কাদের সাহেব আগে এমন ভাষায় কথা বলতেন না : ফখরুল

খালেদা কি মামলার ভয়ে পালিয়ে গেলেন- আওয়ামী লীগ নেতা ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছেন বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার আগে ওবায়দুল কাদের এই ভাষায় কথা বলতেন না।

বৃহস্পতিবার রাজধানীতে সরকারবিরোধী আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী এবং তাদের পরিবারকে সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠানে ফখরুল এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সময় সরকারবিরোধী আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত পাঁচটি পরিবারকে আর্থিক সহায়তা তুলে দেয়া হয়।

গত শনিবার খালেদা জিয়া অনির্দিষ্টকালের সফরে লন্ডন গেছেন। দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তিনি চিকিৎসা নিতে সে দেশে গেছেন। তবে তিনি কবে ফিরবেন, সে বিষয়ে কিছু জানাতে পারছেন না নেতারা।

সোমবার সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠানে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘একজন (তারেক রহমান) মামলার ভয়ে বিদেশ থেকে আসে না, সে কতদিন হয়ে গেল, কত বছর হয়ে গেল তিনি আর আসেন না। আরেকজন আবার টেমসনদীর পাড়ে গেলেন। উনি যাচ্ছেন এ ব্যাপারে আমাদের কোনো আপত্তি থাকার কথা না। কিন্তু শনিবার থেকে ফেসবুকে দেখছি, টুইটারে দেখছি বিভিন্ন স্ট্যাটাস, এত বেশি সময়ের জন্য একটা বড় দলের চেয়ারপারসন বিদেশে যাচ্ছেন, এখন জনশ্রুতি হচ্ছে তিনি কি মামলার ভয়ে পালিয়ে গেলেন? তিনি কি মামলার ভয়ে ফিরে আসবেন না?’।

কাদেরের এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ফখরুল বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া পালিয়ে গেছেন কোনো আহাম্মকও বিশ্বাস করবে না’। তিনি বলেন, ‘ওবায়দুল কাদেরকে একজন স্বজ্জন রাজনীতিবিদ মনে করি। কিন্তু সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়ার আগে এমন ভাষায় তিনি বলতেন না। আমরা বুঝি না কেন তার এই পরিবর্তন।’

‘তাকে (কাদের) আমরা সজ্জন রাজনীতিবীদ মনে করি। সম্ভবত তিনি সাহিত্যের ছাত্র ছিলেন, আমি নিশ্চিত না। তবে তিনি নাট্যচর্চাতেও বিশেষভাবে পারদর্শী। সেই কারণে তারমধ্যে একটা পরিশীলিত রাজনৈতিক সংস্কৃতি দেখার প্রত্যাশায় ছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তার এই পরিবর্তনটা কেন। সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে তিনি এমন ভাষায় কথা বলছেন যা আগে তার কাছ থেকে শুনিনি। আমরা প্রত্যাশা করি না এত বড় একটি রাজনৈতিক দল, একটি পুরানো দলের সাধারণ সম্পাদকের এমন ভাষায় কথা বলবেন। সমালোচনা তো হবেই। আমরা রাজনীতি করি। আমরা জনগণের সামনে আছি তারা আমাদের চুলচেরা বিশ্লেষণ করবে।’

ফখরুল বলেন, ‘আমি সাধারণত কারও ব্যক্তিগত বক্তব্যের জবাব দেই না। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের কোনো ব্যক্তি নেতার বক্তব্যের জবাব দিতে চাই না। কিন্তু দলটির সম্মানিত সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেবের কিছু বক্তব্যের জবাব না দিয়ে পারছি না’-বলেন ফখরুল।

‘অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো আমাদের সমালোচনা করবে। কিন্তু তার ভাষাটা কি হবে ব্যক্তিগত আক্রমণ? মিথ্যা কথা বলে চরিত্রহনন? এটা ওই পর্যায়ে যায় না। বেগম খালেদা জিয়া পালিয়ে গেছেন, এটা তো আহাম্মকও বিশ্বাস করবে না।’

