আ.লীগ না চাইলেও জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্য : ফখরুল

আওয়ামী লীগ না চাইলেও জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি জাতীয় ঐক্য গড়ে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান করবে বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শনিবার বিকালে রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে এক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন ফখরুল। প্রয়াত কাজী জাফর আহমেদের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর)।

গত ২৪ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে পুলিশ ও সেনাক্যাম্পে হামলার পর রোহিঙ্গাদের নিধনে অভিযান শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। অভিযানের নামে রোহিঙ্গাদের গণহত্যা ও বাড়িঘর আগুন নিয়ে জ্বালিয়ে দেয় সেনাবাহিনী ও রাখাইন সন্ত্রাসীরা।

নির্যাতনের মুখে চার লাখের মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে বলে জাতিসংঘের তথ্যে বলা হয়। কিন্তু স্থানীয়দের মতে এই সংখ্যা চার লাখেরও বেশি।

রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় জাতীয় ঐক্যে গড়তে মহাসচিবসহ বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তাদের আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিম বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতীয় ঐক্য হয়ে গেছে, আর নতুন করে কোনো ঐক্যের প্রয়োজন নেই।

গতকাল শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপিকে ‘সন্ত্রাসী দল’ আখ্যা দিয়ে তাদের সঙ্গে রাজনৈতিক সমঝোতার কথা নাকচ করে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভবিষ্যতে কেউ যেন এ ধরনের প্রস্তাব নিয়ে না আসে সেটাও বলে দেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা সন্ত্রাস ও হত্যার রাজনীতির সঙ্গে জড়িত আমি তাদের কাছে ফিরে যেতে আগ্রহী নই। তাই বিএনপির সঙ্গে রাজনৈতিক সমঝোতার প্রস্তাব দেয়া কারো উচিত হবে না।’

প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ জাতীয় ঐক্য গড়তে না চাইলে দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান করবে।’

সরকারের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমিত্ব বা সংকীর্ণতা পরিহার করে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলা করুন।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এর আগেও রোহিঙ্গারা বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে দুইবার বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিল। তখন তৎকালীন সরকার প্রধান হিসেবে জিয়াউর রহমান এবং পরবর্তীকালে খালেদা জিয়া তাদের আশ্রয় দিয়ে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করেছিলেন। এবারও বিএনপি চেয়ারপারসন লন্ডন থেকে বিবৃতিতে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে পরবর্তী সময়ে ফেরত পাঠানোর কথা বলেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য আজকে এই জিনিসগুলো উপলব্ধি করতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। তাদের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা এই বিষয়ে এখনো কোনো জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করতে পারেনি। আমরা এই কথাগুলো বললে বলেন বিএনপির সঙ্গে ঐক্য হবে না।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে ঐক্য হবে কী করে, বিএনপি তো সত্যিকার অর্থের একটি জনপ্রিয় ও দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল। কোনো কিছুর বিনিময়ে বিএনপি নিজের দেশের সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দেবে না।’

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে ফখরুল বলেন, ‘এখন পর্যন্ত এই হত্যাকাণ্ডকে কেন গণহত্যা বলেননি? মিয়ানমারের কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানাননি? দেখেই বোঝা যায় এখনো সেই বশংবদ রাজনীতিতে আছেন। এখনো আপনারা ভয় পান যে মিয়ানমারকে যারা সমর্থন দিচ্ছে তারা যদি বিরাগভাজন হয়ে যান! এখানেই পার্থক্যটা।’

রোহিঙ্গাদের জন্য বিএনপির ত্রাণ কার্যক্রমে বাধা দেয়ার নিন্দা জানিয়ে ফখরুল বলেন, ‘এটি কোন ধরনের হীনম্মন্যতার রাজনীতি। ভয় পান বলেই এই ধরনের কাজ করেন।’

চালের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘চালের দাম বেড়েই চলেছে, এদিকে কোনো পদক্ষেপ নেই। উন্নয়নের নামে মেগা প্রজেক্টের মাধ্যমে মেগা লুট চলছে। শেয়ারবাজার, ব্যাংকসহ অন্যান্য সেক্টর লুটের পর এখন ত্রাণ লুট করছে।’

জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ডক্টর টি আই এম ফজলে রাব্বী চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর এমাজউদ্দিন আহমেদ, শিক্ষাবিদ ড. মাহবুব উল্লাহ, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপিকা রেহেনা প্রধান, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা এস এম এ আলম, কাজী জাফর আহমেদের বড় মেয়ে কাজী জয়া প্রমুখ।