জরিপের ফল : ট্রাম্পের প্রতি আস্থাহীন বিশ্বের ৭৪ ভাগ মানুষ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপর ভরসা নেই বিশ্বের তিন-চতুর্থাংশেরই। ট্রাম্পের নেতৃত্ব দুর্বলতা ও নীতির কারণে ইউরোপে মিত্রদের হারাতে বসেছে যুক্তরাষ্ট্র। গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চ সেন্টার প্রকাশিত এক জরিপের ফলাফলে এই আভাস পাওয়া গেছে। জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, ৩৭টি দেশের নাগরিকদের নিয়ে করা গবেষণায় দেখা যায়, ট্রাম্পের উপর আস্থা রয়েছে মাত্র ২২ শতাংশের। তারা মনে করেন আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে সঠিক কাজই করছেন ট্রাম্প। আর ৭৪ শতাংশের ট্রাম্পের উপর কোনও ভরসাই নেই।

বারাক ওবামার শেষ বছরে তার প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন বিশ্বের ৬৪ শতাংশ মানুষ। তারা মনে করেন বিশ্বের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সঠিক ভূমিকা পালনে সচেষ্ট ছিলেন ওবামা। জরিপটি আভাস দিয়েছে, ইরাক আগ্রাসন নিয়ে অনেক দেশেই জর্জ বুশের জনপ্রিয়তায় যে পরিমাণ ধস নেমেছিল, ট্রাম্পের অবস্থান এখন তার থেকেও নিচে। দুই-তৃতীয়াংশ ট্রাম্পকে ‘একগুঁয়ে ও বিপদজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন।

পিউ রিসার্চ সেন্টার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি জনমত জরিপ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান। এটি যুক্তরাষ্ট্রসহ সারাবিশ্বের সামাজিক বিষয়ে জনমত সম্পর্কে জরিপ করে ও ধারণা দেয়। নানান ধরণের সামাজিক, ভৌগলিক আর ব্যক্তি মতামত নিয়ে গবেষণা পরিচালনা করে থাকে। পিউ রিসার্চ সেন্টারের গবেষণালব্ধ তথ্য আর উপাত্তকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়।

৮০-এর দশকে চালু হওয়া নব্য উদারবাদী অর্থব্যবস্থা যখন যুক্তরাষ্ট্রসহ সারাবিশ্বে ব্যর্থতার নজির স্থাপন করেছে, ঠিক তখনই ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নামের সংরক্ষণশীল অর্থনীতির রূপরেখা নিয়ে মার্কিন রাজনীতির মঞ্চে হাজির হন আবাসন ব্যবসায়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভয়াবহ বৈষম্য উৎপাদনকারী নব্য উদারবাদের জন্মভূমি যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তবাজারের অসারতা প্রমাণ করতে সমর্থ হন তিনি। আর সে কারণেই ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতিতে কর্মসংস্থান ও দারিদ্র্যমুক্তির স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন আমেরিকানরা। আর ওই নীতিতে শ্বেতাঙ্গ দরিদ্র আমেরিকানদের আস্থার কারণেই ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে সমর্থ হন। তবে বিশ্ববাসীর কাছে ট্রাম্পকে জনপ্রিয় করতে পারেনি তার আমেরিকা ফার্স্ট নীতি। বরং এই নীতির সাপেক্ষে তার মুসলিম নিষেধাজ্ঞা ্ও সামরিক ব্যয় বৃদ্ধির প্রয়াসকে নেতিবাচক চোখে দেখেছে বিশ্ববাসী।

‘আমেরিকা ফার্স্ট’কে কোনোভাবেই নব্য উদারবাদী অর্থ ব্যবস্থার রিপ্লেসমেন্ট ভাবতে পারছেন না অর্থনীতিবিদেরা। তাদের মতে, এই অর্থব্যবস্থার কোনও গন্তব্যই নেই। তারপরও যুক্তরাষ্ট্র যখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বহুপক্ষীয় সম্পর্কের চেয়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককেই গুরুত্ব দিতে যাচ্ছে, তখন বিশ্বের অনেক দেশই নিজ-নিজ স্বার্থ সংরক্ষণে সম্পর্কের নতুন সমীকরণ আর নতুন জোট গঠনের চিন্তাভাবনা শুরু করে দিয়েছে। ট্রাম্পের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা বিশ্ব অর্থনীতিতে যে বিপন্নতা তৈরি করেছে, তা পুরনো অর্থনৈতিক সম্পর্ক বদলে দিচ্ছে বলেও আভাস মিলেছে। আভাস মিলেছে বিশ্ববাণিজ্যে একটি পরিবর্তনের সম্ভাবনারও।