কাইলির এই ঘটনা জেনে বহু মানুষের মন কেঁদেছে

কাইলির এই ঘটনা জেনে বহু মানুষের মন কেঁদেছে। দীর্ঘ ২২ বছর ধরে এক দুঃসহ শারীরিক প্রতিবন্ধকতা বয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। অ্যারিজোনার কাইলি মোয়াটস জন্মেছিলেন জরায়ু ছাড়া! এক বিরল প্রতিবন্ধকতায় তার জীবন এখন বিপর্যস্ত। চিকিৎসা নিয়ে স্বাভাবিক হতে চান। এর জন্য অর্থ সহায়তা তুলতেও শুরু করেছেন এই তরুণী।

এখন বয়স তার ২২ বছর। বুদ্ধি হওয়ার পরও বুঝতে পারেননি যে তার যৌনাঙ্গ নেই। বয়স যখন ১৮ তখনই দুঃস্বপ্নের মতো ধরা পড়ে। বারক্রোফ্ট টিভি এই নারীর বিরল অবস্থা নিয়ে প্রতিবেদন করেছে। সেখানে বলা হয়, এই সুদীর্ঘ সময়ে তার পিরিয়ড হয়নি। আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষার মাধ্যমে বিশেষজ্ঞরা বিস্ময়কর তথ্য পান।

মেয়েটির জরায়ু, জরায়ু মুখ কিংবা যোনি- কিছুই নেই! মিডিয়ায় এই সংবাদ জেনে অনেক মানুষ বিমর্ষ হয়েছেন। কেউ কেউ বিশ্বাসও করতে পারেননি- এমনটাও হয়!

নিজের ‘অকারণ’ অসহায়ত্ব নিয়ে কাইলি বলছেন, আমি নিজেকে পরিপূর্ণ নারী হিসাবে গ্রহণ করতে পারি না। তবে এখন পর্যন্ত নিজের কাছে নিজেকে মেনে নেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমার কী আছে আর কী নেই তা গ্রহণ করতে চাইছি।

এ রোগের নামটাও বেশ কঠিন। মাইয়ের-রোকিটানস্কি-কুস্টার-হুসার (এমআরকেএইচ) সিনড্রোমে আক্রান্ত তিনি। গণিতের হিসাবে প্রতি সাড়ে ৪ হাজার সদ্যোজাত কন্যার মধ্যে ১ জনের ভাগ্যে এমন ঘটতে পারে বলে জানায় আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব হেলথ। ভ্রূণের বিকাশের সময়ই এমন দুর্ভাগ্যজনক বাস্তবতার অবতারণা হয়। তখন জরায়ু, জরায়ু মুখ কিংবা যোনি সুষ্ঠুভাবে গঠিত হয় না। এই অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো আংশিকভাবে গড়ে ওঠে কিংবা একেবারেই গঠিত হয় না।

দুটো এক্স ক্রোমোজম রয়েছে অর্থাৎ জেনেটিকভাবে নারীদের দেহেই এমন ঘটার সম্ভাবনা থাকে। তবে তাদের ডিম্বাশয় সাধারণত সঠিকভাবেই কাজ করে যায়। এমনকি তাদের অভ্যন্তরীণ জননেন্দ্রীয়ও থাকতে পারে। সাধারণত, পিরিয়ডের আদর্শ সময় যথেষ্ট পেছানোর পরই এই বিরল অবস্থা ধরা পড়ে।

আমেরিকান ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর রেয়ার ডিজিসেস (এনওআরডি) জানায়, অনেক ক্ষেত্রে সার্জারি ছাড়াই ‘ভ্যাজাইনাল ডায়ালেটর’ পদ্ধতিতে যোনি তৈরি করা যায়। এটা এক ধরনের প্লাস্টিকের টিউব যার মাধ্যমে ‘সামান্য একটু থেকে যাওয়া’ ভ্যাজাইনাল টিস্যুকে বিস্তৃত করে দেওয়া হয়। আবার সার্জারির মাধ্যমেও যোনি তৈরি সম্ভব।

জানা গেছে, কাইলির জন্য পরবর্তী পদক্ষেপ হবে সার্জারির মাধ্যমে সমস্যা দূর করা। কিন্তু এর জন্য দরকার ১৫ হাজার ডলার। এত অর্থ নেই মেয়েটি বা তার পরিবারের কাছে। চিকিৎসকরা কসমেটিক সার্জারি কিংবা জেন্ডার রিঅ্যাসাইনমেন্ট পদ্ধতিতে যাবেন বলে জানিয়েছেন। এই অসহনীয় অবস্থা থেকে মুক্তির কর্মযজ্ঞ শুরুর আগ মুহূর্তে বললেন, এ অবস্থা সত্যিই হৃদয়বিদারক আমার জন্য।

তার বোন আমান্দা মোয়াটস ‘গো ফান্ড মি পেজ’ এর সহায়তা নিয়েছেন। সেখানে চিকিৎসাসহ অন্যান্য প্রয়োজনে অর্থ সহায়তা তোলা হয়। অবশ্য কাইলির অবস্থা জেনে ব্যাপক সাড়া দিচ্ছে মানুষজন। সহায়তার জন্য অনেকেই এগিয়ে এসেছেন। ইতিমধ্যে তার আর্থিক প্রয়োজনের লক্ষমাত্রাও ছাড়িয়ে- ১৬ হাজার ৯৯৭ ডলার উঠেছে তহবিলে।

এবার সার্জারি হচ্ছে কাইলির। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে আমি স্বাভাবিক হবো। অন্য সব মেয়েদের মতো স্বাভাবিক শরীর পাব আমি।

এমনিতে কাইলি কিন্তু স্বাভাবিক একটি মেয়ে। তার একজন প্রেমিকও আছে। সেও তাকে স্বাভাবিকভাবেই গ্রহণ করবে- এমন স্বপ্নেই বিভোর তিনি। আর যারা মানবিক সহায়তা নিয়ে এগিয়ে এসেছেন, তাদের কাছে কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা তার নেই বলে জানান তিনি।

সূত্র : লাইভ সায়েন্স