চিকিৎসকদের অসাধ্য সাধন: ৭ বছর পর খাবার খাচ্ছে শিশুটি

গত ৭ বছর ধরে পানি পান করেনি শিশুটি। খেতে পারেনি খাবারও। চিকিৎসকরা সেই অস্বস্তিভরা কষ্টকর ধারাবাহিকতার অবসান ঘটালেন সেদিন।

সম্প্রতি ভারতের বারিলাল সারাভাই (ভিএস) হাসপাতালে ৮ বছর বয়সী শিশু নেহা রামপ্রকাশের সফল অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করেন চিকিৎসকরা। এই অপারেশনটার নাম হচ্ছে ‘গ্যাস্ট্রিক পুল আপ উইদ ইসোফেজিয়াল রিকন্সট্রাকশন’। চিকিৎসকরা জানান, গ্যাস্ট্রিক পুল আপ পদ্ধতির মাধ্যমে জটিল এই অপারেশন প্রক্রিয়ায় রোগীর পেটকে (বিকল্প নালীর সাহায্যে) বুক পর্যন্ত টেনে আনা হয়। অর্থাৎ সেখানে বিকল্প ফুডপাইপ জুড়ে দেওয়া হয়।

এনবিটি জানায়, উত্তর প্রদেশের মাউ জেলার বাসিন্দা নেহা দেড় বছর বয়সকালে দুর্ঘটনাক্রমে এসিড গিলে ফেলেছিল। ভয়াবহ ওই ঘটনার পর কোনোমতে সে প্রাণে বেঁচে যায়। কিন্তু তাকে খাবার খাওয়ানো হতো পাকস্থলীর অন্ত্রে আলগা পাইপ লাগিয়ে। সেই খাবারের মধ্যে থাকতো দুধ, ডাল ও তরল খিচুরি।

আহমেদাবাদ মিররকে নেহার মা প্রীতি জানান, নেহাকে এতদিন তারা স্কুলে পাঠাননি এই ভয়ে যে অপর কোনো শিশু হয়তো তার শরীরের সঙ্গে লাগানো পাইপটি টেনে খুলে ফেলবে। বছরের পর পর শিশু সন্তানকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করে গেছেন বাবা-মা। কিন্তু কোথাও আশার আলো দেখেননি। এরই ধারাবাহিকতায় দুইমাস আগে আহমেদাবাদের ভিএস হাসপাতালে আসেন তারা। যেখানকার চিকিৎসকরা শেষপর্যন্ত সফল হন ওই দুর্লভ শল্য চিকিৎসায়। চলতি মাসের প্রথম দিকে ৮ জন চিকিৎসকের একটি দল ৫ ঘণ্টার চেষ্টায় ওই ‘অসাধ্য’ সাধন করেন।

চিকিৎসক দলের প্রধান গ্যাস্ট্রো এনটেরোলজিক্যাল সার্জন (gastroenterological surgeon) হাসমুখ বোরা বলেন, আমরা নেহার পেট থেকে গলা পর্যন্ত একটি প্যাসেজ তৈরি করি। সেখানে ৮ ইঞ্চি লম্বা একটি খাদ্যনালি স্থাপন করা হয়। আমরা নষ্ট হয়ে যাওয়া খাদ্যনালি ফেলে দেই। সেখানে নতুনটি কাজ করে। প্রথম দিকে পানি দিয়ে শুরু করি। এখন সে শক্ত খাবার এমনকি রুটি পর্যন্ত খেতে পারবে।

তার শরীর থেকে কৃত্রিম টিউবটি ৩ সপ্তাহ পর সরিয়ে ফেলা হবে।

এর আগে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা এটাকে খুব ঝুঁকিপূর্ণ অপারেশন বিবেচনায় অপারগতা প্রকাশ করেছেন। এছাড়া বিশাল খরচের বিষয়টিও একটি কারণ ছিল।

এই অস্তোপচারের ফলে নেহার বাবা রামপ্রকাশ ও মা প্রীতির যেন দীর্ঘমেয়াদী দুঃস্বপ্নের অবসান হয়েছে। তাদের আদুরে কন্যা এখন প্রায় স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবে।