‘ক্ষমতায় গেলে সে কথা মনে থাকবে তো?’

বিএনপি’র সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একটি ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সাহাবুদ্দিন লাল্টু দু’টি অভিজ্ঞতার সূত্রে ওইরকম ঘোষণার কথা ক্ষমতায় গেলে মনে থাকবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে সাহাবুদ্দিন তার তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা জানান। তিনি এখন কানাডাপ্রবাসী।

নিচে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতির পোস্টটির পুরোটাই দেয়া হলো:

‘‘শুনে খুশী হলাম যে, বিএনপি ক্ষমতায় এলে চলমান এ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে যারা হতাহত হয়েছেন, তাদের পরিবারকে বিশেষ সম্মান জানানো হবে। কিন্তু কথা হচ্ছে, ‘ক্ষমতায় গেলে সে কথা মনে থাকবে তো?’

গতবার যখন ওনাদের দল ক্ষমতায় ছিলো, ছাত্রদল নামক সংগঠনের (যে দল ওনার মাকে সামান্য গৃহিনী থেকে আপোষহীন নেত্রী বানিয়েছে) কর্মী হিসেবে কিছুদিন দায়িত্ব পালনের সুযোগ হয়েছিলো। সে সুবাদে ওনাকে অনুরোধ করেছিলাম, অতীতে যারা এরশাদ ও হাসিনা বিরোধী আন্দোলনে আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করে ঘরে পড়ে রয়েছে তাদের চিকিৎসা সুবিধা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে সাহায্য করা যায় কি না। তিনি খুবই আন্তরিকতার সাথে সম্মতি প্রকাশ করলেন এবং এরকম যারা আছেন তাদের একটি তালিকা তৈরি করতে বললেন। সে মোতাবেক আমরা ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির তৎকালীন সদস্য এবং সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ছাত্রসংসদের ভিপি মঈনকে দায়িত্ব দিলাম। সে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির আরো ২/১ জনকে সাথে নিয়ে পুরো একমাস ব্যাপী দিনরাত খাটাখাটনি করে তালিকা চূড়ান্ত করলো।

এ খবর যখন ছড়িয়ে পড়লো, গোটা দেশের ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেল। ঠিক এমনি একটি সময় তিনি হঠাৎ একদিন আমাকে ডেকে বললেন, ‘লাল্টু, এসব বন্ধ রাখো।’ এ কথা শোনার পর আমি আকাশ থেকে মাটিতে পড়লাম। কোন কথা না বলে ওনার অফিস থেকে বের হয় মঈনকে সব কিছু বন্ধ রাখতে বললাম।

পরে জানতে পারলাম মঈনকে এসব তালিকা তৈরির ব্যাপারে দায়িত্ব দেয়ায় সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের সাবেক জিএস বগুড়ার ডা: ফিরোজ বিষয়টি মানতে পারেননি। ফলশ্রুতিতে সে খোদ ওনার উপরেই খুব রেগে গিয়েছিলেন! যেহেতু ওনার সাথে ডা. ফিরোজের অনেক বড় রকমের আন্তরিক সম্পর্ক ছিলো, তাই তিনি ফিরোজের রাগ ভাঙাতে গিয়ে আমাকে পুরো প্রক্রিয়াটিই বন্ধ করে দিতে বলেছিলেন।

এখানে বলে রাখা প্রয়োজন যে, ডা: ফিরোজ একজন চিকিৎসক হবার পরও শুধুমাত্র ক্ষমতা খাটানোর জন্য চিকিৎসা পেশা ছেড়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর অ্যাসাইনমেন্ট অফিসার হিসেবে নিয়োগ লাভ করেছিলেন।’

ছাত্রদলের সাবেক এই সভাপতি আরেকটি ঘটনার উদাহরণ দিয়ে লিখেন, ‘ছাত্রদলের প্রথম শহীদের নাম আবু রায়হান জগলু। আমি যখন ছাত্রদলের দায়িত্বে, জগলুর বোন নাঈমা তখন কুয়েত মৈত্রী হলের সদ্য সাবেক সভানেত্রী। জগলুর মা যে বাড়িতে থাকতেন, সেটি ব্যাংক লোনের উপরে করা।

পরিবারে উপার্জনক্ষম কেউ না থাকায় তিনি নিয়মিত ব্যাংক কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে না পারায় বাড়িটিকে নিলামে দেয়ার হুমকি দিয়ে ব্যাংক জগলুর মাকে চূড়ান্ত চিঠি দেয়। তড়িঘড়ি করে নাঈমা আমার সাথে যোগাযোগ করে জমে থাকা শুধু ৮/১০ লাখ সুদের টাকা মওকুফ করে দেয়ার জন্য তার মায়ের করা আবেদনটি আমার হাতে তুলে দেয় আমি যেন হারিস চৌধুরীকে দিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের এমডিকে ফোন করিয়ে আবেদনটি অনুমোদনের ব্যবস্থা করি। এ ব্যাপারে নাঈমা আমার কাছে এসেছিলো মোট ২৫ বার আর আমি হারিস চৌধুরীর কাছে গিয়েছিলাম ২০ বার। কিন্তু হারিস কোনদিনই এ ব্যাপারে কোন ব্যাবস্থা নেননি।’

স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন, ‘মাত্রতো দুটো ঘটনা বললাম আপাতত। আরো অনেক ঘটনা আছে যা ভবিষ্যতে লেখার ইচ্ছা আছে। সুতরাং যা বলতে তাই তা হলো: কিছুটা হলেও বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় যে, শত শত শহীদের রক্তের বিনিময়ে যদি ভবিষ্যতে উনি আর ওনার মা কখনো ক্ষমতায় ফিরে আসেন, সেদিনও অতীতের মতোই কর্মীরা ওনাদের অবহেলার শিকার হবেন না।’