ছেলের পিটুনিতে হাসপাতালে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন মা!

মায়ের ভিটে-বাড়ির শেষ সম্বল তিন শতক জমি নিজের করে নিতে না পেরে বৃদ্ধা মাকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত করেছে এক পাষণ্ড ছেলে। গুরুতর আহত ওই মা এখন যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন হাসপাতালের বেডে।

চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) দুপুরে ঘটেছে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার বোদা সদর ইউনিয়নের সুতার পাড়া গ্রামে।

শুক্রবার গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে খবর পেয়ে পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক অমল কৃষ্ণ মণ্ডল তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতলে ওই বৃদ্ধা মাকে দেখতে যান এবং আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণের জন্য পুলিশ সুপারকে অবহিত করেন। পরে বোদা থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, বোদা উপজেলার বোদা সদর ইউনিয়নের সুতারপাড়া এলাকার শরিফন (৭০) নামের ওই বৃদ্ধা তার বৃদ্ধ স্বামী আব্দুর রাজ্জাকসহ অনেক কষ্টে দিনযাপন করেন। দুই ছেলে ও দুই মেয়ে সবারই বিয়ে দিয়েছেন শরিফন।

স্বামী সহজ সরল প্রকৃতির হওয়ায় মেয়ে-জামাইদের সহযোগিতায় ও অন্যের বাড়িতে কাজ-কর্ম করে নিজেই সংসার চালান ওই বৃদ্ধা। বড় ছেলে আশরাফুল বিয়ে করে অন্যত্র বাড়ি করেছেন। নিজের তিন শতক ভিটে মাটিতে ছোট ছেলে আইজুলসহ একসাথে বাস করলেও স্বামীকে নিয়ে আলাদা খেতেন ওই বৃদ্ধা।

অনেক কষ্টে ছোট ছেলের সুখের জন্য আড়াই বিঘা জমিও দিয়েছেন ছোট ছেলে আইজুলকে। তারপরও ছোট ছেলের কাছে ভাল হতে পারেননি বৃদ্ধা মা। অবশেষে মায়ের নামে থাকা থাকা তিন শতক জমির মধ্যে দুই শতক নিজের করে নিতে পর্চা কেটে নিয়েছেন ছোটছেলে অটো ভ্যান চালক আইজুল ইসলাম।

এ নিয়ে গেলো কয়েকদিন ধরেই মাঝে মধ্যেই ঝগড়া হচ্ছিল মা-ছেলে এবং বৌমা ইতির সঙ্গে। অবশেষে গেলো বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) দুপুরে মায়ের সাথে কথাকাটির একপর্যায়ে বৃদ্ধা মাকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে আইজুল।

এতে বৃদ্ধা ওই মায়ের হাত কেটে গিয়ে রক্তাক্ত হন। ছেলের এমন পিটুনি সহ্য করতে না পেরে রক্তাক্ত অবস্থায় দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন তিনি। একপর্যায়ে বাড়ির পাশের একটি দোকানে গিয়ে আশ্রয় নেন ওই বৃদ্ধা মা। পরে সেখান থেকে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।

তবে বৃদ্ধা ওই মায়ের বাড়িতে গিয়ে তার অভিযুক্ত ছোটছেলে আইজুলকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

বৃদ্ধা মা শরিফন বলেন, আমার বড় ছেলে আশরাফুলকে আমি কিছুই দিতে পারিনি। সে অন্যত্র বাড়ি করেছে। আমার বাড়িতেই ছোট ছেলে তার বৌ-বাচ্চা নিয়ে আলাদা খায়।

তাদের সুখের জন্য অনেক কষ্ট করে আড়াই বিঘা জমি দিয়েছি। তারপরও সে আমার ৩ শতক জমির মধ্যে দুই শতকের পর্চা কেটে নিয়েছে। এর আগেও সে আমাকে ৩ বার মেরেছে। কোন সন্তান কি তার মাকে এভাবে মারতে পারে?

প্রতিবেশী দোকানদার মহিদুল ইসলাম বলেন, আমি দোকানেই বসেছিলাম। এসময় বৃদ্ধা হাপাতে হাপাতে আমার দোকনের সামনে এসে মাটিতে বসে পড়ে। আমি তখন একটা চেয়ারে বসতে দিই। তারপর দেখি তার হাত থেকে রক্ত ঝরছে। পরে আমি তাকে একটা বিস্কুট খেতে দিই। তিনি আমার কাছে পানি চাচ্ছিলেন। পরে কয়েকজন মিলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই।

বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. জাকিয়া আক্তার বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই বৃদ্ধা মাকে তার মেয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসে। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল এবং হাতে রক্ত ঝরছিল। পরে তার চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে এবং এখন আশঙ্কামুক্ত রয়েছেন।

বোদা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মশিউর রহমান মানিক বলেন, আমি ঘটনাটি শুনে হাসপাতলে ওই মাকে দেখতে যাই এবং চিকিৎসার খোঁজখবর নিই। বিষয়টি অত্যন্ত বেদনাদায়ক। এ ধরনের পাষণ্ড ছেলেকে বিচারের আওতায় আনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক অমল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, আমি খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ প্রশাসনকে অবহিত করি। নিজেও হাসপাতলে গিয়ে বৃদ্ধা মায়ের খোঁজখবর নিয়ে আসি। এছাড়া তার চিকিৎসার যাবতীয় ব্যবস্থাগ্রহণের জন্য বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসারকে নির্দেশ দিয়েছি।’