আওয়ামী লীগের কাছে মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ নেই

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, আওয়ামী লীগের কাছে মুক্তিযুদ্ধের কোনো মূল্যবোধ নেই। আমার তো মাঝে মাঝে মনে হয়, তাদের মূল্যবোধই নেই।

শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে আয়োজিত ‘দেশে অব্যাহত গুম-খুন-অপহরণ : শংকিত নাগরিক সমাজ’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি একথা বলেন।

‘আদর্শ নাগরিক আন্দোলন’ এর ঈদ পুনর্মিলনী উপলক্ষে এ গোলটেবিলের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ।

মান্না বলেন, আজ দেশের নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় কারা? যারা লুট, মিথ্যা, চোখে চোখে প্রতারণা করতে পারে, মানুষের সমস্ত কল্যাণ সুখ শান্তি ছিনিয়ে নিতে পারে, তারা আজ ক্ষমতায়।

৫ জানুয়ারির একটা নির্বাচন, এটা কোনো নির্বাচন? রাজনীতি ও নির্বাচনের নামে ফোর-টুয়েন্টিগিরি আর কি হতে পারে। সেটাই দিব্যি করে চলছেন।

কে কিভাবে জিতেছেন আমরা জানি। এতো বড় দুর্নীতিবাজ তারা। দুর্নীতি চাপিয়ে দিয়ে তারা ক্ষমতায়। আজ অপহৃত সুমনের মায়ের কান্নার ভিডিও প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো উচিত। দেখানো উচিত গোটা দেশের মানুষকে। এর বিচার কে করবে? আজ গুম-খুনের কি বিচার হচ্ছে? এখন যারা ক্ষমতায় আছেন, তারা কি বিচার করেন? গুম-খুন হলে থানায় জিডি নেয় না।

এই সরকার নিজের পতনের ঘণ্টা শুনে ফেলেছেন উল্লেখ করে মান্না বলেন, ওবায়দুল কাদের শুনেছেন পতনের ঘণ্টা। তাই বলছেন, সব হাইব্রিড, যদি চলে যান তবে খুব সাবধান কোনো মালপত্র নিতে পারবেন না। প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন, নিজের চেষ্টায় নির্বাচনে জিততে হবে, আমি কিছু করতে পারবো না। সত্যি কি হবে জানি না। আওয়ামী লীগের ক্ষমতা ছাড়া সম্ভব না। বিএনপি’র ক্ষমতায় না গেলেও চলবে না।

রবের বাসায় আমরা ক’জ নিরীহ লোক গেলাম চা খেতে। পুলিশ হাজির। না খেয়ে কি আসা যায়। রব ভাই তো রাগ করে বললেন, যে সারা রাত থাকবো। প্রয়োজনে সেহরি খাবো। যারা মুক্তি চাই তাদের রাস্তায় নামতে হবে। কথা বলতে হবে। প্রতিবাদ করতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত একটা জবাবদিহিহীন ও অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো সুরাহা হবে না। এজন্য গণতান্ত্রিক সরকার লাগবে বলে জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, সংবিধান পরিবর্তন করা না গেলে ষোড়শ সংশোধনী কি করে হলো। পরিবর্তন করেন। আম চুরি করতে গাছে উঠেছেন আপনারা। নিজ দায়িত্বেই আপনাদের নামতে হবে। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেয়ার দায়িত্ব সরকারেরই। আপাতত সমাধান ও আমাদের দাবিও একটিই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দিতে হবে।

আজ ইলিয়াস আলীর জন্য তার স্ত্রী-সন্তান কি আজ মিলাদ করতে পারবে? পারব না। ধর্মে নাই? কারণ ইলিয়াস আলী জীবিত না মৃত আমরা জানি না। এর চেয়ে আর দুঃখজনক আর কি হতে পারে। গত ৫ বছরে কতজন গুম খুন হয়েছেন। অধিকার, আইন সালিশ কেন্দ্র, পুলিশের গুম খুনের ফিগারে অনেক পার্থক্য। পুলিশ সদর যা দেয় তা ওয়ান-টু-ওয়ান। আজ সবাই ঐক্যবদ্ধ হলে মানবতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলে উল্লেখ করেন তিনি।

যারাই গুম ও অপহরণের শিকার হচ্ছেন তারা ফিরে এসেও কথা বলছেন না উল্লেখ করে মান্না বলেন, ফরহাদ মজহারের মত সাহসী লেখক ফিরে এসেও কথা বলছেন না। আলোতে থেকেও তারা আজ অন্ধকারে। পুরো বাংলাদেশ আজ নৈরাজ্যে পরিণত হয়েছে। এই নৈরাজ্যকর অবস্থা চাই না। এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ নয়। এ অবস্থা বদলাতে হবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা না করা পর্যন্ত এ অবস্থার বদল আসবে না।

আদর্শ নাগরিক আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণফোরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, স্বাধীনতা ফোরামের চেয়ারম্যান আবু নাসের মুহাম্মদ রহমতুল্লাহ, নাগরিক ফোরামের চেয়ারম্যান আবদুল্লাহিল মাসুদ।