আমাদের মধ্যেই মীরজাফরেরা আছে : আইনমন্ত্রী আনিসুল হক

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে লাহোরে নয়, ঢাকাতেই হত্যা করা হয়েছে জানিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন ‘আমাদের মধ্যেই মীরজাফরেরা আছে।’

বৃহস্পতিবার রাজধানীর আব্দুল গণি রোডে নিবন্ধন পরিদফতরে বঙ্গবন্ধুর ৪২তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘শোককে আমরা শক্তিতে পরিণত করব। কিন্তু আজ বাঙালির একটা জিনিস মনে রাখতে হবে- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কিন্তু লাহোরে মারতে পারে নাই। বঙ্গবন্ধুকে ঢাকাতেই মারা হয়েছে। আপনাদেরকে কেন এটা বলছি- সেটার কারণ হচ্ছে, আমাদের মধ্যেই মীরজাফরেরা আছে।’

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বঙ্গবন্ধুকে ঢাকায় হত্যা করে নিজেদের উপর যে কলঙ্ক লেপন করেছি, সেই কলঙ্ক কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা দিয়ে শেষ হয় না। আমরা বিচার করেছি এবং পাশাপাশি দেখেছি যে সংবিধান দিয়ে উনি (বঙ্গবন্ধু) হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্ট তৈরি করে গেছেন, সেই সুপ্রিম কোর্টের অনেক বিচারপতি তার হত্যার বিচার করতে বিব্রতবোধ করেছেন। আমাদের জন্য এগুলো লজ্জার।’

‘আজকে আমি শুধু এটুকু বলতে চাই, এই কলঙ্ক মোচন হবে এভাবে যদি আমরা সব চেষ্টা দিয়ে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে পারি।’

আনিসুল হক বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে যে খুনিরা হত্যা করেছেন শুধু তারাই এই ষড়যন্ত্রের মধ্যে ছিলেন সেটা সঠিক নয়, আমি এটা বিশ্বাস করি। কিন্তু এটা মনে রাখতে হবে ২১ বছর বঙ্গবন্ধুর মতো একজন মহাপুরুষের হত্যাকাণ্ডের কিন্তু কোনো এজাহার হয়নি। তখন কিন্তু কোন বাঙালি দাঁড়িয়ে বলেনি এই এজাহারটা করতে হবে।’

‘যিনি বলেছেন তার কথা না হয় নাই বললাম। কিন্তু সত্য এটাই ২১ বছর কিন্তু বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচারের কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। অন্যদিকে কি হয়েছিল? যাতে বিচার না হয় সেজন্য ইনডেমনিটি (দায়মুক্তি) অর্ডিন্যান্স হয়েছিল।’

মন্ত্রী বলেন, ‘১৯৯৬ সালে সেই কাজটিই (বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার) করতে হয় বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যার। বিচার যখন অর্ধেক হয় তারপর কিন্তু অনেকে বিচারটা শেষ করেননি। কেন করেননি? তার কারণ বিচারটা শেষ করতে গেলে ওনাদের নামও এসে যাবে। বঙ্গবন্ধুর কন্যাকে আবারও ফিরে আসতে হয় এই বিচারটা শেষ করতে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যারা এই মামলা তদন্ত করেছিলেন তারা ২১ বছর পর যে বাস্তবতা পেয়েছিলেন তার উপরই কিন্তু তদন্ত করেছিলেন। ২১ বছর আগে যদি মামলা হত যারা পরিকল্পনাকারী ছিলেন, যারা পেছনে ছিলেন তাদের ধরা যেত।’

‘একটা জিনিস তদন্তে প্রমাণিত হয়েছিল তা হল জিয়াউর রহমান এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল। তখন কিন্ত জিয়াউর রহমান ১৫ বছর মৃত’ বলেন আনিসুল হক।

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমি শুধু এইটুকু প্রশ্ন করতে চাই, ১৯৭৫ সালের পর তো অনেক সরকারই ছিল তারা ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্সটা তুলে কেন এই বিচারটা করলেন না। তাহলে আজ এক প্রশ্ন উঠত না যে হত্যাকাণ্ডের পেছনে যারা আছেন তাদের বিচার হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘নিশ্চয়ই আজকে এটা কমিশন করার কথা চিন্তা করছি, যেখানে অন্তত ইতিহাসের জন্য আমরা রেখে যেতে পারব সত্য সত্য যারা এই হত্যার নেপথ্যে ছিল।’

মন্ত্রী বলেন, ‘তাই আসুন আরেকবার শপথ নিই যে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্পের সোনার বাংলা আমরা গড়ব এবং সঙ্গে সঙ্গে শপথ নিই যারা হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে ছিলেন তাদেরকেও আমার চিহ্নিত করব।’

আইন ও বিচার বিভাগের সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হকের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ শহীদুল হকসহ মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য কর্মকর্তারা।