‘আব্বুর দেহদানের সিদ্ধান্তে আমি অবাক হইনি’

বাংলাদেশে মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে নতুন একটি আইনের খসরায় অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রীসভা। নতুন আইন কার্যকর হলে, প্রয়োজনে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দিতে পারবে এমন নিকট আত্মিয়ের পরিধি বৃদ্ধি পাবে।

কিন্তু শুধু প্রতিস্থাপনের জন্য ছাড়াও গবেষণার জন্যও অনেকে মৃত্যুর আগে তার অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বা পুরো দেহ দান করেন। কিন্তু যারা মৃত্যুর আগে দেহ দান করেন তাদের পরিবার বিষয়টিকে কিভাবে দেখে?

এই নিয়ে সাথে কথা বলেছেন নাদিয়া সারওয়াত, যার বাবা মৃত্যুর আগে দেহ দান করে গেছেন বাংলাদেশের একটি মেডিকেল কলেজে। ” আমি যখন খুব ছোট তখন থেকেই শুনেছি বাবা বলতো যে তার দেহ দান করবেন। আব্বু মারা গেছে দু মাস হলো। তার দু তিন মাস আগে থেকেই তিনি প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। কারণ দিবো বললেই দেয়া যায়না। আবার বাংলাদেশে এটা প্রচলিত না”।

তিনি বলেন, “আব্বু রাজশাহী মেডিকেল কলেজে দিয়েছিলো। কিন্তু তারা যেহেতু জানে যে আত্মীয় স্বজনরা বাধা দেয় বা পরিবার রাজী হবে কি-না এগুলো নিশ্চিত হতে চায় আর কিছু আইনি বিষয় আছে। আব্বু প্রথম আমাদের সামনে বিষয়টা আনলো যখন কাগজপত্র তৈরির বিষয় শুরু হলো। আব্বু নিজেই আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করেছিলো”।

“তখনি আমি সরাসরি জানতে পারলাম কারণ সাক্ষী হিসেবে আমাদের সম্মতির বিষয় ছিলো। আব্বুর দেহদানের সিদ্ধান্তে আমি অবাক হইনি, তবে খারাপ লাগছিলো। আমার মা বেশ কান্নাকাটি করেছিলো। কারণ মা ধার্মিক মানুষ, তার মনে হয়েছে কবর না দিলে আত্মা কষ্ট হবে”।

কিন্তু পাড়া প্রতিবেশী আত্মীয় স্বজন কিভাবে নিয়েছিলো বিষয়টা- এমন প্রশ্নের জবাবে নাদিয়া সারওয়াত বলেন ,”চাচারা বেশ রিঅ্যাক্ট করেছিলো। তারা বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন।

আব্বু যখন হাসপাতালে তখন সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের জন্য বেশ চাপও দিয়েছিলেন যে ধর্মে বাধা আছে, পাপ হবে। আব্বু বলেছেন ধর্মে কোন নিষেধ নেই বরং ধর্মে আছে জ্ঞানের চর্চার কথা। জ্ঞানের জন্য দেহ দান যদি করি তাহলে ধর্মে বাধা থাকতে পারেনা। বরং আরও অনেক মানুষের উপকার হবে”।

“পাড়া প্রতিবেশীতো আব্বু মারা যাওয়ার আগে জানতোনা। যখন কবর না দিয়ে মেডিকেল কলেজে মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হয় সবাই অবাক হয়েছেন। তবে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পাইনি আমরা।বরং সবাই শ্রদ্ধাভরেই দেখেছেন যে বাহ সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, মানুষের উপকার করছেন”।

কিন্তু দেহ দানের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা যারা করেন তাদের যুক্তি কি কেবল ধর্ম ? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন এটা মানসিক বাধা। “ধরুন আমার কাছের কারও দেহ তার কবর জিয়ারত করতে পারছিনা। দোয়া করবো স্মরণ করবো কিন্তু তার দেহ কোথাও নেই। এটা মেনে নেয়া কঠিন।

সবাই জানে এটা ভালো কাজ। কিন্তু আমার বাবা – এটা মানতে পারেনা। কোথাও তার চিহ্ন থাকবেনা, কাটাছেঁড়া হবে-এটাই মূল মানসিক বাধা”।-বিবিসি