এমপিদের কোটি টাকার গাড়িতে সংসদে জলকেলি

কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে রাজধানীর বেশিরভাগ এলাকার মতো বিশ্বের অনন্য স্থাপত্যকলা জাতীয় সংসদ ভবনও জলমগ্ন হয়েছে। বুধবারের বৃষ্টিতে সংসদের চারদিকের রাস্তার তিনটিই পানির নিচে চলে যায়। এমনকি সংসদের সামনে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ দিয়ে সংসদে প্রবেশ রাস্তাটিতেও হাঁটু পানি জমে যায়। আর সেই পানিতে জলকেলিতে মাতে এমপিদের শুল্কমুক্ত কোটায় আনা কোটি টাকার দামের গাড়ি।খবর জাগোনিউজের।

বুধবার জাতীয় সংসদে দুটি সংসদীয় কমিটির বৈঠক ছিল। এছাড়া অনেক এমপির অফিস সংসদ ভবন ও এমপি হোস্টেলে। এজন্য বৃষ্টি উপেক্ষা করে তাদের সংসদে প্রবেশ করতে হয়েছে। কিন্তু ন্যাম ফ্ল্যাট থেকেই শুরু হয়েছে জলজট। সংসদ এলাকায় প্রবেশের মুখে তা আরও বেড়ে যায়।

এমপিদের চার থেকে সাড়ে চার হাজার সিসির ডিজেলচালিত দামি বিলাসবহুল ল্যান্ডক্রুজার, প্যারাডো ও পাজেরো জিপ চলতে দেখা যায় সংসদের সামনের জলমগ্ন সড়কে।

ধবধবে সাদা, টকটকে লাল বা গাঢ় নীল রঙের এসব গাড়ি ছুটে চলার সময় দুই পাশের পানি ছিটকে পড়ে। দেখে মনে হয় যেন নানা রঙের জলপরী ছুটছে। অনেকে ওই একই পথে বারবার গাড়ি চালাচ্ছিলেন। জলের এমন নৃত্য দেখে ভেতরে থাকা আরোহীরাও উল্লাস প্রকাশ করছিলেন। কোনো কোনো গাড়ির চালক আবার গাড়ি ধুয়ে-মুছে নিচ্ছিলেন।

এমপির নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাদা ল্যান্ডক্রুজার গাড়ির চালক মুসলেম উদ্দিন জানান, সরকারি প্রতিশ্রুতি সম্পর্কিত সংসদী স্থায়ী কমিটির এক সদস্যের গাড়ি এটি। গাড়ি ধুয়ে নিতে বার বার একই রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন তিনি।

সরকারি প্রতিশ্রুতি সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি কাজী কেরামত আলী বৈঠক শেষ করে ওই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, ঢাকায় এমন বৃষ্টি খুব কমই হয়। এ বৃষ্টিতে সাধারণ মানুষের অনেক অসুবিধা হয়। প্রাণহানি ঘটে, ফসলের ক্ষতি হয়। তবুও আমরা অনেকে বৃষ্টি ও এর পানি ভালোবাসি। কারণ এটি আল্লার অশেষ নেয়ামত।

জানা গেছে, নবম সংসদে ৩৫০ জন এমপির মধ্যে ৩১৫ জনই শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির সুবিধা নিয়েছেন। আগেরবার সুযোগ পাননি এমন সব এমপিই চলতি জাতীয় সংসদে শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি এনেছেন। এমপিদের জন্য শুল্কসহ যাবতীয় করমুক্ত গাড়ি আমদানির প্রথম সুযোগ দেন সাবেক প্রেসিডেন্ট এইচ এম এরশাদ। তার শাসনামলে ১৯৮৮ সালের ২৪ মে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ এ নিয়ে সার্কুলার জারি করেছিল।

এদিকে, জাতীয় সংসদের সামনের রাস্তা মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, দুই পাশে মনিপুরীপাড়া ও মিরপুর রোড- পুরোটাই বুধবার সকালে জলমগ্ন ছিল। ফলে সংসদে কর্মরতদের ঢুকতে অনেক সমস্যা হয়। তবে যারা সংসদের বাস ব্যবহার করে অফিসে যান, তাদের তেমন কোনো সমস্যা হয়নি।

সংসদ এলাকায় এমন পানি জমা নিয়ে কথা হয় সংসদের প্রধান হুইপ আ স ম ফিরোজের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে জানান, বুধবার সকালে এমন বৃষ্টি হয়েছে যে ড্রেনেজ ব্যবস্থাও তা সামলাতে পারেনি। তবে আগামীতে যাতে এ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি না হয় সেজন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।