গুলশান হামলায় খরচ নয় লাখ, অস্ত্র আসে আমের ট্রাকে

গুলশানের স্প্যানিশ রেস্টুরেন্ট হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় আট থেকে নয় লাখ টাকা খরচ হয়েছে। মামলার তদন্ত সংস্থা ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট এমন তথ্য পেয়েছে।তদন্ত সংশ্লিষ্টদের মতে হামলার পরিকল্পনা, জঙ্গি প্রশিক্ষণ, অস্ত্র ও বিস্ফোরক ক্রয়, হামলার স্থান রেকি করা, বোমা তৈরি এবং জঙ্গিদের জন্য বাড়িভাড়া বাবদ এই ৮/৯ লাখ টাকা খরচ হয়েছে।

হামলার অস্ত্র ও বিস্ফোরকগুলো চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও যশোর সীমান্ত পথ দিয়ে ট্রাকে আমের ঝুড়িতে করে ঢাকায় আনা হয়।

কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, তদন্তের স্বার্থে আমরা হিসাব করে দেখেছি হামলাকারীরা যেসব অস্ত্র বিস্ফোরক ও অপারেশনাল সামগ্রী হামলার কাজে ব্যবহার করেছে, সেগুলো সংগ্রহ করতে খুব বেশি খরচ হয়নি। আট থেকে নয় লাখ টাকার বেশি তাদের এই অপারেশনের জন্য খরচ হয়নি।

তিনি বলেন, ওই বছর আর্থিকভাবে স্বচ্ছল বেশ কয়েকজন তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন, যাদের একজন আজিমপুরে নিহত জঙ্গি তানভীর কাদেরী, যার ভাড়া করা বাসাতেই হামলাকারীরা অবস্থান করেছিলেন। তানভীর একটা বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করতেন। তার স্ত্রীও একটা মাল্টি-ন্যাশনাল এনজিওতে চাকরি করতেন।

মনিরুল ইসলাম আরো বলেন, তারা কথিত হিজরতের আগে তাদের অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রি করেছেন, গাড়ি বিক্রি করেছেন এবং এই টাকা তারা নব্য জেএমবির ফান্ডে দিয়েছেন। সুতরাং হামলার জন্য আট-নয় লাখ টাকা জোগাড় করতে তাদের বাইরে থেকে তেমন কোনো সাহায্য নেয়ার প্রয়োজন হয়নি।

পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও যশোর সীমান্ত পথ দিয়ে ট্রাকে আমের ঝুড়িতে করে গুলশান হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্র ও বিস্ফোরক ঢাকায় আনা হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জের নব্য জেএমবির অস্ত্র সরবরাহকারী মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান এসব অস্ত্র সরবরাহ করেছিলেন। তাকে এই মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে এবং স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তিনি অস্ত্র সরবরাহের কথা স্বীকার করেছেন।

প্রসঙ্গত, গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার এক বছর পূর্ণ হচ্ছে শনিবার (১ জুলাই)। ভয়াবহ ওই হামলায় দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ দেশি-বিদেশি ২২ নাগরিক প্রাণ হারান। নিহতদের মধ্যে তিনজন বাংলাদেশি, একজন ভারতীয়, ৯ ইতালীয় এবং সাতজন জাপানি নাগরিক। প্রায় ১২ ঘন্টার ওই ‘জিম্মি সংকট’ শেষ হয় সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযান ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ দিয়ে।

অভিযানে পাঁচ জঙ্গি ও রেস্টুরেন্টের বাবুর্চি সাইফুল ইসলাম চৌকিদার নিহত হন। নিহত জঙ্গিরা হলেন- নিবরাস ইসলাম, মীর সামিহ মোবাশ্বের, রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, খায়রুল ইসলাম পায়েল ও শফিকুল ইসলাম উজ্জল ওরফে বিকাশ। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মিডিয়ার এ হামলার নাম দেয়া হয় ঢাকা অ্যাটাক। ওই ঘটনার পরই দেশব্যাপী জঙ্গি বিরোধী অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।প্রতিবেদন পরিবর্তন ডটকমের সৌজন্যে প্রকাশিত।