কে এই মতি যাকে গুলশানে বাড়ি কিনে দিতে চেয়েছিলেন সালমান শাহ!

একেবারে সাদাসিদে মানুষ মতি। বর্তমানে এফডিসিতে প্রডাকশন বয়ের কাজ করে। প্রথম দেখাতে অনেকেই হয়তো পাত্তা দিতে চাইবে না। মাথার আগুছালো চুলের মতো নিজেও আগুছালো মানুষ। প্রয়াত জনপ্রিয় নায়ক সালমান শাহ’র সাথে ছিলো তার দারুণ সখ্যতা। এ নায়কের কথা জিজ্ঞেস করতেই মুখে খই ফুটে তার। স্মৃতির ঝাঁপি খুলে বসে। নানা স্মৃতি রোমন্থন করেন তিনি। তার কথার শ্রোতা যেই হন ক্ষনিকের জন্য সে সালমান শাহতে ডুবে যাবেন নিশ্চিত। সামনে দাঁড়িয়ে যাবে বিনয়ী এক সুপারস্টারের প্রকাণ্ড মূর্তি।

মাত্র পাঁচ বছর বয়সে এফডিসিতে পা রাখেন মতি। পুরো নাম মোঃ মতিউর রহমান মতি। এখন তার বয়স ৩৮। আঙ্গুলের কর গুণা হিসেব মতে চিত্রপাড়ায় তার বয়স ৩৩ বছর। সালমান শাহ’র সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কেমন ছিলো? জানতে চাইলেই চোখ ছলছল করে উঠে তার। হয়ে উঠে অতি উৎসাহী। কোন স্মৃতি থেকে কোনটা বলবেন! স্বপ্নের এ নায়ককে নিয়ে স্মৃতির ভান্ডার যে বেশ সমৃদ্ধ তার।

মতি বলেন, “আমি যখন অনেক ছোট তখন থেকেই সালমান শাহ’র কাছে কাছে থাকার সুযোগ পাই। তার ব্যবহারে কখনও বুঝতে পারিনি তিনি এতোবড় নায়ক। আমাকে দেখলেই তিনি আদর করতেন। ওই সময় আমি গোসল টোসল কম করতাম। তিনি জোর করে ধরে আমাকে গোসল করিয়ে দিতেন। নিজের হাতে মাথা শরীর মুছে দিতেন। গল্প করতেন। শুটিংয়ে আমার সাথেই ঘুমাতেন।”

সালমান শাহ’র কোন জিনিষটা তখন সবচেয়ে বেশি দৃষ্টিকটু ছিল? জানতে চাইলে মতি বলেন, “গাড়ি চালানো। তার গাড়ি চালানো দেখলে সবাই ভয় পেতো। তখন তো সবাই বলেই দিতো সালমান শাহ একদিন গাড়ি অ্যাকসিডেন্টেই মারা যাবেন।”

তিনি আরও বলেন, “দেখতে সুন্দর ছিলাম না আমি। থাকতাম অপরিস্কার হয়ে। তবুও দেখা হলেই বুকে নিতেন। আদর করতেন। ঢাকার গুলশানে আমাকে একটা বাড়ি কিনে দিতে চেয়েছিলেন তিনি। মজা করে না, সত্যিই। তখন ‘আনন্দ অশ্রু’ ছবির শুটিং করছিলেন তিনি। বলেছিলেন, ছবিটি রিলিজ হওয়ার পর তোকে গুলশানে (বর্তমানে ওয়াটারল্যান্ডের পিছনে) জায়গা কিনে বাড়ি করে দেবো। সেটা আর হয়নি। আনন্দ অশ্রু ছবির মুক্তি পাওয়ার আগেই তো সে চলে গেলেন। আমার আর ঢাকায় বাড়ি হলো না।”

মতির ভাষ্যমতে, সালমান শাহ’র পরে অনেক নায়ক এলেন গেলেন তার ধারের কাছেও কাউকে দেখলাম না। এখনকার নায়করা তো দুটি ছবি করেই অনেক বড় হয়ে যান। আমরা তাদের চোখে পড়িনা। অথচ সালমান শাহ কত্ত বড় নায়ক এখনও কত জনপ্রিয়তা তার। তবুও কখনও আমাদের দূরে ঠেলে দেননি। বুকে নিয়েছেন। আমাদের সুখের দুখের খবর নিয়েছেন।”