এই ছবি ব্যবহারের কারণে এমন কাণ্ড!

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যে ছবি বিকৃতির অভিযোগে বরগুনার সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে সেই ছবিটি এটিই। পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর আঁকা এই ছবিটি দাওয়াতপত্রে ব্যবহারের কারণেই সৃষ্টি হয়েছে এই যন্ত্রণার।

তবে এই ছবিটিতে ঠিক কি ধরণের সমস্যা পেয়েছেন যে মানহানির মামলা ঠুকে দিয়েছেন সেটা বলতে গিয়ে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ ওবায়েদুল্লাহ সাজু বলেন, এই ছবিটিতে বঙ্গবন্ধুকে বিকৃত করা হয়েছে। এখানে বঙ্গবন্ধুর গালের উপরে একটি তিল দেওয়া হয়েছে ও চুলগুলো এলোমেলো করা হয়েছে।

পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর সম্পূর্ণ কল্পনাশক্তি দিয়ে আঁকা ছবিটিতে সূর্যের সামনে বঙ্গবন্ধুর মুখচ্ছবি দিয়ে কি ভাবে বঙ্গবন্ধুকে বিকৃতি করা হলো এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাচ্চার আঁকা ছবি দিয়ে কার্ডটা বানানো হয়েছে বলে আমরা মনে করি বঙ্গবন্ধুর ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর এমন কোনো ছবি নেই। যে কেউ ছবি আঁকলেই কি আমরা ছেপে দিবো।

সঙ্গে তিনি এও যোগ করেন, তবে এইসব ক্ষেত্রে নিয়ম হচ্ছে, বঙ্গবন্ধুর ছবিটা প্রথম পেজে চাপানো উচিত ছিল, তা না করে ছবিটা লাস্ট পেজে দেওয়া হয়েছে। এভাবে ছবি ছেপে বঙ্গবন্ধুকে হেয় করা হয়েছে।

তবে এই সংক্রান্ত কোনো নীতিমালা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, না এই সংক্রান্ত কোনো নীতিমালা নেই। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ছবি সবসময় প্রথম পেজে ছাপাতে হবে।

এভাবে ছোট্ট এক শিশুর শিল্পীমন দিয়ে আঁকা ছবি দিয়ে বানানো কার্ড ঘিরে মামলা করার ঘটনা রীতিমতো অমানবিক বলেই মনে করছেন শিল্পী উত্তম সেন।

তিনি বলেন, খুঁত খুঁজতে চাইলে সবকিছুতেই খুঁত পাওয়া যাবে। একটি ছোট্ট শিশুর আঁকা এমন এমন ছবিটিকে তো সবার ইতিবাচকভাবে নেওয়া উচিত। এমনকি যে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সেটি ব্যবহার করেছেন তিনিও তো ভালো মনেই সেটি ব্যবহার করেছেন, তার হয়তো ছবিটা ভালো লেগেছে বা বাচ্চাটিকে বলেছেন যে তুমি একটি ছবি আঁকো, সে এঁকেছে। এটা নিয়ে কেন এতটা অমানবিক আচরণ করছি।

এর মাধ্যমে পরবর্তীতে শিশুদের বিকাশের পথ অনেকখানি বাধাগ্রস্ত করা হলো বলেও উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, ওই শিশু নিশ্চয়ই প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান নিয়ে ছবি আঁকতে বসেনি। সে তো কেবল শিখছে। সে তার অন্তরে যতটা ভালোবাসা আছে সেটা দিয়েই আঁকার চেষ্টা করেছে। সেটাই পরে ব্যবহার করেছেন ইউএনও। সবকিছুকে একটু শৈল্পিকভাবে দেখাই ভালো। সবকিছুতে খুঁত খোঁজার মানসিকতা আমাদের ত্যাগ করা উচিত।

স্বাধীনতা দিবসের আমন্ত্রণপত্রের পেছনের পাতায় বঙ্গবন্ধুর ছবি ছাপানোয় জাতির জনকের মানহানী হয়েছে অভিযোগে গত ৭ জুন বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ ওবায়েদুল্লাহ সাজু বাদী হয়ে আগৈলঝাড়ার ইউএনও গাজী তারেক সালমানের বিরুদ্ধে বরিশাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৫ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ চেয়ে একটি মামলা দায়ের করেন।

বরিশালের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্টেট্র আদালতের বিচারক মো. আলী হোসাইন বুধবার সকালে তাকে কারাগারে পাঠিয়েছিলেন। পরে একই আদালত দুপুরে তাকে জামিন দেন।