আলাউদ্দিন আদর-এর কবিতাগুচ্ছ

নারী ও নদী

নারী ও নদীর প্রতি আজন্ম দুর্বল আমি!
সত্য বলতে,দুটোই আমায় চম্বুকের মত কাছে টানে;
-দেহে শিহরণ তুলে,প্রাণ করে ব্যাকুল!
হ্যাঁ,আমি আজ কিছুই লুকাবো না;
আমি সত্য বলার ‘সৎ সাহস’ আরবের সেই ব্যাবিচারিনীর কাছ থেকে পেয়েছি!
যে নারী এ জগতের শ্রেষ্ঠ মানুষটির সামনে বলেছিল-‘আমি ব্যাবিচারী,আমায় শাস্তি দিন’
সত্য গোপনকারী ভন্ড পুরুষকে আমি তাই ঘৃণা করি বেশ্যা থেকে বেশি।
আমি কামুক পুরুষ হলেও কাপুরুষ নই;
কাম আকাঙখা আমায় বন্য করতে পারেনি আজো।
আমার চোখের সম্মূখে হেঁটে চলে নারী ও বয়ে যায় নদী,নিত্যদিন।
আমি নদীতে হাত বাড়ালেও নারীতে বাড়াইনি!
নদীর স্বচ্ছ-গোলা জলে কত জলকেলি খেলেছি,কিন্তু নারীতে চাইনি!
নদীর কোলে বসে তার রুপ দেখেছি অপলক,অথচ নারীতে আড় চোখা হতেও করি সংকোচ!
মাঝে মাঝে কত কি ভাবতাম!ভাবতাম-
লজ্জাবতী পাতার সকল লাজ বোধ হয় আমার দু’নয়ন ও সারা অঙ্গে ভরে দিয়েছে স্রষ্টা!
একদিন নদী নিজেই আমায় রেহাই দেয়,সেই ভাবনা হতে!
নদী মিষ্টি কন্ঠে বলে-
শুনো কবি,নারী ও নদীর পরাগ বিস্তর;
নারী দেহ ক্ষুদ্র হলেও গভীরতা অসীম;
আমার দেহে নব্যতা জমে,সে বাড়ে ক্রমে…
নদীর ঢেউ তরঙ্গে কথাগুলো দোল দিতে দিতে হারিয়ে গেল!

আশপাশের কত চেনা পুরুষকে নদী ও নারীতে হারাতে দেখিছি;
গভীরতার পরিমাপ বুঝতেও আজো তাই ডুব দেইনি দু’টোর কোন’টিতে!
আমি হারাতে চাই’না আমার আমাকে;
আমি যে হারাতে আসি নি,কবি’দের হারাতে নেই।

**************

নিবন্ধিত নারী

প্রিয়তমা,ভুট্টার খোলসের মতন সৌনালী বদন গোমটা দিয়ে ঢেকে রেখেছ কেন?
আমি তোমার বৈধ ভোক্তা,দশ লক্ষ টাকার দেনমোহরের বিনিময়ে তিনবার স্বেচ্চায় কবুল পড়ে নিবন্ধন নিয়েছি।
শুনেছি,তুমি লজ্জায় মুখে কবুল বলতে পারনি!তাই লজ্জাবতী লতার ন্যায় নুয়ে হাতের মুঠের পানের খিলিটি সাক্ষির হাতে জমা দিতে সম্মতি জানিয়েছো,মুক্তোর মত শুভ্র হাতটি দিয়ে কঁম্পনমান হাতে সাক্ষর দিয়েছ..
আমি দুয়ারের খিলান শক্ত করে লাগিয়ে দিয়েছি।এনার্জি লাইটের উজ্জ্বল আলো নিবে ডীম লাইটের মিটমিট আলো জ্বলছে।এই নিশ্ছিদ্র রুমের আমি আর তুমি।তবু কিসের এতো লজ্জা?
প্রিয়তমা,তুমি চাইলে মিটমিটে আলোটিও নিবিয়ে দেবো।দূর ছাই,নিবিয়েই দিলাম।এবার কাছে এসো।গোমটটি খোলো।আরেকটু উপরে তুলো… হ্যাঁ মাথার উপর পর্যন্ত!
বাহ্, কি অপরুপ করে গড়েছে তোমায় বর ভীষণ যতনে।মাশা আল্লাহ!
আরে আরে কর কি!কর কি! প্রিয়তমা,
এই উত্তাল ঝড় রাতে আমায় বাহিরে রেখে তুমি কপট লাগিয়ে নিলে!
আমাকে ঝড় মোকাবিলার প্রস্তুতির সময় দাও।এসো দু’জনে দেখে নেই ঝড়ে গতি প্রকৃতি।মনোবল শক্ত কর।এটি যুদ্ধ জয়ের অন্যতম হাতিয়ার।আমার হাত দুটি ধরে দেখ।শক্ত করে ধরো,শক্তি পাবে।পর্দা সরাও। এবার আমায় দেখতে দাও।ভাঁজ খুলো।সকল বৈধ অলি-গলি,গিরিপথ,গুহা সব চিনে রাখি।ভয় নেই।আমি অভদ্র নই..
লজ্জা করোনা প্রিয়তমা,
আমাকে দায়িত্ব পালনে সাহায্য করো।এ রাজ্যের সুরক্ষার দায়িত্ব আমাদের দু’জনেরই।আমি ঝড় মোকাবেলা প্রস্তুত।পর্দা সরাও। এসো দু’জন কাজে নেমে পড়ি..

**************

ভাবনা জুড়েই তুই

মন আকাশের তারারা রোজ ঝরে
মন পাখি তুই আয় না মনের ঘরে

মন চায় তোরে পাশ বালিশে রাখি
মন ভরে দেখি তোর অতুল দু’আঁখি

মন কাঁদে হায় তোর ভাবনায় রোজ
মন ভাবে ঠিকই পাবে তোর খোঁজ!