এখনও খোলা আকাশে লাখো বানভাসী

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, আদিতমারী উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও বেড়েছে বানভাসী মানুষের দুর্ভোগ। জেলায় প্রায় ২ লাখ বানভাসী মানুষ এখনও খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছেন। দুর্ভোগ কাটিয়ে উঠতে বুধবার সকাল থেকে লালমনিরহাট বিজিবিসহ সেনাবাহিনীর তিনটি টিম কাজ করছে।

বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ধরলা নদীর পানি। বানভাসী এসব মানুষের মাঝে বিশুদ্ধ পানি ও শুকনো খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। বন্যার কারণে বিভিন্ন রাস্তাঘাট, ব্রিজ কালাভার্ট ভেঙে যাওয়ায় জেলা ও উপজেলা শহরের সঙ্গে দুর্গত এলাকার মানুষদের যোগাযোগ ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ভেঙে পড়েছে।

নদী বাড়িঘর বিলীন হওয়ায় অনেকেই এখনো রাস্তার ধারে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। ভেঙে যাওয়া রেলপথ সংস্কার না হওয়ায় গত তিন দিন ধরে বুড়িমারী স্থলবন্দরের সঙ্গে ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার সিংঙ্গীমারী ইউনিয়নের উত্তর ধুবনীর এলাকার সিরাজ, সিদ্দিক, ইদ্রিস তিন ভাইয়ের ১০টি টিনের ঘর সম্পূর্ণ নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। গত ৩ দিন ধরে খোলা আকাশের নিচে বাস করছেন তারা। বন্যায় লণ্ডভণ্ড ঘরবাড়ির টিন, আসবাবপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে।

সিরাজ মিয়া (৪০) বলেন, মানুষের অভাবে ভেসে যাওয়া ঘরের টিন, আসবাবপত্র উদ্ধার করতে পারিনি। স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে অন্যের বাড়িতে রয়েছি। তিন দিন ধরে কোনো সাহায্যও পাইনি।

এদিকে লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের গোবরধন হায়দারীরা দ্বি-মুখি উচ্চ বিদ্যালয়ের আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা চর চরগোবরধন গ্রামের দুলাল মিয়া (৪০) ও তার স্ত্রী ছকিনা বেগম (৩০) বলেন, ৪ দিন চরাঞ্চলে অবরুদ্ধ থাকার পর আজ আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছি। কিন্তু বর্তমানে পানি কিছুটা কমলেও বাড়ি ঘর কী অবস্থায় আছে সেই দুশিন্তায় ভুগছি।

বন্যার্তদের মাঝে সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত আছে। তবে এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ খাদ্য ও অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে জানা গেছে।

হাতীবান্ধা উত্তর ধুবনী এলাকায় নিজ উদ্যোগে বালির বস্তা দিয়ে বাঁধ দেওয়ার চেষ্টা করছেন এলাকাসী। প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে মঙ্গলবার দুপুরে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় সেনাবাহিনীর উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।

এসব বিষয়ে লালমনিরহাট সিভিল সার্জন আমিরুজ্জামান জানিয়েছেন, সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ওষুধ চেয়ে তাকে ফোন করা হয়েছিল। বন্যার্তদের সেবায় স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধ করণ ট্যাবলেটসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করতে জেলায় ৫৪টি মেডিকেল টিম কাজ করছে বলেও জানান তিনি।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যলায় সূত্রে জানা গেছে, প্রবল বন্যার কারণে লালমনিরহাটে ১০৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ আশ্রয় নেয়। তাদের মধ্যে কেউ কেউ পানি কমে যাওয়ায় বাড়ি ফিরে গেছে।

লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক শফিউল আরিফ বলেন, ত্রাণ তৎপরতার পাশাপাশি চিকিৎসা সেবা দিতে সেনাবাহিনী এসেছে। ত্রাণ হিসেবে ২৪২ মে.টন চাল ও নগদ ৮ লাখ টাকা বন্যার্তদের মাঝে বিতরণ কাজ চলছে বলেও জানান তিনি।