কোন প্রাণিরা নিজেদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি খুনাখুনি করে?

টিভিতে কোনো ওয়াইল্ডলাইফ শো দেখলেই আপনি দেখতে পাবেন এক প্রজাতির কোনো পশু অন্য প্রজাতির পশুকে হত্যা করছে। তবে আন্তঃপ্রজাতি হত্যাকাণ্ডই নয় শুধু বরং বন্য পশুরা নিজেদের প্রজাতির সদস্যদেরকেও হত্যা করে।

পোকামাকড় এবং মাকড়সাদের মধ্যে সেক্সুয়াল ক্যানিবালিজম অর্থাৎ যৌন মিলনের আগে নারী সদস্য কর্তৃক পুরুষ সদস্যকে খেয়ে ফেলার মতো ঘটনাও ঘটে। চীনের বড় পা ওয়ালা একটি কীট এবং সাদা বিধবা নামের মাকড়সাদের মধ্যে এই ঘটনা দেখা যায়। আর গর্ভে থাকা অবস্থায়ই হাঙ্গরের বাচ্চারা তাদের সহদোরদের খেয়ে ফেলে!

তবে পশুরা শুধু খাওয়ার জন্যই অপর পশুদের হত্যা করে না। সিচলিডস এবং বেটাস নামের দুটি প্রজাতির মাছ আছে যারা তাদের বিচরণের এলাকায় অন্যদের প্রবেশ করতে দেয় না; আসলে মেরে ফেলে।

পশুদের মধ্যে সঙ্গীনির জন্যও খুনাখুনি করতে দেখা যায়। হামিংবার্ড প্রজাতির পাখিদের মধ্যে নারী সঙ্গীনিকে নিয়ে পুরুষদের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক মারামারি দেখা যায়। যার ফলে খুনাখুনিও ঘটে যায়। ছুরির মতো ঠোঁট দিয়ে তারা পরস্পরকে আঘাত করে হত্যা করে। পশ্চিমা ব্যাঙদের একটি প্রজাতি আছে যাদের মধ্যে নারী সঙ্গীনির দেহ দখল করতে গিয়ে তাকে পানিতে চুবিয়ে মেরে ফেলার মতো ঘটনা ঘটে।

একসঙ্গে কয়েকটি পুরুষ ব্যাঙ্গ গিয়ে একটি নারীর দেহের ওপর চেপে বসে আর নারীটি সেই ভারে পানিতে ডুবে মরে।
২০১৬ সালে স্পেনের গবেষকরা মানুষ সহ ১ হাজার ২৪টি স্তন্যপায়ী প্রজাতির প্রাণির মধ্যে ৪০ লাখ মৃত্যুর ঘটনা বিশ্লেষণ করেন।

এর মধ্যে ২০১৫ সালে শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই ১৬ হাজার মানুষকে হত্যার ঘটনা ঘটে। এই হত্যাকাণ্ডগুলোর কারণ ছিল হিংসা, টাকা-পয়সা নিয়ে ঝগড়া-বিবাদ এবং ভিন্ন ধরনের লোকদের প্রতি ঘৃণা।

তবে গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাণি জগতের মধ্যে নিজেদের প্রজাতির সদস্যদেরকে হত্যা করার ক্ষেত্রে শীর্ষ ৩০টি প্রজাতির মধ্যেও মানুষদের স্থান নেই। মানুষ ছাড়া নেকড়ে, সিংহ এবং বানর ও লেমুর সহ অন্যান্য প্রাইমেটরা আরো বেশি হারে নিজেদের মধ্যে খুনাখুনি করে।

গবেষণায় আরো দেখা গেছে, যাদেরকে আপাত শান্ত বলে মনে করা হয় এমন প্রজাতি বাস্তবে অনেক বেশি খুনি।

আমেরিকার লম্বা লেজের চিনসিলাস, স্থল কাঠবিড়াল এবং বন্য ঘোড়া, গাজেল এবং হরিণসহ বেশ কয়েকটি খুরওয়ালা প্রাণিও পরস্পরকে ব্যাপক সংখ্যায় হত্যা করে। এই প্রজাতিগুলো পরস্পরকে হত্যাকারী প্রাণিদের তালিকার শীর্ষ ৫০ এর মধ্যে রয়েছে।

নিজেদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি খুনাখুনি করা প্রজাতি হলো মিরকাত। এদের ২০ শতাংশেরই মৃত্যু হয় নিজের প্রজাতির কোনো সদস্যের হাতে।

যেসব প্রজাতি নিয়ে গবেষণা চালানো হয়েছে তার মধ্যে অর্ধেকই নিজেদের প্রজাতির সদস্যদেরকে হত্যা করে। আর স্তন্যপায়ীদের মধ্যে প্রাইমেটরাই নিজেদের প্রজাতির সদস্যদের বেশি খুন করে। অন্যান্য স্তন্যপায়ীদের তুলনায় প্রাইমেটরা নিজের প্রজাতির সদস্যদের আটগুন বেশি হারে খুন করে।

তবে মানুষ এবং অন্যান্য স্তন্যপায়ীদের মধ্যে খুনের পরিবেশ-পরিস্থিতি পুরোপুরি আলাদা থাকে।

বেশিরভাগ স্তন্যপায়ীর মধ্যে বেশিরভাগ খুনের ঘটনা ঘটে শিশু শাবককে হত্যার মধ্য দিয়ে। মিরকাত প্রজাতির প্রাণিদের মধ্যে কর্তৃত্ববান নারী সদস্যরা তাদের অধীনস্থ নারীদের শাবক বা ছানাকে হত্যা করে।

স্তন্যপায়ী প্রাণিদের মধ্যে মানুষ সহ নেকড়ে, সিংহ এবং ডোরাকাটা হায়েনারা নিয়মিতভাবে নিজের প্রজাতির প্রাপ্তবয়স্ক সদস্যদের হত্যা করে। আর এই ক্ষুদ্র গ্রুপটির মধ্যে মানুষেরা এগিয়ে আছে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জৈবিক নৃতাত্ত্বিক রিচার্ড র‌্যাঙহাম (Richard Wrangham) বলেন, ‘নিজের প্রজাতির প্রাপ্ত বয়স্ক সদস্যদেরকে হত্যা করার ব্যাপারে মানুষেরা সত্যিই একটু ব্যতিক্রম। ’

সূত্র: লাইভ সায়েন্স