ঈদযাত্রার তৃতীয় দিনে ট্রেনে উপচেপড়া ভিড়

ঈদে ঘরমুখো মানুষ নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছে তিন দিন আগে থেকেই। গত দুই দিন যাত্রীদের তেমন ভিড় না থাকায় টেনে অনেকটা সাচ্ছন্দেই বাড়ি ফিরছিল মানুষ। গতকাল প্রতিটি ট্রেন সময়মতোই ছেড়ে গেছে স্টেশন থেকে। এ কারণে ভোগান্তিও কম হয়েছে ঘরমুখো যাত্রীদের। কিন্তু শুক্রবার কমলাপুর থেকে দেখা ঈদে ঘরে ফেরা মানুষের চিরাচরিত ভিড়। তবে কমলাপুর স্টেশন থেকে সবগুলি ট্রেন সময় মতোই ছেড়ে গেলেও ইঞ্জিন বিকলের কারণে প্রায় দুই ঘণ্টা পর কমলাপুর রেল স্টেশন ছেড়ে যায় রংপুর এক্সপ্রেস। এতে যাত্রীরা পরে চরম ভোগান্তিতে।

সকালে কমলাপুর স্টেশন ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকেই ট্রেনের অপেক্ষায় প্লাটফর্মে বসে আছেন অনেক যাত্রী। সবার হাতে ব্যাগ, কারো সঙ্গে স্ত্রী-সন্তান, বন্ধু-বান্ধব, প্রিয়জন অথবা একা একাই বসে আছেন স্টেশনে। আবার অনেকে মানুষের ভিড় ঠেলে কাঙ্ক্ষিত ট্রেনের দিকে ছুটছেন। প্রতিটি ট্রেনের ভেতরে আজ ছিলো মানুষের উপচেপড়া ভিড়। যাত্রীদের ভিড়ে ট্রেনের ভিতরে তিল ধরনের ঠাঁই ছিল না। প্রতিটি ট্রেনই ছিল যাত্রীতে ঠাসা। প্রতিটি ট্রেনের দরজা ছিল মানুষের ভিড়ে বন্ধ।

টিকিট কাটা যাত্রীদের পাশাপাশি টিকিট না কাটা অনেকে প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে আছেন। এই সংখ্যাটাও হাজার হাজার। তাই ভেতরে ঢুকতে না পেরে অনেকে উঠছেন ট্রেনের ছাদে। প্রায় সবগুলো ট্রেনের ছাদই ভর্তি ছিল ঘরমুখো যাত্রীদের ভিড়ে। ফাঁকা ছিল না ছাদের কোন অংশ।

সকাল থেকেই পারাবত, সোনার বাংলা, তিস্তা, প্রাভাতী, নীল সাগর, মহুয়া এক্সপ্রেস, দেওয়ানগঞ্জ ঈদ স্পেশাল, রংপুর এক্সপ্রেসের ছাদে ঘরমুখো মানুষের ছাদে ভ্রমণের দৃশ্য চোখে পড়েছে।

ট্রেনের ছাদে ওঠতে গিয়ে ঘরমুখো যাত্রীদের গুণতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। ছাদে উঠতে তাদের গুণতে হচ্ছে ৩০ টাকা। স্টেশনের ট্রলিম্যান প্রতি যাত্রীর কাছ থেকে ৩০ টাকা নিয়ে মই দিয়ে তাদের ছাদে তুলে দিচ্ছেন। তবে ট্রলি ছাড়াও অনেকে ঝাঁপ দিয়ে ছাদে উঠছেন। জীবনের ঝুঁকি থাকলেও পরোয়ান করছেন না কেউ। অনেকের টিকিট কাটা থাকলেও ট্রেনে উঠতে পারছেন না। ট্রেন স্টেশনে আসার পরই মানুষ তাড়াহুড়ো করে ট্রেনে ওঠায় টিকিট কাটার পরও অনেকে ট্রেনে উঠতে পারছেন না।

রংপুর এক্সপ্রেসের যাত্রী আলামিন হোসেন ছুটছেন ট্রেনের পানে। ট্রেন কানায় কানায় পূর্ণ থাকায় তিনি নিজের আসন পর্যন্ত যেতে পারছিলেন না। তিনি প্রথমে ব্যাগ এবং পরে তার স্ত্রীকে ট্রেনের জানালা দিয়ে তার আসনের কাছে পৌঁছে দেয়ার চেষ্ট করছিলেন।

ঢাকাটাইমসের সঙ্গে আলাপকালে আলামিন বলেন, ‘আজ ট্রেনে যে ভিড়, আমার অগ্রিম টিকিট থাকা সত্ত্বেও নিজের সিট পর্যন্ত যেতে পারছি না। তাই বাধ্য হয়েই ট্রেনের জানালা দিয়ে সিটে যাওয়ার চেষ্টা করছি।’

দিনাজপুরগামী ট্রেনে যাচ্ছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী সামিয়া ইসলাম। ঘরমুখো মানুষের ভিড়ের মধ্যে তিনি তার আসনটি খুঁজে বসে আছেন ট্রেন ছাড়ার অপেক্ষায়। ঢাকাটাইমসকে সামিয়া বলেন, প্রিয়জনের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতেই শত ভোগান্তির মধ্যেও আমরা বাড়ি ফিরে যাচ্ছি। আজ ট্রেনে এত মানুষের ভিড় যে ঠেলে সিট পর্যন্ত আসতে অনেক কষ্ট হয়েছে।

তৃতীয় দিনের ঈদ যাত্রা নিয়ে কমলাপুর রেল স্টেশনের ম্যনেজার সিতাংশু চক্রবর্তী ঢাকাটাইমসকে বলেন, আজ ঈদ যাত্রার তৃতীয়দিনে ঘরমুখো মানুষের প্রচণ্ড ভিড়। সকাল থেকে এখন পর্যন্ত ২০টি ট্রেন সময়মতো কমলাপুর স্টেশন ছেড়ে গেছে। তবে রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনটির ইঞ্জিন বিকল হওয়ায়, সেটি ছাড়তে দুই ঘণ্টা দেরি হয়। আজ কমলাপুর স্টেশন থেকে দুটি স্পেশালসহ ৬৬টি ট্রেন ছেড়ে যাবে।

সিতাংশ আরও বলেন, আজ মানুষ স্বতঃস্ফুর্তভাবে মানুষ যাচ্ছে। ট্রেনের ছাদে যাত্রী ওঠা বিপজ্জনক, তারপরও মানুষ ছাদে ওঠছে। আজ মেইল ট্রেনে ২৫ হাজার, আন্তঃনগর ট্রেনে ২৫ হাজার সহ মোট প্রায় ৭৫ হাজার যাত্রী রাজধানী ছেড়ে যাবে।

সিতাংশু চক্রবর্তী বলেন, যাত্রীরা যেন নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরতে পারেন সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ছাড়াও রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনী দায়িত্ব পালন করছে। যাত্রীচাপ থাকায় বাড়ি ফেরা মানুষ কিছুটা ভোগান্তিতে পরে। তবে আমরা চেষ্টা করছি ট্রেনের সিডিউল ঠিক রেখে যাত্রীদের নির্বিঘ্নে যাতায়াত নিশ্চিত করতে।