কোহলির মাথা ঘুরে গেছে!

তিনি বরাবরই সাদাকে সাদা এবং কালোকে কালো বলতে পছন্দ করেন। তাঁর মতো ঠোঁটকাটা মানুষ খুবই কম দেখা যায়। মুখের ওপর তিনি বলে দেন। এটাই তাঁর স্বভাব। ভারতীয় দলের কোচের পদ থেকে অনিল কুম্বলের সরে যাওয়ার গোটা ঘটনায় তিনি ক্ষিপ্ত।

বললেন, ‘এটা ভারতীয় ক্রিকেটের পক্ষে একদম ভাল হল না। পরে ভুগতে হবে ভারতীয় ক্রিকেটকে। ’ ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলির কড়া সমালোচনা করলেন বিষাণ সিং বেদি।

জানতে চাওয়া হয়, কী বলবেন গোটা ব্যাপারটা দেখে? অাপনি অনিল কুম্বলের জায়গায় থাকলে কী করতেন? এভাবে সরে যেতেন?

বিষাণ সিং বেদি বলেন, অবশ্যই সরে যেতাম। কুম্বলে অতি ভদ্র ছেলে বলেই এতদিন সহ্য করেছে। আমার মতো মানুষ হলে কবেই সব কিছু ছেড়ে বেরিয়ে যেতাম। এটা কখনও হয় না কি! কোনও সভ্য দেশে এমনটা কখনও হয়েছে? কেউ দেখাতে পারবেন? শুধু ক্যাপ্টেনের পছন্দ নয় বলে সফল কোচকে সরে যেতে হবে? এটা কী করে সম্ভব?

কোহলির কোচ হিসেবে কুম্বলেকে পছন্দ না–‌ই হতে পারে। তাই বলে কোহলি ঝামেলাটা জিইয়ে রাখবে? এটা কিছুতেই সমর্থনযোগ্য নয়। আমি কোহলিকে স্নেহ করি। কিন্তু কোহলির এই আচরণ মেনে নিতে পারা যায় না। পারছিও না।

কী করা উচিত ছিল বলে মনে হয়? এমন প্রশ্নের জবাবে বেদি বলেন, বোর্ড কর্তাদের উচিত ছিল দু’জনকেই সামনাসামনি বসিয়ে গোটা ব্যাপারটা মিটিয়ে নেওয়া। কোহলির কোথায় সমস্যা হচ্ছে কুম্বলেকে নিয়ে, তা জানা। আবার কুম্বলের কোনও সমস্যা আছে কিনা সেটা জানা। কিছুই তো করল না বোর্ড। কুম্বলে কোথায় খারাপ পারফরমেন্স করেছে কোচ হিসেবে? কেউ বলতে পারবে? কোহলির পছন্দ নয় কুম্বলেকে। কোহলি নিজের বুকে হাত রেখে বলতে পারবে কুম্বলে ব্যর্থ? না, পারবে না। সব দেখে আমার মনে হচ্ছে এ যেন যাবতীয় সভ্যতাকে জানলার বাইরে ছুঁড়ে ফেলা হল। এটা ঠিক হল না।

তিন সদস্যের কোচ বাছাই কমিটি তো বলেছিল যে আরও এক বছরের জন্য কুম্বলকে রেখে দেওয়ার কথা। তা সত্ত্বেও কুম্বলে থাকতে চাইলেন না। ইস্তফা দিয়ে দিলেন।

বেদি: দেবে না তো কী করবে? যে কোনও মানুষ যার আত্মসম্মান রয়েছে তার পক্ষে এমন পরিস্থিতিতে থাকা সম্ভব নয়। আত্মসম্মান যাদের রয়েছে তারা কেউই থাকতে পারত না। আমি যতটুকু কুম্বলেকে চিনি–জানি ওর মধ্যে আত্মসম্মানবোধ প্রবল। রীতিমতো ভদ্র ছেলে। কোথাও কখনও কোনও বির্তকে জড়ায়নি। ও মানুষকে সম্মান করতে জানে। কুম্বলে সরে গিয়ে ঠিক কাজ করেছে। এরকম দমবন্ধ পরিস্থিতির সঙ্গে কম্প্রোমাইজ করা উচিত হত না।

কোহলির কেন পছন্দ হল না? যে কোচের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এত সাফল্য এল গত একবছরে সেই কোচকেই না–পছন্দ?

