এতকিছুর পরও সেই ভিখারি মা বললেন, সন্তানের প্রতি কোনো অভিযোগ নেই !

বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের চতুর্থ তলায় অর্থোপেডিক বিভাগের ৪০৩ নম্বর কক্ষে বি-১৩ নং বেডে চিকিৎসাধীন বৃদ্ধা মা মনোয়ারা বেগম। পুলিশ কর্মকর্তা তিন ছেলে ও শিক্ষিকা মেয়ের অবহেলায় ভিক্ষার পথ বেছে নিলেও তিনি জানান, সন্তানের প্রতি তার কোনো অভিযোগ নেই, তার সব সন্তানই ভালো।

মা মনোয়ারা বেগমের ভিক্ষাবৃত্তির বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছেন পুলিশের বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি মো. শফিকুল ইসলাম (বিপিএম)। ওই কমিটিকে আগামী তিন কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টার দিকে বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি অফিসের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিআইজি মো. শফিকুল ইসলাম এ তথ্য জানান।

রেঞ্জ ডিআইজি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বৃদ্ধার ছেলেদের মুখ থেকে পুরো বিষয়টি শুনে পারিবারিক দ্বন্দ্বের আলামত পাওয়া গেছে। মূলত পৈত্রিক একটি সম্পত্তি নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ চলছে। যে কারণে মাকে অবহেলা বা অবজ্ঞা করা হয়েছে।

এদিকে মা মনোয়ারা বেগমের (৭০) দায়িত্ব নিতে তিন পুলিশ সন্তানসহ পাঁচজনই প্রস্তুত রয়েছেন এবং তারা সবাই অনুতপ্ত। কিন্তু এক্ষেত্রে ডিআইজি তাদের একটি শর্তজুড়ে দিয়েছেন তিনি (ভিখারি) যার কাছে যাবেন সেই ছেলে দেখভাল করবেন।

এছাড়া বাকি ছেলেরাও তার নিয়মিত খোঁজখবর রাখবেন। এই বিষয়টি তদারকি করার জন্য বরিশাল জেলা পুলিশ সুপারকে নির্দেশনা দিয়েছেন ডিআইজি।

উল্লেখ্য, স্বামী মারা যাওয়ার পর ছেলে ও মেয়েদের অবহেলার কারণে এক পর্যায়ে ভিক্ষায় নামতে হয় বৃদ্ধা মনোয়ারা বেগমকে। কয়েক মাস আগে ভিক্ষা করতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে তার কোমরের হাড় ভেঙে যায়। এরপর থেকেই তিনি স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারতেন না। ভিক্ষার পথও বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে বিনা চিকিৎসায় অর্ধাহারে অনাহারে বাবুগঞ্জের স্টিল ব্রিজের পাশে একটি ঝুঁপড়ি ঘরে পড়েছিলেন।

ঘটনাটি জানতে পেরে মনোয়ারা বেগমের উন্নত চিকিৎসার পাশাপাশি বৃদ্ধা মায়ের প্রতি অবহেলার কারণে পুলিশ কর্মকর্তা তিন ছেলে এবং শিক্ষিকা মেয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বরিশাল জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও ইউএনও’র সঙ্গে কথা বলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট শেখ মো. টিপু সুলতান। তার নির্দেশে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে ভর্তি করা হয় অসুস্থ মনোয়ারা বেগমকে। এরপর ঘটনাটি নিয়ে পুলিশ বিভাগ ও গণমাধ্যমে তোলপাড় শুরু হয়।