ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি নির্বাচনের পর

নতুন কমিটি ঘোষণার তিন মাস পেরিয়ে গেছে। এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভাতৃপ্রতীম সংগঠন ছাত্রলীগ। পূর্ণাঙ্গ কমিটির আকার কেমন হবে বা কখন ঘোষণা হবে, সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক কেউ নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পুরো কমিটি ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে আংশিক কমিটি হতে পারে।

চলতি বছরের ১১ মে ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলনের প্রথম দিনে সমঝোতার মাধ্যমে সংগঠনটিকে কমিটি করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এরপর সভাপতি পদে ১১১ ও সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য ২১২ জন প্রার্থী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। এদের মধ্যে সমঝোতায় আসতে না পেরে পরদিন একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা শেখ হাসিনার কাছে দেওয়া হয়। তিনি গত ৪ জুলাই গণভবনে ডেকে নিয়ে সবার সঙ্গে কথা বলেন।

২৪ জুলাই আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির বৈঠকে শেখ হাসিনা জানান, তিনি সময়ের স্বল্পতার কারণে সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। ছাত্রলীগের নেতৃত্ব বাছাই করতে গঠিত নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বসে তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন। পরে ৩১ জুলাই ছাত্রলীগের নতুন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়। দুই বছরের জন্য সভাপতির দায়িত্ব পান রেজানুল হক চৌধুরী শোভন। আর সাধারণ সম্পাদক করা হয় গোলাম রাব্বানীকে।

ওই কমিটি ঘোষণার তিন মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি না দেওয়ায় বিপাকে পড়েছেন সংগঠনটির শীর্ষ নেতারা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে না রাখার সিদ্ধান্তে কিছুটা জটিলতা তৈরি হয়েছে।

জটিলতা নিরসনে দফায় দফায় বৈঠক করেও এখনো কোনো সীদ্ধান্তে আসতে পারেননি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। ফলে ঢাবি হল শাখা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের মধ্য দেখা দিয়েছে অসন্তোষ।

নিজেদের অনুসারীদের পদে আনতে এবং সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইনের অনুসারীদের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বাদ দিতে কমিটি ঘোষণা বিলম্ব হচ্ছে অভিযোগ উঠেছে।

বিষয়টি নিয়ে সোমবার রাতে ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চোধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানীর সঙ্গে ঢাবির হল শাখা নেতৃবৃন্দের দুই দফা বৈঠক হলেও সমাধান ছাড়াই শেষ হয় বৈঠক।

প্রথম দফা বৈঠকটি হয় রাজধানীর মোতালেব প্লাজায় ‘গোলাম রাব্বানী’র বাসায়। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল শাখার প্রায় ১৫ জন নেতা উপস্থিত ছিলেন।

দ্বিতীয় দফা বৈঠকটি হয় বাংলামোটরের ‘গোল্ডেন চিমনি রেস্টুরেন্টে’। যেখানে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন। সাড়ে তিন ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক শেষ হয় রাত সাড়ে বারোটায়।

আলোচনায় হলের নেতারা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক রাব্বানীর সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেন বলে জানান বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক হল নেতা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, বৈঠকে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রব্বানী বলেন, দুইজন (সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক) ছাড়া সবাই সমান। তাই কেন্দ্রীয় কমিটি নিয়ে চিন্তা না করে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি নিয়ে চিন্তা করতে বলা হয়। তখন বৈঠকে উপস্থিত অনেকে এর প্রতিবাদ করেন।

তারা বলেন, একজন হল সভাপতির সঙ্গে কখনও একজন হলের উপ-সম্পাদক কিংবা সদস্যের তুলনা হতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি আমাদের সহকর্মী আর সাধারণ সম্পাদক আমাদের জুনিয়র তাহলে আমরা কীভাবে তাদের পেছনে রাজনীতি করব? পরে রাব্বানী বলেন, ‘এখন তো সবাইকে মূল্যায়ন করা সম্ভব হবে না।’

বৈঠকে নেতারা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদককে বলেন, ‘আপনি যাদের কমিটিতে পদ দিতে চাচ্ছেন তারা কোন দিকে আমাদের চেয়ে বেশি রাজনীতি করেছে। আমরা সেটা জানতে চাই কারণ এর আগে কখনো হল নেতাদের বাদ দিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটি হয়নি।’

কমিটিতে আপনাদের না রাখার প্রশ্ন উঠছে কেন এমন প্রশ্নে তারা অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা সোহাগ-জাকিরের রাজনীতি করেছি এটাই আমাদের দোষ। আমাদের দোষ এটাই যে আমরা তাদের (সোহাগ-জাকির) সময়ে হলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলাম।’ নিজেদের লোককে কমিটিতে পদ দেওয়ার জন্য তারা দুর্বল যুক্তি দেখাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তারা।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চোধুরী শোভন বলেন, ‘হল কমিটিতে তাদের রাখা হবে কি-না এই বিষয়ে এখনো আমরা সিদ্ধান্তে পৌঁছায়নি। আমরা এখনো নীতিগত সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে কাজ করছি।’

জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘এ ব্যাপারে আলোচনা চলছে। আলোচনার দরজা খোলা আছে। দলের জন্য যেটা ভাল হবে আমরা সেটাই করব। এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় নি। নির্বাচনের আগে হয়তো পূর্ণাঙ্গ কমিটি হবে না। আংশিক কমিটি হবে। আগে বা পরে যাই হোক সবাই কমিটিতে থাকবে। এটা নিয়ে নেতিবাচক কিছু ভাবার সুযোগ নেই।’