‘গরুর মাংস খাস, বলেই পিটিয়ে ভাইটাকে মেরেই ফেলল’

রোজা রেখেছিলেন জুনেইদ। সারা দিন এক ফোঁটা পানিও খায়নি ১৫ বছরের কিশোর ছেলেটা। ঠিক ছিল, বড় ভাইয়ের সঙ্গে দিল্লি থেকে ঈদের বাজার করে বাড়ি ফিরে মায়ের তৈরি ইফতারি খাবেন। ভারতের হরিয়ানার বল্লভগড়ের গ্রামের বাড়িতে বসে দুই ছেলের বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় ছিলেন মা সায়রা। খবর এবিপির।

জুনেইদের আর বাড়ি ফেরা হয়নি। বৃহস্পতিবার বিকালে দিল্লি থেকে হরিয়ানা ফেরার লোকাল ট্রেনেই তাদের উপর হামলা হয়। পুলিশের বক্তব্য, ধর্মীয় বিদ্বেষ থেকেই এই হামলা। ট্রেনের একদল যাত্রী প্রথমে গো-হত্যা ও গোমাংস খাওয়ার জন্য জুনেইদদের গালাগালি করে। তাদের ফেজ টুপি খুলে ফেলে দেয়। তারপর গণপিটুনি। রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই মৃত্যু হয় জুনেইদের। তার সঙ্গী দুই তরুণ মঈন ও মহসিন এবং বড় ভাই শাকির গুরুতর আহত হয়ে এখন হাসপাতালে।

গোটা ঘটনায় ফের কাঠগড়ায় নরেন্দ্র মোদি সরকার, বিজেপি তথা সঙ্ঘ পরিবার। রাহুল গাঁন্ধী এই খুনের তীব্র নিন্দা করে বলেছেন, ”এই রাজত্বে গণহত্যাকারীরা অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে! এই ধরনের অমানবিক ঘটনা অবিলম্বে বন্ধ হোক।”

সিপিএমের বৃন্দা কারাটের অভিযোগ, সঙ্ঘ পরিবারের সাম্প্রদায়িক রাজনীতি, গোমাংস-গোহত্যা নিয়ে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ঘৃণার রাজনীতির জন্যই এই হামলা। সিপিএমের অভিযোগ, হরিয়ানারই পহেলু খানকে এ ভাবেই খুন করে সঙ্ঘের গো-রক্ষকরা।

দিল্লির নাকের ডগায় এই খুনের পরেও কেন মোদি সরকার বা হরিয়ানার বিজেপি সরকারের কেউ জুনেইদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি, সেই প্রশ্ন তুলে বৃন্দা বলেন, ”প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এখন চুপ কেন?” বিরোধীদের অভিযোগ, সরকারের কর্তাদের আচরণেই স্পষ্ট, তারা এ সবে মদত দিচ্ছেন।

এই ঘটনায় একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রমেশ নামে ওই অভিযুক্ত বলেন, ”আমি মদ খেয়ে ছিলাম। বন্ধুরা বলছিল, ওরা গরুর মাংস খায়।”

জুনেইদের দাদা হাসিমের অভিযোগ, দিল্লির সদর বাজার থেকে দিল্লি-মথুরা প্যাসেঞ্জার ট্রেনে ওঠেন তারা। ওখলা থেকে এক দল যাত্রী উঠে তাদের সিট ছেড়ে দিতে বলে। জুনেইদ একজনকে আসন ছেড়েও দেয়। কিন্তু সকলকেই সিট ছাড়তে বলা হয়। তাতেই বাদানুবাদের শুরু।

তার কথায়, ”হঠাত্‍ই একদল লোক বলতে থাকে, এরা গরু মারে, গোমাংস খায়। এদের মারাই উচিত! বলেই আমাদের মারতে শুরু করল। ভাইকে তো মেরেই ফেলল!”