার সমস্যা নেই, হাজির হলো আরেক সমস্যা। বেতন-ভাতা নিয়ে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটাররা আন্দোলনে গেলে শঙ্কায় পড়েছিল এই সিরিজ। অবশেষে সব মিটমাট হয়ে বাংলাদেশে আসছে ব্যাগি গ্রিন ক্যাপধারীরা। আলোচিত এই সিরিজের ছয়টি বিষয় রোমাঞ্চকর হতে পারে বলে প্রতিবেদন করেছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার ওয়েবসাইট।

১১ বছর আগের সেই সিরিজ
টেস্ট খেলতে অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশ শেষবার এসেছিল সেই ২০০৬ সালে। রিকি পন্টিংয়ের দল সেবার ২-০ তে সিরিজ জিতলেও তখনকার বাংলাদেশও দেখিয়েছিল চমক। ওয়ার্ন, ম্যাগগিল, লি, গিলেস্পি, অস্ট্রেলিয়ার সেই সময়কার বোলিং অ্যাটাকের বিপক্ষে বাংলাদেশের ওই দলের চারশর বেশি রান করা চট্টিখানি কথা নয়। ফতুল্লায় শাহরিয়ার নাফীসের সেঞ্চুরি আর বল হাতে মোহাম্মদ রফিকের পাঁচ উইকেটে লিডও পেয়েছিল বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিং ব্যর্থতার পরও পন্টিংদের ছুঁড়ে দিতে পেরেছিলো ৩০৭ রানের টার্গেট। কিন্তু জয়ের খুব কাছে গিয়ে ৩ উইকেটে হারতে হয় বাংলাদেশকে। অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়কই ১৪৪ রানের ইনিংস খেলে বাংলাদেশের স্বপ্ন মাটিচাপা দেন। সেবার পরের টেস্টও চোখ কপালে তোলার মতো ঘটনা ঘটেছিল আরেকটি। নাইটওয়াচম্যান হিসেবে নেমে ডাবল সেঞ্চুরি করে ফেলেছিলেন জ্যাসন গিলেস্পি। কি কপাল! এরপর আর কোনো টেস্টই খেলা হয়নি তার।

সামনে অ্যাশেজ, অস্ট্রেলিয়ানদের পরখ করার মিশন
মর্যাদার অ্যাশেজ সিরিজের আর মাস তিনেক বাকি। বাংলাদেশ সিরিজের পর অস্ট্রেলিয়া যাবে ভারতে, তবে সেখানে খেলবে কেবলই ওয়ানডে আর টি-টুয়েন্টি। তাই এই সিরিজকেই তরুণ ক্রিকেটারদের টেস্টে পরখ করার মিশন হিসেবে দেখছে তারা। চোটে পড়ে দলের বাইরে আছেন মিচেল স্টার্ক আর জেমস প্যাটিনসন। প্যাট কামিন্স ও জ্যাকসন বার্ডের দিকে থাকবে নির্বাচকদের নজর। অ্যাশেজের দল কেমন হবে জানা যাবে এই সিরিজের পারফরম্যান্স থেকেই।

টেস্টেও সেয়ান হচ্ছে বাংলাদেশ
ওয়ানডেতে বেশ কয়েকদিন থেকেই বাংলাদেশ বাঘা দলদের কাতারেই, টেক্কা দিচ্ছে সমানে সমান। তবে বছরখানেক ধরে সাদা পোশাকেও মুশফিকদের উন্নতি দৃশ্যমান, খেলছে মাথা খাটিয়ে। বিশেষ করে ঘরের মাঠে বাংলাদেশকে বেশ শক্তিশালী মনে করা হচ্ছে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ ড্র করার পর শ্রীলঙ্কাতেও এক টেস্ট জিতে এসেছে বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়াকে দুটি টেস্টেই হারানো সম্ভব বলে জানিয়েছেন কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ লড়াই জমিয়ে তুলতে পারে ধারণা অস্ট্রেলিয়ান গণমাধ্যমেরও।

সিরিজে পা হড়কালেই অস্ট্রেলিয়ার র‍্যাংকিংয়ে ধপাস
আইসিসি টেস্ট র‍্যাংকিংয়ে অস্ট্রেলিয়া আছে তিন নম্বরে। নয়ে থাকা বাংলাদেশের কাছে ২-০ তে সিরিজ হেরে গেলে ব্যাপক ধস নামবে তাদের র‍্যাংকিংয়ে। তিন থেকে একেবারে সাতে নেমে যেতে হবে স্মিথদের। আর যদি সিরিজ ড্র করতে পারে বাংলাদেশ তাতেও দুই ধাপ নামতে হবে প্রতাপশালী দলটির। অস্ট্রেলিয়া ২-০ তে জিতলে আপাতত তিন নম্বর জায়গাটা ধরে রাখতে পারবে তারা। কিন্তু ওদিকে প্রায় একই সময়ে চলা সিরিজে ইংল্যান্ড ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করলে অস্ট্রেলিয়াকে নেমে যেতে হবে চার নম্বরে।

উপমহাদেশের কন্ডিশন ইস্যু
উপমহাদেশে শেষ চারটি টেস্ট সিরিজই হেরেছে অস্ট্রেলিয়া। ১৩ টেস্টের মধ্যে হার ১১টিতে। তবে গেল ফেব্রুয়ারি-মার্চে ভারতের বিপক্ষে ২-১ এ সিরিজ হারলেও ভাঙ্গাগড়ার মধ্যে থাকা স্টিভেন স্মিথরা মাঠের খেলায় প্রশংসাই কুড়িয়েছিলো। শেষবার উপমহাদেশে টেস্ট সিরিজ জয় সেই ২০১১ সালে। মাইকেল ক্লার্কের অধিনায়কত্বে প্রথম সিরিজ ছিলো সেটি। স্পিন বান্ধব বাংলাদেশের পিচেও এবার ভুগতে হতে পারে ক্যাঙ্গারুদের। আর তাই কেমন করে অস্ট্রেলিয়া তীক্ষ্ম দৃষ্টি সবার।

মুখোমুখি দুই সতীর্থ

বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া সিরিজে দুই টিমমেট একে অন্যের মুখোমুখি হচ্ছেন। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) এর দল হায়দ্রাবাদ সানরাইজার্সের কাপ্তান ডেভিড ওয়ার্নার আর কাটার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমানের লড়াই থাকবে সবার কৌতুহলের কেন্দ্রে। এর মধ্যেই দুজনের মধ্যে টুইট বিনিময় হয়েছে। মোস্তাফিজকে শুভকামনা জানিয়েছেন ওয়ার্নার। কাটার মাস্টার বাংলাদেশে স্বাগত জানিয়ে রেখেছেন তার সানরাইজার্স অধিনায়ককে।