আজহার ও কায়সারের আপিল শুনানি ১০ অক্টোবর

একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম ও জাতীয় পার্টির (জাপা) নেতা সাবেক প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের আপিল শুনানির জন্য ১০ অক্টোবর দিন নির্ধারণ করেছে আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে ২৪ আগস্টের মধ্যে এ দুই মামলার সারসংক্ষেপ জমা দেয়ারও নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বে তিন সদস্যের আপিল বেঞ্চ রবিবার এ দিন নির্ধারণ করেন। বেঞ্চের অপর দুই সদস্যরা হলেন, বিচারপতি মো. সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।

আসামিপক্ষে শুনানি করেন এসএম শাহজাহান এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

আপিল বিভাগে এই মামলা দুটি সুপ্রিমকোর্টের ওয়েবসাইটে রবিবারের কার্যতালিকায় ক্রম ২ ও ৩ নম্বরে ছিল। ১৬ মাস আগে আপিল বিভাগে সর্বশেষ মীর কাসেম আলীর আপিলের রায় ঘোষণা করা হয়েছিল। এরপর এ দুটি আপিল একই সঙ্গে তালিকায় আসে।

এটিএম আজহারুল ইসলাম: ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করে রায় দিয়েছিল ট্রাইব্যুনাল। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল এ রায় দেয়। আজহারের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগসহ ছয়টি অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন। ট্রাইব্যুনালের দেয়া রায়ে পাঁচটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়। ২, ৩ ও ৪ নম্বর অভিযোগে মৃদ্যুদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। ৫ নম্বর অভিযোগে ২৫ বছর জেল ও ৬ নম্বর অভিযোগে পাঁচ বছরের জেল দেয়া হয় তাকে। তার ১ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি বলে রায়ে বলা হয়।

এ রায়ের বিরুদ্ধে আজহারুল ইসলাম খালাস চেয়ে আপিল করেন। আপিলে তার খালাসের পক্ষে যুক্তি ১১৩টি যুক্তি উপস্থাপন করা হয়। ২০১৫ সালের ২৯ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড জয়নুল আবেদীন তুহিন এই আপিল দায়ের করেন। তার মূল আপিল আবেদনে ৯০ পৃষ্ঠার সঙ্গে ১১৩ টি গ্রাউন্ডসহ মোট দুই হাজার ৩৪০ পৃষ্ঠার আবেদন জমা দেয়া হয়।

সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার: জাতীয় পার্টির (জাপা) নেতা সাবেক কৃষি প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারকে ২০১৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আদালত তাকে এ দণ্ড প্রদান করে রায় ঘোষণা করেন।

গণহত্যার একটি, হত্যা, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠনের ১৩টি ও ধর্ষণের দুটিসহ মোট ১৬টি অভিযোগ তার বিরুদ্ধে আনা হয়। এর মধ্যে ১৪টি ট্রাইব্যুনালের রায়ে প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে ৩, ৫, ৬, ৮, ১০, ১২ ও ১৬ নম্বর অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।

এছাড়া ১, ৯, ১৩ ও ১৪ নম্বর অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড ও ২ নম্বর অভিযোগে ১০ বছর, ৭ নম্বরে সাত বছর ও ১১ নম্বরে পাঁচ বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়। ৪ ও ১৫ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় এ অভিযোগগুলোতে কোনো সাজা দেয়া হয়নি তাকে।

এ রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে ট্রাইব্যুনালের আপিল করেন কায়সার। আপিলে ট্রাইব্যুনালের রায় বাতিলের পাশাপাশি তাকে বেকসুর খালাস দেয়ার আবেদন জানানো হয়।

২০১৫ সালের ১৯ জানিুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই আপিল করা হয়। সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের পক্ষে অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড জয়নুল আবেদীন তুহিন এই আপিল করেছেন। এ মামলার শুনানি করবেন অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন।

আপিলে খালাসের আরজিতে ৫৬টি যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে। ৫০ পৃষ্ঠার মূল আপিলের সঙ্গে প্রয়োজনীয় নথি সংযুক্ত রয়েছে।

আপিলে সাত মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি: মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় এখন পর্যন্ত সাতটি আপিলের রায় ঘোষণার পর রিভিউ আবেদনেরও নিষ্পত্তি হয়েছে আপিল বিভাগে। প্রথমে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার রিভিউ-সংক্রান্ত আবেদনের নিষ্পত্তি হয়। এরপর একে একে মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও মীর কাসেম আলীর পর চলতি বছরের ১৫ মার্চ দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রিভিউ আবেদনেরও নিষ্পত্তি হলো আদালত।