আদালতে চত্বরেই শিশুসহ তরুণীকে মারধর!

ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ নম্বর আদালতে ধর্ষণের মামলা করতে এসেছিলেন প্রতারণার শিকার এক তরুণী। কোলে ছিল ধর্ষণের ফলে জন্ম নেওয়া দুই মাসের শিশু। তবে মামলা করতে আসায় আদালত চত্বরেই তাঁকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

মঙ্গলবার ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ২ নম্বর আদালতের বাইরে এই ঘটনা ঘটে।

এনটিভি অনলাইনকে ওই তরুণী বলেন, সজল নামের এক ব্যক্তি তাঁর সঙ্গে প্রেমের অভিনয় করে ধর্ষণ করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি গর্ভবতী হলে সজল বিয়ে করার প্রতিশ্রতি দেন। কিন্তু সে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরও বিয়ে করতে নানা টালবাহানা শুরু করেন। একপর্যায়ে সন্তানও জন্ম দেন তিনি। কিন্তু এর পরও বিয়ে না করায় বাধ্য হয়ে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ২-এ ধর্ষণের মামলা করেন ওই তরুণী। এই খবর সজল জানার পর আদালত থেকে আপসের কথা বলে জামিন নেন তিনি। কিন্তু এরপরে ওই তরুণীকে আর বিয়ে করবেন না বলে হুমকি দেন এবং মামলা তুলে না নিলে এসিডে মুখ পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন সজল।

ওই তরুণী জানান, আজ আদালতে হাজিরা দিতে এসে আসামি সজল, তার বাবা পিন্টুসহ আরো দুজন ব্যক্তি দুই মাসের শিশু ও তাঁকে মারধর করে। পরে আসামিরা আদালত চত্বর থেকে মোটরবাইকে চড়ে পালিয়ে যায়।

এ বিষয়ে সরকারি কৌঁসুলি আলী আকবর জানান, আদালতের বাইরে ঘটনাটি তিনি দেখেছেন। ওই তরুণীর শরীরে আঘাতের চিহ্নও রয়েছে। মামলার পরবর্তী তারিখে ওই তরুণী আদালতকে বিষয়টি জানাবেন। তিনি জানান, মামলাটি ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ২-এর বিচারক শফিউল আজমের আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

মারধরের বিষয়টি ওই সময় আদালতে উপস্থিত সব কর্মচারী ও বিচারপ্রার্থীরা দেখেছেন বলে জানান আদালতের সহকারী আব্দুল বাতেন।

প্রত্যক্ষদর্শী নায়না জানান, একই আদালতে যৌতুক আইনের মামলায় আজ তাঁর হাজিরার দিন ধার্য ছিল। সকালে হাজিরা দেওয়ার জন্য আদালতে আসলে দেখতে পান ওই তরুণী ও তাঁর দুই মাসের শিশুটিকে এক ব্যক্তি জুতা দিয়ে মারছেন। পরে জানতে পেরেছেন ওই ব্যক্তিই আসামি সজল।

আরেক প্রত্যক্ষদর্শী আসমা আক্তার জানান, পাশের নারী নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ৩-এ তাঁর হাজিরা ছিল। সকালে আদালতের বাইরে হঠাৎ চিৎকার শুনতে পেয়ে সেখানে গিয়ে দেখতে পান সজল ও তাঁর বাবা শিশুসহ ওই তরুণীকে মারছেন।

অভিযুক্ত সজল এনটিভি অনলাইনকে জানান, মারধরের অভিযোগ সত্য নয়। ওই তরুণী তাঁর বাবাকে ধাক্কা দেওয়ায় তিনি রাগে সামান্য ধাক্কা-ধাক্কি করেছেন।

মামলার বাদী ওই তরুণী তাঁর স্ত্রী দাবি করে সজল বলেন, ধর্ষণের ঘটনা সত্য নয়। তাঁরা বিবাহিত। তবে রেজিস্ট্রি হয়নি। তিনি সন্তানকে দেখতে চাইলেও ওই তরুণী দেখতে দেন না অভিযোগ করে সজল বলেন, মিথ্যা মামলা করে তাঁকে হয়রানি করা হচ্ছে।

মামলার নথি থেকে জানা যায়, মোবাইলে রিচার্জের একটি দোকান থেকে মোবাইলে রিচার্জ করার সময় সজল সুকৌশলে ওই তরুণীর ফোন নম্বর নেন। পরে আসামি বাদীকে বিভিন্ন ভাবে প্রেমের প্রস্তাব দেন। বাদীনিকে আসামি অনবরত বিরক্ত করার কারণে বাদীনি আসামির প্রতি কিছুটা আসক্ত হয়ে পড়েন। পরে আসামি ২০১৫ সালের ২৪ আগস্ট বাদীনির সঙ্গে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে যাত্রাবাড়ী থানাধীন কাজিরগাঁও এলাকায় জোর করে অপহরণ করে নিয়ে ধর্ষণ করেন এবং তরুণীর বিভিন্ন ছবি তুলে নেন। এ ছবি দেখিয়ে আসামি তাকে বিভিন্ন সময়ে ব্ল্যাকমেইল করে। অতঃপর তরুণী কান্নাকাটি করলে একই বছরের ২৫ আগস্ট আসামি ভুয়া কাজীর মাধ্যমে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেন। এরপর আসামি তরুণী বলেন, ‘তোমার সঙ্গে আমার কনট্রাক্ট ম্যারিজ হয়ে গেছে, এখন একসঙ্গে থাকলে সমস্যা নেই।’ এরপর তরুণীকে বিভিন্ন সময় তরুণীকে ধর্ষণ করেন সজল।