বেদি: কোহলির মাথাটা ঘুরে গেছে। নিজেকে ভাবছে সব কিছুর ঊর্ধ্বে। নিজেকে আরও কাম ডাউন করতে হবে। দুটো মানুষের মতের অমিল হতেই পারে। ও কোচের কাছে ঠিক কী চায় সেটা কি কখনও কুম্বলেকে বলেছে? জানি না কখনও বলেছে কি না। যদি বলত তাহলে কুম্বলে ঠিক শুনত। ভাবত। নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করে ফেলার চেষ্টা করত। আমি জানি এটাই করত কুম্বলে। নিশ্চুপে কাজ করে যাওয়ার ছেলে।

ঠিক কথাই। কখনই প্রচারের আলোয় আসেননি কুম্বলে। এ ব্যাপারে কী বলবেন?

বেদি: এই জন্যই কুম্বলে বাকিদের থেকে সবসময় আলাদা। খেলোয়াড়ি জীবনেও দেখেছি কখনও প্রচারের আলোয় আসেনি। কোচ থাকাকালীন সময় তো বটেই, সবসময় ক্যাপ্টেন হিসেবে বিরাট কোহলিকেই এগিয়ে দিয়েছে। কখনও বলেনি আমি এই করেছি আমি এই করেছি। সবসময় ক্যাপ্টেনকেই প্রাধান্য দিয়েছে। এরকম কোচ আর পাবে ভারত কখনও? বোর্ড কর্তারা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য কোহলিকে এই সুযোগটা দিল। শুরুতেই বোর্ড যদি ক্যাপ্টেনকে বলে দিতে পারত যে কোচ হিসেবে কুম্বলেই থাকবে আরও বছরখানেক। অন্য কথা নয়। তাহলে বিরাট বাধ্য হত শুনতে। সেটা করেনি বোর্ড।

এখন তো বোঝাই যাচ্ছে কুম্বলেকে সরিেয় দেওয়ার পরিকল্পনা তলায় তলায় চলছিল বলেই বোর্ড হঠাৎ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগেই কোচের বিজ্ঞাপন দিয়ে দিল। কী বলবেন?

বেদি: একদম তাই। অনেক আগে থেকেই কোহলির বক্তব্য শুনে বোর্ড তলায় তলায় এমন একটা পরিবেশ তৈরি করতে চেয়েছিল যে কুম্বলে বাধ্য হয়ে নিজে কোচের পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেয়। সব কিছুই পরিকল্পনামাফিক হয়েছে। সেজন্য সব কিছু দেখেশুনে খুব বিরক্ত লাগছে। কুম্বলের সঙ্গে যা করা হয়েছে তা ঠিক হল না। এটা অনুচিত হয়েছে। ভাল হল না।

এরপর যিনিই ভারতীয় দলের কোচ হবেন তার মাথাতেও তো ঘুরতে পারে যে ক্যাপ্টেনের পছন্দ না হলেই সরে যেতে হবে। যতই সাফল্য থাকুক না কেন?

বেদি: দেখুন না এবার কত কিছু হবে ভারতীয় ক্রিকেটে। গত বছরে দলটা একটা জায়গায় পৌঁছে গিয়েছিল। এবার কোনও কিছু নিয়ে মতানৈক্য হলেই সঙ্ঘাত বাড়বে। তখন দেখব বোর্ড কর্তারা কী করেন? কোথায় পালান? আমি বলছি কেউ তখন কিন্তু ক্যাপ্টেনের পাশে থাকবে না। কোহলির এগুলো বোঝা দরকার। শুধু আবেগ দিয়ে চলে না। ভাবতে হবে, বুঝতে হবে। সত্যি, বারবার ভাবলে খুব, খুব খারাপ লাগছে। কুম্বলের সঙ্গে ভীষণ অন্যায় করা হল। ‌‌‌

সূত্র: আজকাল