এবার প্রতিবন্ধী শিশু মৌসুমীর পাশে এসপি মিজান

তিন বছর আগে একটি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় বাম পায়ে মারাত্বক আঘাত পায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরশহরের পুনিয়াউট এলাকার সুবিধাবঞ্চিত শিশু মৌসুমী (০৯)। দুর্ঘটনার পর থেকেই স্বাভাবিকভাবে হাঁটাচলা করতে পরে না সে।সমবয়সীরা যখন দলবেঁধে মাঠে খেলতে যায় তখন মৌসুমীর মন ডুকরে কাঁদে। তবে এবার হয়তো হাঁটাচলার পাশাপাশি দৌঁড়াতেও পারবে মৌসুমী। কেননা তাকে সুস্থ করার দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নিয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান।

এসপি মিজানুর রহমানের নামটা দেশের অধিকাংশ মানুষের কাছেই এখন বেশ পরিচিত। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি শিশু পরিবারের ‘অনাথ’ হাবিবা আক্তারের অভিভাবকত্ব গ্রহণ ও তার রাজকীয় বিয়ের আয়োজন করে দেশজুড়ে ব্যপক আলোচিত হন এসপি মিজানুর রহমান। পুলিশিংয়ের পাশাপাশি সামাজিক নানা কর্মকাণ্ডে নিজেকে যুক্ত রাখেন তিনি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গণপরিবহনকে প্রতিবন্ধীবান্ধব করতে পরিবহনগুলোতে প্রতিবন্ধীদের জন্য আসন সংরক্ষণের একটি কর্মসূচিও হাতে নিয়েছেন তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২০১৫ সালের ৭ জুন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় যোগাদন করেন এসপি মিজানুর রহমান। যোগদানের পর ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন তিনি। সাধারণ মানুষকেও তার যুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন।

মাদক নির্মূলে অনেকটাই সফল জেলা পুলিশের এ শীর্ষ কর্মকর্তা পুলিশিং নয়, মানুষ হিসেবে মানুষের জন্য কিছু করার মাঝেই যেন বেশি তৃপ্তি পান। তার ব্যক্তিগত সহায়তায় জেলা শহরে বেশ কিছু সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাঠশালা গড়ে উঠেছে। নিজের কাজ থেকে একটু ফুরসত পেলেই এসব শিশুদের সঙ্গে সময় কাটান তিনি।

তবে এসপি মিজানুর রহমানের বেশিরভাগ কাজই প্রতিবন্ধীদেরকে নিয়ে। ভালো কিছু করার জন্য প্রতিবন্ধীদের অনুপ্রেরণা দেন তিনি। এসপি মিজানুর রহমানের সহযোগিতায় প্রতিবন্ধীদের নিয়ে গড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ড্রিম ফর ডিজঅ্যাবিলিটি ফাউন্ডেশনের নেতৃত্বে একটি প্রতিবন্ধী দল ভারতের দিল্লিতে ক্রিকেট সিরিজে অংশ নেয়। ওই সিরিজে ২-১ ব্যবধানে চ্যাম্পিয়নও হয় বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী ক্রিকেট দল।

প্রতিবন্ধী শিশু মৌসুমীকে সুস্থ্য করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন এসপি মিজানুর রহমান। আলোর পথে আনন্দ পাঠশালার শিক্ষার্থী মৌসুমীর কৃত্রিম পা লাগানোর ব্যাপারে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। দেশের চিকিৎসায় মৌসুমী সুস্থ না হলে প্রয়োজনে তাকে বিদেশে নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন এসপি মিজানুর রহমান।

আলোর পথে আনন্দ পাঠশালার সভাপতি হযরত আলী জানান, পরিবারের অভাব-অনটনের কারণে মৌসুমীর পরিবার তার সুচিকিৎসা করাতে পারছিলেন না। মৌসুমী নিজেও ভিক্ষাবৃত্তি করতো। পরে আমরা তাকে আনন্দ পাঠশালায় নিয়ে আসি। পাঠাশালায় মৌসুমীকে দেখে এসপি স্যার তাকে সুস্থ করে তোলার দায়িত্ব নেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মিজানুর রহমান বলেন, প্রতিবন্ধী বা বিশেষ শিশু আল্লাহ্ প্রদত্ত উপহার। তারা আমাদের সমাজেরই একটি অংশ। তবে এসব প্রতিবন্ধীদের অনেকেই অবহেলার চোখে দেখেন। গণপরিবহনে সুস্থ মানুষ আসনে বসে থাকেন অথচ প্রতিবন্ধীদের দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এটিও এক ধরণের অপরাধ।

আমরা ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে একটি প্রতিবন্ধীবান্ধব শহর হিসেবে গড়ে তুলতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। শিশু মৌসুমীকে সুস্থ করে তোলার জন্য আমরা চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেছি। প্রয়োজনে তাকে বিদেশেও পাঠানো হবে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ পুলিশে অনেক ভালো সদস্য আছেন। তারা প্রতিনিয়ত ভালো কাজ করে যাচ্ছেন।