আসছে তৃতীয় শক্তি! নির্বাচনী রাজনীতিতে নতুন মাত্রা

নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হতে যাচ্ছে বলে আভাস মিলছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি গড়ে উঠার চেষ্টা চলছে।

ভিন্ন প্ল্যাটফর্ম থেকে অংশ নিতেই এমন শক্তি গড়ে তোলার মূল উদ্দেশ্য কি না; নাকি এর পেছনে অন্য কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কাজ করছে-তা নিয়ে আলোচনা চলছে রাজনৈতিক অঙ্গনে।

এ উদ্যোগের সঙ্গে এমন সব রাজনীতিক যুক্ত, যারা নানা কারণেই রাজনীতিতে বেশ আলোচিত ও সমালোচিত। আবার প্রজ্ঞাবান রাজনীতিকও রয়েছেন। ডান ও বাম ঘরানার এসব রাজনীতিকদের এক প্লাটফর্মে এসে নতুন রাজনৈতিক ফ্রন্ট গড়ার খবরেও রাজনীতিতে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

নির্বাচন সামনে রেখে এমন তৃতীয় শক্তি গড়ার খবর কিছুটা হলেও ভাবনায় ফেলেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপিকেও। বিশেষ করে আ স ম আবদুর রবের বাসায় এই জোটসংক্রান্ত ঘরোয়া আলোচনায় পুলিশের বাধাকে কেন্দ্র করে বিএনপি নেতাদের প্রতিবাদ ও জোটের পক্ষে পরোক্ষ সমর্থন জানানোয় প্রশ্ন উঠেছে এমন জোট গঠনের নেপথ্য কারণ নিয়েও।

স্বয়ং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পুলিশি বাধার ঘটনায় বিবৃতি দিয়ে প্রতিবাদ জানানোয় সেই প্রশ্ন আরো সামনে চলে আসছে। আওয়ামী লীগ এই জোটকে আমলে না নিলেও সতর্ক পর্যবেক্ষণে রেখেছে। পক্ষান্তরে মুখে সতর্ক থাকার কথা বললেও কিছুটা স্বস্তিতে বিএনপি।

তারা মনে করছে, শেষ পর্যন্ত এই জোট সরকারবিরোধী অবস্থান নেবে ও বিএনপির মতো নির্বাচনকালীন সরকারের দাবি জানাবে। তবে ওই ঘরোয়া বৈঠকে পুলিশের বাধা নিয়ে কিছুটা সমালোচনার মুখে রয়েছে আওয়ামী লীগ। বিভিন্ন সভা-সেমিনারে এ নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে কথা হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) রাতে উত্তরায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রবের বাসভবনে ডান ও বাম ঘরানার কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতারা বৈঠক করেন। বৈঠকে বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)-এর সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান ভূঁইয়া, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা বৈঠক করেন।

এ ছাড়া বিশেষ আমন্ত্রণে উপস্থিত ছিলেন-স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ও সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। তবে বৈঠক চলাকালে দুই দফা পুলিশের কয়েকজন সদস্য আ স ম আবদুর রবের বাসায় যান। তারা ওই বৈঠকের বিষয়ে জানতে চান। ওই সময় পুলিশকে জানানো হয়, সবাইকে রাতের খাবারের নিমন্ত্রণ করা হয়েছে।

বৈঠক সূত্রমতে, এ ফ্রন্ট রাজনৈতিক ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের পাশাপাশি আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রার্থী দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে। যথা সময়ে নতুন ফ্রন্টের ঘোষণা আসবে। শুধু রাজনৈতিক দলই নয়, নাগরিক সংগঠনের প্রতিনিধিরাও নতুন রাজনৈতিক ফ্রন্টে থাকবেন।

সবাইকে নিয়ে একটি যুক্তফ্রন্ট গঠন করা হবে যাতে সামনে রাজনৈতিক ও নাগরিক ইস্যুতে আন্দোলন এবং জাতীয় নির্বাচনে সাধারণ মানুষের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করা যায়। সেসব দল ও সংগঠন জোটে আসবে তারা কমন ইস্যুতে কাজ করবে।

তবে দলগুলোর নিজস্ব দলীয় কার্যক্রম হলে আলাদা। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে আ স ম রব ও কাদের সিদ্দিকী বিকল্প রাজনৈতিক জোট এনডিএফের ঘোষণা দিয়েছিলেন। ওই নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের মতো এনডিএফও নির্বাচন বর্জন করে।