জবাই উদ্দেশ্যে গবাদি পশু কেনাবেচা বন্ধের নির্দেশ

ভারতের হাটে-বাজারে জবাইয়ের উদ্দেশ্যে গবাদি পশু কেনাবেচা বন্ধের নির্দেশনা জারি করেছে সরকার।

কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশনা দিয়ে শনিবার থেকে তা কার্যকরের কথা বলেছে। খবর এনডিটিভি ও আনন্দবাজার পত্রিকার।

গো-রক্ষা এবং গোমাংস নিয়ে চলা বিতর্কের মধ্যেই এ বিজ্ঞপ্তি জারি হল। দেশটিতে সংজ্ঞা অনুযায়ী গবাদি পশুর মধ্যে পড়ে- গরু, বাছুর, বলদ, ষাঁড়, মহিষ ও উট।

তবে এ নির্দেশনার ফলে দেশের মাংস ব্যবসা ভয়ঙ্কর ক্ষতির মুখে পড়বে বলে দাবি করেছেন অল ইন্ডিয়া মিট অ্যান্ড লাইভস্টক এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সচিব বি ডি সবরবাল।

তিনি বলেন, ‘কসাইখানাগুলো ৯০ শতাংশ গবাদি পশুই কেনে বাজার থেকে।’

অনেকের মতে, মাংস ব্যবসায় জড়িত বৃহৎ সংস্থাগুলো হয়তো পরিস্থিতি সামলে নেবে। মার খাবেন ছোট ব্যবসায়ীরা এবং মাংস কিনতে মুশকিলে পড়বেন গরিব মানুষ। আঁচ পড়বে চর্মশিল্পে।

যদিও সরকারি সূত্রে বলা হচ্ছে, মাংস কেনাবেচায় নিষেধাজ্ঞা আনা সরকারের উদ্দেশ্য নয়। নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে পশুপালকদের কাছ থেকে মাংসের জন্য পশু কেনা যাবে।

কিন্তু হাটে-বাজারে গবাদি পশু কিনে জবাই করা চলবে না। অসুস্থ বা অক্ষম গরু বেচাও কঠিন হবে।

কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের তরফে মঙ্গলবারের ওই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, কৃষির প্রয়োজন ছাড়া গবাদি পশু বাজার থেকে কেনাবেচা করা যাবে না। এখন থেকে ক্রেতাকে প্রমাণ দিতে হবে তিনি কৃষিজীবী, কৃষির প্রয়োজনে পশু কিনছেন এবং বিক্রেতাকে লিখিত ভাবে জানাতে হবে, জবাইয়ের জন্য পশুটিকে বিক্রি করা হচ্ছে না।

ক্রেতা এবং বিক্রেতা দু’জনকেই তাদের সচিত্র পরিচয়পত্র দিতে হবে। পশু বাজারের আধিকারিকরা সেগুলো খতিয়ে দেখে তবে অনুমোদন দেবেন।

বাজার বসার ক্ষেত্রেও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এতদিন পর্যন্ত বেশির ভাগ রাজ্যেই এ ধরনের বহু বাজার বসত সীমানা এলাকায়, যাতে পড়শি রাজ্যের লোকেরাও তাতে অংশ নিতে পারেন।

নতুন নির্দেশনায় বলা হয়েছে, দুই রাজ্যের সীমানা থেকে ২৫ কিলোমিটার এবং সীমান্ত থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে পশুর বাজার বসাতে হবে। সীমান্তে পশুপাচার ঠেকাতেই এই পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে।

এর আগে উত্তর ভারতের একাধিক রাজ্যে ‘বেআইনি’ মাংসের দোকান বন্ধে অভিযান চালানো হয়েছে। পরের ধাপে কেন্দ্রের এই নির্দেশিকা দেশজুড়ে গবাদি পশু ব্যবসাকেই নজরদারির আওতায় আনল।

এতদিন দেশজুড়ে বিতর্ক চলছিল গোমাংস এবং গোহত্যা নিয়ে। এবার সামগ্রিকভাবে গবাদি পশুই বিতর্কের কেন্দ্রে চলে এল।

নতুন নির্দেশনাকে কটাক্ষ করে কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন টুইট করেছেন, ‘কার্যত গবাদি পশুহত্যা যেভাবে আটকানো হচ্ছে, তাতে বহু মানুষের খাবারে টান পড়বে। এটা বহুত্ববাদের উপরে হামলা।’

যদিও বিজেপির সাধারণ সম্পাদক মুরলীধর রাওয়ের কথায়, ‘এই আইন ভারতীয় আত্মা ও সংস্কৃতির অনুরূপ। পশুধনকে মাংস হিসেবে দেখার বিকৃতি এর ফলে দূর হবে।’

কংগ্রেস নেতা শশী থারুর জবাবে মনে করান, ‘গাঁন্ধিজী কিন্তু নিজের দৃষ্টিভঙ্গি অন্যের উপর চাপিয়ে দেয়ার বিরোধী ছিলেন।’