গ্রেপ্তার এড়াতে অ্যাপস নির্ভর জামায়াত

দলীয় কোন্দল মিটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে গোপনে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিল জামায়াতে ইসলামী। দলকে আবারো শক্তিশালী করে তুলতে কৌশলে ভবিষ্যতের কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করছিলেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। তাদের মধ্যে নিয়মিত বৈঠকও হচ্ছিল, তবে গ্রেফতার এড়াতে এসব বৈঠকের সিদ্ধান্ত একে অপরকে জানানো হতো মোবাইল ফোনের অ্যাপসের মাধ্যমে। শীর্ষ জামায়াত নেতারা গ্রেফতার হওয়ার পর রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে এসব তথ্য দিয়েছেন।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ৯ অক্টোবর জামায়াতের আমির মকবুল আহমাদ, নায়েবে আমির মিয়া গোলাম পরওয়ার, সেক্রেটারি জেনারেল শফিকুর রহমানসহ ৯ জন গ্রেফতার করার পর তাদের মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। কিন্তু পরীক্ষা করে দেখা যায় তাদের মোবাইল ফোনে কোনো সিমকার্ড ছিলনা। পরে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে নেতারা পুলিশকে জানান, গ্রেফতার এড়াতে তারা মোবাইল ফোনে সিমকার্ড ব্যবহার করেন না। নির্দিষ্ট ওয়াইফাই জোন ব্যবহার করে তারা অ্যাপসের মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেন।

সূত্র আরো জানায়, গ্রেফতার হওয়া নেতাদের কাছ থেকে ৩৫ পৃষ্ঠার একটি চিঠি জব্দ করা হয়েছে। ওই চিঠির সূত্রে এবং নেতাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জামায়াতে ইসলামীর ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে তাদের কৌশলসহ আরো নানা বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে।

চট্টগ্রাম জামায়াতের নেতা ও সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী গত ৩ অক্টোবর দলটির আমির মকবুল আহমাদের কাছে ওই ৩৫ পৃষ্ঠার চিঠিটি পাঠান। তাতে চট্টগ্রাম জামায়াতের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের বিষয় উল্লেখ করে তা মিটিয়ে ফেলার বিষয়ে ভ‚মিকা গ্রহণ করতে দলের আমিরকে অনুরোধ জানানো হয়।

এছাড়া দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের পুনরায় উজ্জীবিত করে তুলতে দলের আমিরকে নতুন কর্মসূচির আহবান জানান শাহজাহান চৌধুরী। চিঠিটি হাতে পাওয়ার এক সপ্তাহের মাথায়ই উত্তরার ওই বাসায় বৈঠকে মিলিত হন শীর্ষ জামায়াত নেতারা। এরপরই পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে।

সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের মতে, গোপনে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করার ছক কষছিল জামায়াত। রাজপথে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে বর্তমান সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে ও আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নিজেদের কর্মপন্থা নির্ধারণ করতেই গোপন বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন দলটির শীর্ষ নেতারা।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ডিসি (উত্তর) শেখ নাজমুল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের কাছে তথ্য ছিল যে জামায়াত নেতারা উত্তরার ওই বাসায় বৈঠকে মিলিত হয়ে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র করছিলেন। সেখানে একত্রিত হওয়া প্রত্যেক নেতার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা ও গ্রেফতারি পরোয়ানা ছিল। ফৌজদারি মামলার আসামিরা কখনোই একত্রিত হয়ে বৈঠক করতে পারে না।

তিনি আরো বলেন, গ্রেফতার হওয়া জামায়াত নেতাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে। এসব তথ্যের ভিত্তিতে অধিকতর অনুসন্ধান ও তদন্ত চলছে।

যদিও জামায়াতের নেতারা মনে করছেন, নতুন করে এই গ্রেফতার অভিযানের সঙ্গে আগামী নির্বাচনের সম্পর্ক রয়েছে। সরকার জামায়াতসহ সকল বিরোধী দলকে নেতৃত্বশূন্য করে দেশকে একদলীয় শাসনের দিকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে শীর্ষ নেতাদের অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে।

দলের নেতারা গ্রেফতার হওয়ার পর এক বিবৃতিতে জামায়াতের অন্যতম নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর জামায়াতে ইসলামীকে নেতৃত্বশূন্য করতে যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, তারই ধারাবাহিকতায় জামায়াত নেতাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।