ঢাবির ‘ঘ’ ইউনিটের প্রশ্ন ফাঁস : একটি ই-মেইল ঘিরে যত রহস্য

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটের ২০১৭-২০১৮ সেশনের প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। আগের রাতে পাওয়া প্রশ্নের সঙ্গে শুক্রবার অনুষ্ঠেয় পরীক্ষার প্রশ্নের ইংরেজি অংশের হুবহু মিল পাওয়া গেলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মানতে নারাজ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আমজাদ হোসেন এবং ‘ঘ’ ইউনিটের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।

শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার ৫৩টি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে ৩৩টি স্কুল-কলেজসহ মোট ৮৬ কেন্দ্রে ‘ঘ’ ইউনিটের ২০১৭-২০১৮ সেশনের এই ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

এবার এই পরীক্ষায় প্রতি আসনের বিপরীতে ৬১ জন শিক্ষার্থী আবেদন করেন। উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা, মানবিকসহ প্রায় সব বিভাগের যোগ্য শিক্ষার্থীরা এই পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেন।

এ বছর ‘ঘ’ ইউনিটে ১ হাজার ৬১০টি আসনের বিপরীতে ৯৮ হাজার ৫৪ জন শিক্ষার্থী আবেদন করেন। এই ইউনিটে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য ১ হাজার ১৪৭টি, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের জন্য ৪১০টি ও মানবিক শাখার জন্য ৫৩টি আসন রয়েছে।

বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের প্রায় সব বিভাগে, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থীরা ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ ছাড়া প্রায় সব বিভাগে ভর্তি হতে পারবেন। আর কলা অনুষদের শিক্ষার্থীদের জন্য যে ৫৩টি আসন রয়েছে, সেগুলো ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ৯টি বিভাগ এবং গণিত ও পরিসংখ্যানে ভর্তি হওয়ার জন্য।

এই ইউনিটে ১২০ নম্বরের বাংলা, ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞানের পরীক্ষা হয়। যারা মাতৃভাষা হিসেবে বাংলা পড়েননি, তাদের জন্য বাংলার পরিবর্তে প্রশ্নপত্রে উচ্চতর ইংরেজি অংশ থাকে। আর সাধারণ জ্ঞানের দুটি অংশে বাংলাদেশ বিষয়াবলি ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি থাকে।

সকালে পরীক্ষা শুরুর আগ মুহূর্তে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার এবং এর আশপাশের এলাকায় বৃষ্টির মধ্যেই অনেক পরীক্ষা ও অভিভাবকদের ‘ঘ’ ইউনিটের প্রশ্ন সলভ করতে দেখা গেছে। এর ফলে আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, কলা ভবন, লেকচার থিয়েটারসহ কাছাকাছি কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীরা বেশ কয়েক মিনিট দেরি করে প্রবেশ করেন।

এদিকে, একটি ই-মেইল ঘিরে রহস্য তৈরি হয়েছে। ওই ই-মেইল থেকেই নাকি প্রশ্নপত্র ফাঁস করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ওই ই-মেইলে বৃহস্পতিবার দিনগত রাত তিনটা ১৯ মিনিটে ‘ঘ’ ইউনিটের ইংরেজি অংশের একটি প্রশ্ন আসে, যেটিই পরে শুক্রবার সকালে হওয়া ইংরেজি প্রশ্নের সঙ্গে মিল পাওয়া যায়।

রাতে ফাঁস হওয়া প্রশ্নের সঙ্গে আজকের যেসব প্রশ্নে মিল পাওয়া যায়, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- ইংরেজি প্রথম প্রশ্ন ছিল- ‘হোয়াট ইজ দ্য মিনিং অব দ্য ইডিওম ‘টু ফলো ইয়র নোজ’?, তৃতীয় প্রশ্ন ছিল- ‘দ্য হাইওয়ে এজেন্স. . . বেড ওয়েদার…’, অষ্টম প্রশ্ন ছিল- ‘জার্মানি হ্যাজ ওন দ্য ফুটবল ম্যাচ…’, দ্বাদশ প্রশ্ন- ছিল ‘দিস ইজ দ্য স্কল হুইচ…’ ও বিংশতম প্রশ্ন ছিল- ‘অ্যা পিস অব কেক মিনস’।

এ বিষয়ে ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা সমন্বয়কারী সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, ‘যার ই-মেইলে রাত তিনটা ১৯ মিনিটে প্রশ্ন এসেছে। তিনি তখন কেন বলেননি। সারারাত ডিন অফিস খোলা রেখেছি। পরীক্ষা হওয়ার সময়ও শুনলাম না। আর পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর এখন একটা মেইল দেখানো হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘যার কাছে মেইল এসেছে, তিনি এখনও আমাদের জানাননি। প্রশ্ন আসলে সম্পূর্ণ আসতো। শুধু ইংরেজি অংশ আসল কেন?’

তাহলে আপনি বলতে চাচ্ছেন এই ই-মেইল ভুয়া- এমন প্রশ্নের জবাবে সাদেকা হালিম বলেন, ‘এটা ভুয়া মেইল। কারণ এটার কোনো প্রমাণ নেই। এরপরও আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে তদন্ত করব।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আমজাদ হোসেন বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্ন ফাঁসের কোনো রেকর্ড নেই। এবারও প্রশ্ন ফাঁস হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘তবে অনেকে ডিভাইস নিয়ে জালিয়াতি করার চেষ্টা করেছিল। আমরা তাদের আটক করে পুলিশে দিয়েছি।’