গান্ধী-বুদ্ধর দেশে থাকতে দিন রোহিঙ্গাদের : মোদিকে বিশিষ্টজনরা

ভারতের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফেরত না পাঠানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উদ্দেশে একটি খোলা চিঠি লিখেছেন দেশটির প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবী ও সমাজকর্মীরা। ওই চিঠিতে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে মিয়ানমারে চলমান সহিংসতার মধ্যে সেখানে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফেরত না পাঠানোর আবেদন করা হয়েছে।

আবেদনকারীরা মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে যে সহিংসতা ও নির্যাতন চলছে তাকে উদ্ধৃত করে মোদিকে রোহিঙ্গাদের ভারতে থাকতে দেয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন।

এই খোলা চিঠিতে প্রখ্যাত আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ, যোগেন্দ্র যাদব, এমপি শশী থারুর, সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পি চিদাম্বরম, সমাজকর্মী তিস্তা শেতলবাড়, সাংবাদিক করণ থাপার, সাগরিকা ঘোষ, অভিনেত্রী স্বরা ভাস্করসহ মোট ৫১ জন প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব সই করেছেন। খবর ইন্ডিয়া টুডে ও ইকোনমিক টাইমসের।

খোলা চিঠিতে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে অমানবিক ঘটনা চলছে। আমাদের প্রতিবেশী বাংলাদেশ প্রায় ৫ লাখ শরণার্থী সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। আমরা ভারত সরকারের ‘অপারেশন ইনসানিয়াত’-এর মাধ্যমে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য সাহায্য পাঠানোর পদক্ষেপকে স্বাগত জানাচ্ছি। রাখাইন প্রদেশে যখন সহিংসতার আগুন জ্বলছে, সেখানে ওই সহিংসতার ঢেউকে দমন করার জন্য আরও বেশি ও দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। আমরা ভারতবাসী হিসেবে ঐক্যবদ্ধভাবে আপনার কাছে আবেদন জানাচ্ছি, ভারত ওই বিষয়ে নতুন এবং শক্তিশালী ভাবনার সঙ্গে এগিয়ে আসুক।

একটি উদীয়মান বিশ্বশক্তি হিসেবে আমাদের কাছে এটা আশা করা যেতে পারে। চিঠিতে তারা আরও বলেন, রোহিঙ্গা মুসলিমদের কেবল সমস্যা হিসেবে দেখা উচিত নয়। বরং মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে সহিংসতা নিয়ে বিবেচনা করতে হবে, যা তাদেরকে দেশ থেকে পালিয়ে আসতে বাধ্য করেছে। রোহিঙ্গা মুসলিমদের তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর পদক্ষেপ কেবল ভারতের মানবতাবাদী নীতি ও ঐতিহ্যের বিরোধী তাই নয়, বরং তাতে আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি ভারতের অঙ্গীকারও লঙ্ঘিত হবে।

অবশ্যই রোহিঙ্গা মুসলিমদের নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে তাদের বাসায় ফিরে যাওয়ার অধিকার রয়েছে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশে ফিরে যাওয়া তাদের জন্য কোনোভাবেই ঠিক নয়। মিয়ানমারে যতদিন হত্যা, লুটপাট ও সহিংসতা অব্যাহত থাকবে ততদিন আন্তর্জাতিক আইন তাদেরকে ভারতে থাকার অধিকার দেয়।

এ ব্যাপারে সুশীল সমাজের অনেক সদস্য এবং এমনকি জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের হাইকমিশনারও ভারতকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জোর করে তাদের দেশে ফেরত না পাঠানোর জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।

ভারতীয় সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদে বর্ণিত জীবন বাঁচানোর অধিকার কেবল নাগরিকদের জন্যই নয় বরং প্রত্যেক ব্যক্তিকে দেয়া হয়েছে এবং এজন্য রোহিঙ্গা শরণার্থীদের রক্ষা করা ভারতের সাংবিধানিক কর্তব্য।

মোদিকে উদ্দেশ করে বিশিষ্টজনরা বলেছেন, ‘আপনি প্রায়ই ভারতবর্ষকে মহাত্মা গান্ধী ও গৌতম বুদ্ধর দেশ বলে উল্লেখ করে থাকেন। রোহিঙ্গাদের ভারতে থাকতে দিয়ে আপনি প্রমাণ করুন যে, গান্ধী ও বুদ্ধর আদর্শে আপনি অবিচল। গান্ধী-বুদ্ধর দেশে দয়া করে রোহিঙ্গাদের থাকতে দিন।’

রোহিঙ্গাদের হয়ে সুপ্রিমকোর্টে মামলাটি লড়ছেন ভারতের শীর্ষস্থানীয় আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ। এই আইনজীবী বলেন, ‘ভারত সত্যিই বিশ্বে একটি সুপারপাওয়ার হয়ে উঠতে পারবে কিনা, আজ তারই পরীক্ষা বলা যেতে পারে। কারণ ক্ষমতা তো শুধু অর্থনীতিরই নয়, মানবিকতারও!’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ঘরের পাশে বাংলাদেশ যদি হাজার অসুবিধা সত্ত্বেও লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিতে পারে, তাহলে ভারতের মতো বড় দেশ মাত্র কয়েক হাজার রোহিঙ্গাকে কেন ঠাঁই দিতে পারবে না- সেটাই আমার বোধগম্য নয়। তাহলে আর ভারত কিসের বড় দেশ?’