কে এই ‘জঙ্গি’ সাইফুল?

জাতীয় শোক দিবসে রাজধানীর পান্থপথে হোটেল ওলিও’তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ‘অপারেশন আগস্ট বাইট’- এ নিহত হয়েছে ‘জঙ্গি’ সাইফুল ইসলাম। পুলিশের দাবি, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শোক মিছিলে হামলার পরিকল্পনা ছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সে পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দিয়েছে।

শোক দিবসকে ঘিরে এমন হামলার পরিকল্পনাকারী কে এই সাইফুল ইসলাম, কি তার পরিচয়, কি ছিল তার উদ্দেশ্য? এ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে।

সাইফুল ইসলামের গ্রামের বাড়িতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার সাহস ইউনিয়নের নোয়াকাঠি গ্রামে তার বাড়ি। বাবার নাম আবুল খয়ের মোল্লা। তাকে ইতিমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।

সাইফুলের বাবা নোয়াকাটি গ্রামে মাঠের হাট মসজিদের ইমাম। সাইফুলের মা বাক্‌প্রতিবন্ধী। আবুল খায়েরের এক ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে সাইফুল সবার বড়। পাইকগাছার একটি মাদ্রাসা থেকে হাফিজি পাস করেন। ডুমুরিয়ার উলা দাখিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল (এসএসসি’র সমমান) পাস করার পর খুলনা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে আলিম পাস করেন। খুলনার বিএল কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান চতুর্থ বর্ষের ছাত্র তিনি। পড়াশোনার জন্য খুলনার একটি মেসে থাকতেন। বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের দাখিল পরীক্ষার সাইফুলের রেজিস্ট্রেশন কার্ডে তার জন্মতারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ১৯৯৬ সালের ১৩ অক্টোবর। সে হিসাবে তার বয়স প্রায় ২১ বছর।

সাইফুলের বোন সাদিয়া খাতুন যুগান্তরকে জানান, অভাবের সংসারে ভাইসহ দু’বোনের পড়াশোনার খরচ জোগাতে হিমশিম খেতেন তার পিতা। এ জন্য বেশ কিছুদিন যাবত চাকুরী খুঁজছিলেন তার ভাই। খুলনার নেভি কলোনীর একটি মেসে থেকে পড়াশোনা করত সাইফুল। গেল শুক্রবার সে বাড়িতে যায়। সেসময় সে জানায়-চাকুরী খোঁজার জন্য সে ঢাকায় যাবে। এই কথা বলে ওইদিনই সে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। তারা জানত না যে তার ভাই জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ত। মঙ্গলবার সকালে পুলিশ বাড়িতে গিয়ে তার পিতাকে আটক করে খানায় নিয়ে গেলে তবেই পরিবারের সদস্যরা বুঝতে পারে যে সাইফুল ঢাকায় নিহত হয়েছে।

রোববারও সাইফুল মোবাইল ফোনে পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করেছে বলে দাবি করেন সাদিয়া। সোমবার তার বাড়ি ফিরে আসার কথা ছিল তার।

নোয়াকাটি গ্রামের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাড়ি এলে মানুষের সঙ্গে খুব কম মিশতেন সাইফুল। কারও সঙ্গে তেমন কথা বলতেন না। ঘরে একাই থাকতেন তিনি। আচরণে বেশ ভদ্র ও নম্র ছিলেন। কিন্তু তিনি ছাত্রশিবির করতেন কি না—এ ব্যাপারে কোনো তথ্য এলাকাবাসীর কাছ নেই।

উলা গ্রামের বাসিন্দা আরিফ ইসলাম জানান, আবুল খায়ের তার প্রতিবেশী। জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে এর আগে স্থানীয় নোয়াকাঠি মোল্লপাড়া জামে মসজিদের ইমাম পদ থেকে খায়েরকে চাকুরিচ্যুৎ করা হয়েছিল। এরপর খয়ের মাঠেরহাট জামে মসজিদে ইমামতি করতেন। জামায়াতের রাজনীতি করা নিয়ে বাবা ও ছেলের মধ্যে মতবিরোধ ছিল।

ডুমুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিল হোসেন জানান, ‘জঙ্গি’ সাইফুল খুলনা বিএল কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র। ৮ দিন আগে চাকরির কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয় সে।

তার দাবি, নিহত জঙ্গি সাইফুলের বাবা স্থানীয় ইউনিয়ন জামায়াত নেতা। তিনি ওই এলাকার নবাটি মসজিদের ইমাম। ইউনিয়ন জামায়াতের কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

এদিকে মঙ্গলবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) এ কে এম শহীদুল হক বলেন, হোটেল ওলিও’তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে নিহত ‘জঙ্গি’ ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শোক মিছিলে হামলার পরিকল্পনা ছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সে পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দিয়েছে।

আইজিপির দাবি, এক সময় ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল সাইফুল।

এর আগে সোমবার দিনগত রাত ৩টার দিকে ‘জঙ্গিদের’ অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার পর ওই হোটেলটির চার পাশ ঘিরে রাখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

সকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খান কামাল বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সাংবাদিকদের হোটেল ওলিওতে জঙ্গি অবস্থানের কথা নিশ্চিত করেন।

মঙ্গলবার পৌনে ১০টার দিকে হোটেলটিতে ‘অপারেশন আগস্ট বাইট’ পরিচালনা করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অভিযানে অংশ নেয় পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট, বিশেষায়িত বাহিনী সোয়াত ও সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিটের সদস্যরা।

অপারেশনের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানায়, হোটেলটির ৩০১ নম্বর কক্ষে নিহত ‘জঙ্গি’ আত্মঘাতী হয়েছে।