ইসলামী বিপ্লবের পর ইরানের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা

ইরানে শুক্রবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশটির ইতিহাসের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা দেয়া হল-

১৯৭৯ : ইরানি বিপ্লব
যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত শাহ শাসনের পতন ঘটে ১৯৭৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি। বিজয়ের ১০ দিন পর বিপ্লবী নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি নির্বাসন থেকে দেশে ফিরে আসেন। ওই বছরের ১ এপ্রিল ইরানকে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করা হয়।

১৯৭৯ : যুক্তরাষ্ট্রের জিম্মি সংকট
খোমেনিপন্থী শিক্ষার্থীরা ১৯৭৯ সালের ৪ নভেম্বর তেহরানে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে ৫২ আমেরিকান নাগরিককে জিম্মি করে। এর ফলে ১৯৮০ সালে তেহরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে ওয়াশিংটন। ৪৪৪ দিন বন্দি থাকার পর ১৯৮১ সালের ২১ জানুয়ারি জিম্মিরা মুক্তি পায়।

১৯৮০ : ইরান-ইরাক যুদ্ধ
১৯৮০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ইরানে হামলা চালায় প্রতিবেশী ইরাক। এর আগে কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ শাতিল-আরব জলপথকে ঘিরে ১৯৭৫ সালের চুক্তি বাতিল করেন ইরাকি প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন। আট বছর ধরে চলা যুদ্ধে প্রায় ১০ লাখ লোক নিহত হয়। এটা ছিল মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী ও প্রাণঘাতী যুদ্ধ। জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় অস্ত্রবিরতির পর ১৯৮৮ সালের ২০ আগস্ট যুদ্ধ শেষ হয়।

১৯৮৯ : খোমেনির মৃত্যু
১৯৮৯ সালের ৩ জুন আয়াতুল্লাহ খোমেনি মৃত্যুবরণ করেন। ১৯৮১ সালের অক্টোবরে আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি পরবর্তী সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা হন। উদার রক্ষণশীল আকবর হাশেমি রাফসানজানি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯৯৩ সালে তিনি ফের প্রেসিডেন্ট হন।

১৯৯৫ : আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা
সন্ত্রাসবাদ সমর্থনের অভিযোগে ১৯৯৫ সালের ৩ এপ্রিল ইরানের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ওয়াশিংটন। ২০০২ সালের ২৯ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ ইরানকে ‘শয়তানের অক্ষশক্তি’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেন।

১৯৯৭-২০০৫ : রাজনৈতিক অচলাবস্থা
রাফসানজানির সংস্কারবাদী উত্তরসূরি মোহাম্মদ খাতামি ১৯৯৭ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত দুই দফা তার রক্ষণশীল প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করেন। এ সময় রক্ষণশীল ও সংস্কারবাদীদের মধ্যে রাজনৈতিক অচলাবস্থা তৈরি হয়। ১৯৭৯ সাল থেকে দেশটি সবচেয়ে বড় প্রতিবাদের মুখোমুখি হয়েছে ১৯৯৯ সালের জুলাই মাসে। খাতামি সমর্থিত শিক্ষার্থীরা দাঙ্গা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।

২০০৫ : আহমাদিনেজাদের যুগ শুরু
অতিরক্ষণশীল আহমাদিনেজাদ ২০০৫ সালের ২৫ জুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। আগস্টে তিনি বলেন, ইসরাইলিদের পৃথিবীর মানচিত্র থেকে মুছে ফেলা উচিত। তার আমলে ইরান ইউরেনিয়াম সামৃদ্ধ করতে শুরু করে। এতে পশ্চিমারা সতর্ক হয়ে পরে। তাদের সন্দেহ, তেহরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে চাচ্ছে। ২০০৬ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে জাতিসংঘ ইরানের বিরুদ্ধে ছয়টি প্রস্তাব গ্রহণ করে। তার মধ্যে চারটিতেই ছিল নিষেধাজ্ঞা।

২০১৩ : রুহানি-ওবামা সংলাপ
উদার ধর্মীয় নেতা হাসান রুহানি ২০১৩ সালের ১৫ জুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। এতে ওয়াশিংটনের সঙ্গে তেহরানের শীতল সম্পর্কে উষ্ণতা পায়। ওই বছর ২৭ সেপ্টেম্বর রুহানি ও প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ফোনে কথা হয়। ইরানের বিপ্লবের পর এই ফোনালাপ ছিল সত্যিই নজিরবিহীন।

২০১৫ : পরমাণু চুক্তি
২০১৫ সালের ১৪ জুলাই ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে বিশ্বশক্তি একটি চুক্তিতে সম্মত হয়। এতে ১৩ বছরের সংকটের সমাপ্তি ঘটে। পরমাণুু কর্মসূচি সীমিত করার বিনিময়ে তেহরান অর্থনৈতিক অবরোধ থেকে মুক্তি পায়। ২০১৬ সালের ১৬ জানুয়ারি চুক্তি কার্যকর হয়।

২০১৬ : সৌদির সঙ্গে সম্পর্কে ভাঙন
জানুয়ারির শুরুতে ইরানের আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী সৌদি আরব ও তার মিত্ররা তেহরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। শিয়া ধর্মীয় নেতা শেখ নিমর আল নিমরকে ফাঁসিতে ঝুলানোর পর এ সংকট সৃষ্টি হয়। এএফপি।