‘অতীত বলে খালেদা জিয়ার সবচেয়ে বেশি ত্যাগ গণতন্ত্রের জন্য। বাংলাদেশ সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে যদি সবথেকে বেশি ত্যাগ স্বীকার করে থাকেন তাহলে তিনি (খালেদা জিয়া) করেছেন। তিনি আপোষহীন নেত্রী উপাধি পেয়েছেন। তিনি বন্দুকের নল নিয়ে বা সোনার চামচ মুখে ক্ষমতায় আসেননি। রাজপথে ছাত্র জনগণকে সঙ্গে নিয়ে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে করতে এসেছেন। ৯০ এর গণঅভ্যুত্থান, পরবর্তীকালে গণতন্ত্রের যতগুলো ভিত্তি স্থাপন তিনি করেছেন।’

সংসদীয় গণতন্ত্রের জন্যও খালেদা জিয়ার ব্যাপক অবদান রয়েছে বলে দাবি করেন ফখরুল। বলেন, আওয়ামী লীগের দাবি অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিও তিনি পূরণ করেছিলেন। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে খালেদা জিয়াই নির্বাচন দিতে বাধ্য করেছেন বলে দাবি করে ফখরুল।

ওই সরকারের আমলে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বিদেশ গেলেও খালেদা জিয়া তা করেননি বলেও মন্তব্য করেন ফখরুল। বলেন, ‘অঙ্গের চিকিৎসার কথা বলে বেগম খালেদা জিয়া বিদেশে যাননি। দেশেই ছিলেন। বলেছিলেন, আমি দেশ ছাড়া কোথাও যাবো না। যারা আজকে এই ধরণের কথা বলছেন। আমরা ইউটিউবে অনেক ভিডিও দেখতে পাই। সত্য মিথ্যা বলতে পারব না, তবে দেখা যায় এরা কী ধরণের বিবৃতি দিচ্ছিলেন গোয়েন্দা সংস্থাকে। যারা জেলে ছিলেন তাদের কেউ কেউ কান ধরে উঠবস করে বলেছিলেন, ‘আমরা আর কোনোদিন রাজনীতি করব না’।

‘সুতরাং এই ধরণের কথা বলার আগে প্রত্যেকের উচিত আয়নায় নিজেদের চেহারা দেখা। এবং একথা চিন্তা করা যে অতীতে আমি যে ধরণের কথা বলেছি তার সঙ্গে আমরা এখনকার কোনো সামঞ্জস্য আছে কি না।’

এই ধরনের বক্তব্য দেয়ায় ক্ষমাও চান বিএনপি মহাসচিব। বলেন, ‘আমি আবারও ক্ষমা চাইতে চাই কারণ এইভাবে আমি কথা বলতে চাইনি এবং অভ্যাসও নাই। কিন্তু বারবার আমার নেত্রীকে অন্যায়ভাবে আঘাত করে কথা বলবে আর আমরা যদি চুপ থাকি তাহলে সত্যের প্রতি অপলাপ হবে এবং দায়িত্ব থেকে দূরে থাকা হবে। এই সমস্ত করে মিথ্যা প্রচারণা করে জনগণকে বিভ্রান্ত করে বাংলাদেশের ক্ষতি করবেন না। এনাফ ইজ এনাফ।’

নির্বাচন নিয়ে আলোচনায় বসতে সরকারি দলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ফখরুল বলেন, ‘আপনারা যে ভয় পাচ্ছেন ক্ষমতা ছাড়লে পালানোর সুযোগ পাবেন না, সেটার নিশ্চয়তা দিচ্ছি জনগণ আপনাদের সবকিছু ঠিক রাখবে।’

‘দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করবে। আপনাদের কল্যাণ হবে। অন্যথায় জনগণ আপনাদের পালাতে দেবে না’-বলেন ফখরুল।

নির্বাচনের মধ্য দিয়েই আওয়ামী লীগকে নির্মূল করতে হবে জানিয়ে বিএনপি নেতা বলেন, ‘যাতে আওয়ামী লীগ জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে আর কোনদিন ক্ষমতায় না আসতে পারে। তাদের কাছে বন্দুকের শক্তি আছে। আমরা জনগণের শক্তি দিয়ে তাদের পরাহুত করব।’