বর্তমান প্রশাসনের সুমতি

ক্লাসে ফিরে যাবার অপেক্ষায় বেরোবির সোহেল রানা

এইচ.এম নুর আলম, বেরোবি প্রতিনিধি : ক্লাসে ফিরে যাবার অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী সোহেল রানা। গত দুই বছরে ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দিতে হাইকোর্টের তিনবার দেয়া আদেশ অমান্য করেন সাবেক উপাচার্যের প্রশাসন।

সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইব্রাহীম কবীর বলেন, উপাচার্য (ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, বিটিএফও)মহোদয় সোহেল রানার শিক্ষা কার্যক্রম পুনরায় চালুর অনুমতি প্রদান করেছেন। তার ছাত্রত্ব ফিরে পেতে আর কোনো বাধা নেই। অতিসত্ত্বর এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বিভাগে চিঠি প্রেরণ করা হবে।

তিনি আরও বলেন, সোহেলের তৃতীয় বর্ষের প্রথম সেমিস্টারের স্থগিত রাখা ফল প্রকাশসহ পরবর্তী সেমিস্টারে ভর্তির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

তবে গণিত বিভাগের বিভাগীয় প্রধান কমলেশ চন্দ্র বলেন, আমাদের কাছে এখনো তাঁর ব্যাপারে কোনো আদেশ বা নির্দেশনা আসে নি।আসলে কার্যকর করা হবে। তিনি আরো বলেন, সোহেল রানার ৩য় বর্ষ ২য় সেমিস্টারের চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফল আটকে রয়েছে। কবে নাগাদ ঐ ফলাফল প্রদান করা হবে এবং কবে নাগাদ সে ক্লাস করতে পারবে-এ সংক্রান্ত ব্যাপার প্রশাসনই বলতে পারবে।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও পিটিশন সুত্রে জানা যায়, মো: সোহেল রানা ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয়ে ৩য় বর্ষ ১ম সেমিস্টারে উত্তীর্ণ হয়। সে গুরুতর অসুস্থ থাকার কারনে দীর্ঘ ২ বছর ক্লাসে উপস্থিত থাকতে না পারায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাঁর ভর্তি বাতিল করে এবং ৩য় বর্ষ ১ম সেমিস্টারের ফলাফল স্থগিত করে দেয়।

ফলে শিক্ষার্থী সোহেল হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করলে কোর্ট গত বছরের ১৪ অক্টোবর তাঁর ৩য় বর্ষ ১ম সেমিস্টার পরীক্ষার ফলাফল প্রদান করে ৩য় বর্ষ ২য় সেমিস্টারে ভর্তির কেনো সুযোগ প্রদান করা হবে না- এই মর্মে বেরোবির সেই সময়ের উপাচার্য ড. একে এম নূর-উন-নবী ,রেজিস্ট্রার(বর্তমান), বিভাগীয় প্রধান, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দপ্তরসহ ছয়জনের উপর রুল নিশি জারী করে হাইকোর্ট। প্রত্যেককে রুল জারির চার সপ্তাহের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়। এরপর ২য় দফায় চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও রেজিস্টারকে ভর্তি করে নেওয়ার জন্য দুই সপ্তাহ সময় বেঁধে দেয় হাইকোর্টের বিচারিক আদালত। ৩য় দফায় ২৯ মার্চ কোনো কারন ছাড়াই ঐ শিক্ষার্থীকে ৩য় বর্ষ ১ম সেমিস্টারের ফলাফল প্রদানও ২য় সেমিস্টারে ভর্তিগ্রহণের নির্দেশ প্রদান করেন হাইকোর্ট।

এরপর গত বছরের ২৫ এপ্রিল সোহেল রানা আদালতের আদেশের সকলকপিসহ আবেদন পত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টারের দপ্তরে প্রদান করেন।

তবে সোহেল রানা তাঁর রংপুর কোতয়ালি থানায় দায়েরকৃত জিডিতে (যার নং-১৮৭৮,তাং-২৯/৪/১৬) উল্লেখ করেন, গত বছরের ২০ এপ্রিল থেকে পরের দিন ২১ এপ্রিল বিকাল ৪ টা পর্যন্ত তাঁকে রেজিস্টারের দপ্তরের এক কর্মকর্তার নেতৃত্বে কয়েকজন কর্মকর্তা তাকে আটকিয়ে রাখে। সেখানে তাকে নানান হুমকি প্রদান করে বলা হয়েছিলো হাইকোর্টে দাখিল করা রিট পিটিশন তুলে না নেয়া হলে তাকে লেখাপড়ার করার সুযোগ দেয়া হবে না, ভর্তিও করা হবে না। পরে তিনি কোতয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।

এদিকে গত বছরের ২১ এপ্রিল সোহেল রানার পুনঃভর্তি কার্যক্রম শুরু করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইব্রাহীম কবীর স্বাক্ষরিত চিঠি প্রদান করা হয়। চিঠি পেয়ে ওই বছরের ২৫ এপ্রিল নির্দেশনা মোতাবেক আবেদন করেন ওই শিক্ষার্থী। কিন্তু পুনঃভর্তি কার্যক্রম শুরু না করে কেবল হাইকোর্টকে দেখাতেই ঐ চিঠি প্রদান করা হয়।

ভুক্তভোগী সোহেল রানা আজ বিকালে এক মুঠোফোনে বলেন, শুধু সাবেক উপাচার্যের উদাসীনতায় আমার জীবন থেকে অনেক মূল্যবান সময় নষ্ট হয়েছে। আশা করছি, বর্তমান প্রশাসন ও বিভাগের শিক্ষকদের সহায়তায় আবার স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাব। আমি আবার স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতে চাই।

উল্লেখ্য, সে সময় সোহেল রানার ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে রংপুরের স্থানীয় পত্রিকাসহ বিভিন্ন অনলাইনে সংবাদ প্রকাশিত হলেও টনক নড়েনি সাবেক উপাচার্য ড. একে এম নূর-উন- নবী প্রশাসনের।