চালের দাম পাইকারিতে কমলেও খুচরায় কমেনি

পাইকারি বাজারে সব ধরনের চালের দাম কমতে শুরু করেছে। তবে খুচরা বাজারে এখনো এর প্রভাব পড়েনি।

আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে খুচরা বাজারেও চালের দাম কমতে শুরু করবে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

ব্যবসায়ীরা জানান, মিল মালিকরা এতদিন যে চাল আটকে রেখে কম কম করে বাজারে ছাড়তেন, চাল আমদানির কারণে তারাই এখন বাজারে কম দামে চাল ছাড়তে শুরু করেছেন।

রাষ্ট্রায়ত্ব পণ্য বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, এক সপ্তাহের ব্যবধানে ঢাকায় সরু চাল কেজিপ্রতি এক থেকে দুই টাকা এবং মোটা চাল দুই থেকে তিন টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে। কয়েক দিন আগে যেসব চিকন চাল ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হতো, এখন সেগুলোর দাম ৫৪ থেকে ৫৮ টাকায় নেমে এসেছে। এর মধ্যে সাধারণ মানের নাজিরশাইল মিনিকেট ৫৪ থেকে ৫৬ টাকা এবং ভালো মানের নাজিরশাইল মিনিকেট ৫৬ থেকে ৫৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ কেজিপ্রতি এক থেকে দুই টাকা করে দাম কমেছে। এ ছাড়া ৪৬ থেকে ৪৮ টাকায় বিক্রি হওয়া মোটা চাল এখন ৪৩ থেকে ৪৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের পাইজাম চাল কেজিপ্রতি এক টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৪৭ থেকে ৫০ টাকায়।

বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলী জানান, বিনা জামানতে আমদানি ও শুল্ক হার কমানোয় ভারত থেকে লাখ লাখ বস্তা চাল বাজারে ঢুকছে। এ কারণে দেশের বাজারে চালের দাম কমতে শুরু করেছে। মিল পর্যায়ে তো সব ধরনের চালেই দুই থেকে তিন টাকা করে দাম কমেছে। সামনে আরো কমবে।

বাদামতলী-বাবুবাজার চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন বলেন, আমরা কয়েক দিন আগে থেকে কম দামে মিলারদের কাছ থেকে চাল কেনা শুরু করেছি। আগের চালগুলো বিক্রি শেষ হলে এগুলো পুরোপুরি বাজারে যাবে। তখন খুচরা বাজারে চালের দাম কমে যাবে।

রাজধানীর বাবুবাজার চালের আড়ত ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি মোটা চাল (গুটি, স্বর্ণা, বিআর-২৮, পারিজা) ৪২ থেকে ৪৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ঈদের আগে এই চাল ৪৩ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৪৬ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছিল। আর সরু চাল (মিনিকেট, নাজিরশাইল) বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ৫৩ টাকায়। ঈদের আগে এসব চাল ৫১ থেকে ৫৪ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।

বাবুবাজারের মনির রাইস এজেন্সির পাইকারি বিক্রেতা আলাউদ্দিন বলেন, গুটি স্বর্ণা অর্থাৎ মোটা চাল আমরা আজ থেকেই বিক্রি শুরু করেছি ৪২-৪৩ টাকায়, যা আগে বিক্রি করতাম ৪৫-৪৬ টাকায়। অন্য চিকন চালের ক্ষেত্রে দাম কমার গতিটা একটু কম। ৫০ পয়সা, এক টাকা করে কমছে। আমদানি করা ভারতীয় চালের প্রভাবেই দাম কমছে বলে তিনি জানান।

মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটের পাইকারি চাল বিক্রেতা জয়নাল আবেদিন বলেন, মিল থেকে আমরা যে দামে চাল কিনি, সেটার সঙ্গে মিল রেখেই দাম কমাই। প্রতি ৫০ কেজির প্রতি বস্তা চালে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত দাম কমেছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে চালের দাম আরো কমে আসবে বলেও জানান তিনি।

এদিকে খুচরা বাজারে সব দোকানি না কমালেও কিছু কিছু দোকানে দুই-এক টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে চাল। নিউমার্কেট বাজারের মুদি দোকান রউফ ট্রেডার্সের মালিক আব্দুর রউফ বলেন, মোটা চালের দাম কিছুটা কমেছে। আজকে আমি স্বর্ণা দুই টাকা কমে কিনেছি। আগে এই চাল ৪৮ টাকায় বিক্রি করেছি। আজ থেকে ৪৬ টাকা বিক্রি করতে পারব।

আজিমপুরের মুদি দোকানি কাওসার বলেন, আগামীকাল দোকানে বিক্রির জন্য নতুন চাল কিনতে যাব পাইকারি বাজারে। তবে এখন দোকানে যে চাল রয়েছে তা কম দামে বিক্রি করার কোনো সুযোগ নেই। কারণ, এগুলো আমাকে বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়েছে। নতুন চাল আনার পরে কম দামে বিক্রি করব।

প্রসঙ্গত, দেশে খুচরা বাজারে চালের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে গত ২০ জুন চাল আমদানির শুল্ক ২৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করে সরকার। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নির্দেশনা জারি করার সঙ্গে সঙ্গেই ২৩ জুন ভোমরা ও হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ১০ হাজার টন চাল এনেছে আমদানিকারকরা। তবে ঈদের পর গত সোমবার থেকে পুরোদমে চাল আমদানি শুরু করে ব্যবসায়ীরা। এর প্রভাবে চালকলগুলোও দাম কমাতে শুরু করেছে।

এ ছাড়া আগামী সপ্তাহে সরকারিভাবে ১৫ লাখ টন চাল আমদানি করা চাল দেশে আসার কথা রয়েছে।

সম্প্রতি দেশের হাওর অঞ্চলে আগাম বন্যা ও দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্লাস্ট রোগের কারণে ধানের উৎপাদন কম হয়েছে। এর ফলে চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়েছিল।