আশ্রয় নেওয়া ৭০ হাজার রোহিঙ্গা নারী গর্ভবতী বা স্তন্যদায়ী

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নারীদের মধ্যে ৭০ হাজার গর্ভবতী বা স্তন্যদায়ী বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।

সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে তথ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান মন্ত্রী।

সংবাদ সম্মেলনে ইনু বলেন, জেলা প্রশাসন থেকে প্রাপ্ত তথ্যের মাধ্যমে জানা গেছে, ২৫ আগস্টের পর থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে ৭০ হাজার নারী গর্ভবতী ও স্তন্যদায়ী। এসব নারীকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। তাদের বিশেষ যত্ন নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া স্তন্যদায়ীদের শিশুদের টিকা দেওয়া হচ্ছে।

সরকার রোহিঙ্গাদের প্রতি মানবিক উল্লেখ করে ইনু আরো বলেন, মিয়ানমার সরকার একটি জাতিকে সম্পূর্ণ নির্মূল করার চেষ্টা করছে। প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে কূটনৈতিকভাবে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করতে হবে। সরকার রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণে আশ্রয় ও সাহায্য দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ইচ্ছে করলে সীমান্ত বন্ধ করে দিয়ে রোহিঙ্গা সমস্যা এড়াতে পারত। কিন্তু তা করেনি।

এদিকে অনেক বাংলাদেশি তরুণই মানবতার খাতিরে রোহিঙ্গা তরুণীদের বিয়ে করছে—এমন খবরের পরিপ্রেক্ষিতে ইনু বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রতি মানবিক আচরণ করতে হবে। তবে মানবিক কারণ থেকে রোহিঙ্গা তরুণীদের বিয়ে করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ এ সুযোগে কিছু অসাধু লোক অসহায় রোহিঙ্গা তরুণীদের বিয়ে করে পাচার করে দিতে পারে।

মিয়ানমার সরকার ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম গণহত্যা চালাচ্ছে উল্লেখ করে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের নিয়ে রাজনীতি না করে তাদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান ইনু। এ ছাড়া রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ দেওয়ার আগে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সমন্বয় করার কথা জানান তিনি। এতে সবার মধ্যে সঠিকভাবে ত্রাণ বিতরণ সম্ভব হবে।

তথ্যমন্ত্রী অভিযোগ করে বলেন, উদ্বাস্তু রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈধ সরকারের বদলে একটি আস্বাভাবিক সরকার প্রতিষ্ঠার চক্রান্ত হচ্ছে। দেশবাসীকে এটার প্রতিবাদ করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরেন তথ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, ১৯৭৮ সালে মিয়ানমার সরকারের নির্যাতনে দুই লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। তবে তারা সবাই আবার মিয়ানমারে ফিরে যায়। পরে ১৯৯২ সালে দুই লাখ ৭০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এদের মধ্যে দুই লাখ ৩৬ হাজার ৫৯৯ জন মিয়ানমারে ফেরত যায়। বাংলাদেশে থেকে যায় ৩৪ হাজার জন। তাদেরসহ বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে চার লাখ রোহিঙ্গা প্রবেশ করে। গত ২৫ আগস্টের পর থেকে আরো চার লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করে।

আজকের সম্মেলনে মন্ত্রণালয়ের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা কামরুন্নাহার, উপপ্রধান তথ্য কর্মকর্তা ফাইজুল হক উপস্থিত ছিলেন।