ইয়াবা নাটকে নিজেই ফাঁসলেন পুলিশ কর্তা

ঢাকার দোহার উপজেলার দোহার গ্রামের এক যুবককে (২৪) ইয়াবা ব্যবসায়ী বানিয়ে আটকসহ টাকা আদায় করে ফেঁসে গেছেন এক পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি হলেন দোহার থানার এএসআই রফিকুল ইসলাম।

বৃহস্পতিবার এ ঘটনায় এলাকাবাসী ওই পুলিশ সদস্যের অপসারণ ও শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করলে তাঁকে পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করা হয়।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, দোহার গ্রামের জাহাঙ্গীর খানের ছেলে মারুফ খানকে ইয়াবা ব্যবসায়ী বানিয়ে বড় অঙ্কের টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করেন এএসআই রফিক। এতে সহযোগিতা করেন পুলিশের সোর্স মধুরগ্রামের রউফ মাতবরের ছেলে মো. রাজিব ও দোহার গ্রামের বাবুল সিকদারের ছেলে নূর মোহাম্মদ ওরফে মহত। রাজিব ১০০ টাকা ও এএসআই রফিক নিজের পকেট থেকে ৫০০ টাকা দিয়ে ইয়াবা কেনার দায়িত্ব দেন মহতকে। পরিকল্পনা করা হয়, ওই ইয়াবা দিয়ে মারুফকে আটক করে টাকা আদায় করা হবে এবং এই টাকা তিনজন ভাগ করে নেবেন।

সূত্র জানায়, গত বুধবার রাত ৮টার দিকে মারুফ বাড়ি থেকে দোহার বাজারে আসার সময় পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী মারুফের হাতে ওই ৬০০ টাকা ধরিয়ে দিতে যান মহত। ওত পেতে থাকা এএসআই রফিক ও তাঁর সোর্স রাজিব সেখানে এগিয়ে যান। তখন ওই টাকার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে মহত বলেন, ‘এ টাকা ইয়াবা কেনার জন্য মারুফকে দিয়েছি। ’ এরপর মারুফ ও মহতকে আটক করে একটি অটোরিকশায় করে থানার দিকে নিয়ে যান এএসআই রফিক। পথে মহতকে ছেড়ে দেওয়া হয়। আর আটকের বিষয়টি এক আত্মীয়ের মাধ্যমে জানানো হয় মারুফের মা ফাতেমা বেগমকে। খবর পেয়ে পাগলপ্রায় ফাতেমা রাতেই এএসআই রফিকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাঁর কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করা হয়। দেনদরবারে ১২ হাজার টাকায় মুক্তি মেলে মারুফের।

গতকাল সকালে এলাকায় বিষয়টি জানাজানি হলে ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে মানুষ। পুরো পরিকল্পনার কথা ফাঁস করে দেন মহত। খবর পেয়ে এএসআই রফিক এলাকার মানুষকে ম্যানেজ করতে সেখানে ছুটে যান। কিন্তু এলাকাবাসী মিছিল নিয়ে উপজেলা প্রশাসনে এসে ওই পুলিশ সদস্যসহ ঘটনায় জড়িত অন্যদের শাস্তির দাবিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করতে থাকে। একপর্যায়ে দোহার থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম ঘটনাস্থলে এসে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। অভিযুক্ত এএসআই তখন সেখানে ছিলেন। তাঁকে জনগণকে ম্যানেজের চেষ্টায় ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়।

অভিযুক্ত নূর মোহম্মদ ওরফে মহত বলেন, ‘এএসআই রফিক আমাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে এ কাজে বাধ্য করেছেন। পুলিশের সোর্স রাজিব রফিককে সহযোগিতা করেছেন। তাঁরা দুজন আমাকে ৬০০ টাকা দিয়েছিলেন ইয়াবা কেনার জন্য এবং ওই ইয়াবা দিয়ে মারুফকে ফাঁসিয়ে টাকা খাওয়ার জন্য। আমি ইয়াবা কিনতে না পারার বিষয়টি এএসআই রফিককে জানাই। তিনি আমাকে বলেন, ‘তাহলে তুই টাকাটাই মারুফের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলবি, এটা ইয়াবা কেনার টাকা, ও ইয়াবা ব্যবসা করে। ওই মুহূর্তে গিয়ে আমি তোদের দুজনকে ধরব, কিন্তু তোকে রাস্তা থেকে ছেড়ে দেব’। ” মহত জানান, এএসআই রফিক এর আগেও এ ধরনের কাজ করেছেন। রফিককে এতে সহায়তা করতেন নিজেকে পুলিশ পরিচয় দেওয়া ওই রাজিব।

দোহার গ্রামের দেওয়ান মোশারফ, মো. রশিদ, মো. মন্টুসহ বেশ কয়েকজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পুলিশের এমন কর্মকাণ্ডে এলাকার মানুষ আতঙ্কিত। এলাকার নিরীহ ছেলেদের ইয়াবা দিয়ে ফাঁসিয়ে টাকা আদায় করা হচ্ছে। মারুফের মা ফাতেমা বেগম বলেন, ‘ছেলে আটকের কথা শুনে আমার মাথা ঠিক ছিল না। আমার কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেছিল ওই পুলিশ। আমি আমার এক আত্মীয়র মধ্যস্থতায় ১২ হাজার টাকা দিয়ে ছেলেকে ছাড়িয়ে এনেছি। ’ অভিযুক্ত এএসআই রফিকুল ইসলামের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর না দিয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের ম্যানেজের চেষ্টা করেন। দোহার থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম শেখ বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।