কমছে রেমিট্যান্স : ২০ ব্যাংকের সঙ্গে বসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স আহরণ ধারাবাহিকভাবে কমছে। এতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে দেশের অর্থনীতিতে। তাই রেমিট্যান্সপ্রবাহ কীভাবে বাড়ানো যায় তা নিয়ে কাজ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এর ধারাবাহিকতায় বুধবার রেমিট্যান্স আহরণকারী শীর্ষ ২০ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠকে বসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এদিকে রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়াতে চলতি অর্থবছর চারটি পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। এগুলো হলো- প্রবাস আয় প্রেরণে ব্যয় হ্রাস, বিদেশে কর্মরত ব্যাংকের শাখা ও এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোকে রেমিট্যান্স প্রেরণে দক্ষ করে তোলা, প্রবাসীরা যেসব দেশে কর্মরত, সেসব দেশের স্থানীয় ব্যাংকগুলোর সঙ্গে এ দেশের ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ড্রয়িং ব্যবস্থা জোরদারকরণ এবং প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স প্রেরণে উদ্বুদ্ধকরণ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, রেমিট্যান্সপ্রবাহ কমায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক উদ্বিগ্ন। এ কারণে দেশের রেমিট্যান্স আহরণকারী শীর্ষ ব্যাংকগুলোর সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগেও আলোচনা করেছে।

এছাড়া রেমিট্যান্স কমার কারণ জানতে বিভিন্ন দেশে খোঁজ নিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি রেমিট্যান্স পাঠানোর খরচ কীভাবে আরও কমানো যায় সে বিষয়েও চিন্তা ভাবনা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সব কিছুর উদ্দেশ্যই হলো রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়ানো। আর সেই লক্ষ্যেই রেমিট্যান্স আহরণকারী শীর্ষ ২০ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসছে কেন্দ্রীয় বাংক।

বিশ্লেষকরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্য থেকে প্রবাসী আয় সবচেয়ে বেশি আসছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অর্থনীতির অবস্থা খুব ভালো নেই।

এছাড়া সেসব দেশে মানি লন্ডারিং আইনও কড়াকড়ি। কোনো শ্রমিক যখন দেশে অর্থ পাঠাতে চায় তখন তাদের নিয়োগপত্রসহ অনেক কাগজপত্রই চাওয়া হয়। এসব কারণে অনেকেই বৈধ পথে অর্থ পাঠাতে নিরুৎসাহিত হন।

এছাড়া ডলার দাম ওঠানামা তো আছেই। এসব কারণে অনেকে হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাঠাচ্ছেন। সেই সঙ্গে বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানোর খরচও কিছুটা বেশি বলে মনে করছেন অনেকে। এসব কারণে রেমিট্যান্সপ্রবাহে গতি অনেকটা শ্লথ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রবাসীরা যে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠিয়েছেন, তা আগের অর্থবছরের তুলনায় ২১৬ কোটি ১৭ লাখ ডলার বা ১৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ কম।

তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রবাসীরা ১ হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ ডলার সমপরিমাণ মূল্যের রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন, যা এর আগের ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ছিল ১ হাজার ৪৯২ কোটি ৬২ লাখ মার্কিন ডলার। সে হিসাবে গত অর্থবছর রেমিট্যান্স কমেছে ২১৬ কোটি ১৭ লাখ ডলার বা ১৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ। আর ৮০ টাকা এক ডলার ধরলে টাকার অংকে রেমিট্যান্স কমেছে ১৭ হাজার ২৯৪ কোটি টাকা।

রেমিট্যান্সের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত দুই বছর ধারাবাহিক রেমিট্যান্স কমে সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরের গত পাঁচ বছরে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে। ২০১১-১২ অর্থবছর থেকে ধারাবাহিকভাবে বাড়লেও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা আশংকাজনক হারে কমে গেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, ২০১১-১২ অর্থবছর প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানোর পরিমাণ এক হাজার ২৮৪ কোটি ৩৪ লাখ ডলার ছিল। এরপর থেকে প্রতি বছরই প্রবাসী আয় ১৪ হাজার ডলারের উপরে ছিল। কিন্তু ২০১৬-১৭ অর্থবছরে হঠাৎ প্রবাসী আয় কমে ১ হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ ডলারে নেমে এসেছে, যা গত পাঁচ বছরের তুলনায় সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স।