জাতীয় দল থেকে অবসরের ঘোষণা হকি তারকা চয়নের

দীর্ঘ এক যুগ জাতীয় দলে সেবা দিয়ে লাল-সবুজ জার্সি তুলে রাখছেন দেশের হকির এ সময়ের অন্যতম সেরা তারকা মামুনুর রহমান চয়ন। শনিবার দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে এশিয়ান গেমস হকির পঞ্চম স্থান নির্ধারণী ম্যাচের পর আর জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়াবেন না পেনাল্টি কর্নারে পারদর্শী এ ডিফেন্ডার। শুক্রবার সন্ধ্যায় তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন।

বর্তমানে দেশের হকির কথা উঠলেই প্রথমে সামনে আসে জিমি-চয়নের নাম। হকির আকাশের এ দুটি তারার একটি চয়ন খসে পড়বে আর ২৪ ঘন্টা পর। এশিয়ান গেমস শেষে চয়ন যখন দেশে ফিরবেন, তখন তার নামের আগে বসবে ‘জাতীয় দলের সাবেক তারকা খেলোয়াড়’ কথাগুলো।

চয়নের এখনো যে পারফরম্যান্স তাতে অবসরের সময় কি হয়েছে? এ প্রশ্নের জবাবে সবাই বলবেন ‘না’। তবে কেন এখনই চলে যাওয়া তার? শুক্রবার সন্ধ্যায় নিজের অবসর ঘোষণা দিতে গিয়ে চয়ন আবেগময় স্ট্যাটাস দিয়েছেন নিজের ফেসবুক ওয়ালে। তার দেয়া সেই স্ট্যাটাস পুরোটা তুলে দেয়া হলো আওয়ার নিউজ বিডি’র পাঠকদের জন্য…

”বাংলাদেশ জাতীয় হকি দলে দীর্ঘ ১২ বছরের বেশি সময় ধরে প্রতিনিধিত্ব করা আমার জন্য অনেক গর্বের এবং সম্মানের..
আমি জাতীয় দলে দীর্ঘদিন সহকারী অধিনায়ক তারপর অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছি..
আমার উপর আস্থা রাখার জন্য এবং বাংলাদেশ জাতীয় হকি দলের নেতৃত্ব প্রদানের সুযোগ দেয়ার জন্য বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের প্রতি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ…
হকি থেকে আমি অনেক কিছু পেয়েছি। হকি আছে বলেই আজ আমি চয়ন…
আমার সকল ভক্ত, পরিবার এবং বন্ধুদের প্রতি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ আমাকে সবসময় সমর্থন করার জন্য..
এই সুদীর্ঘ ক্যারিয়ারে কখনো ভালো খেলেছি কখনো খারাপ খেলেছি, কখনো বাংলাদেশ দলের হয়ে গোল করতে পেরেছি, কখনো পারি নাই। কিন্তু আমি সবসময় চেষ্টা করেছি মাঠে আমার সর্বোচ্চ দেয়ার…
আমি আমার ভক্তদের সব সময় সব ম্যাচে খুশি করতে না পারার জন্য ক্ষমা চাইছি…
এই মুহূর্তে দল হিসেবে আমরা খুব ভাল খেলছি..
আমাদের টিমের মধ্যে আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়েছে..
যে কোন দলকে আমরা গোল দেয়ার ক্ষমতা রাখি…
যদি বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের সঠিক পরিকল্পনা থাকে। তাহলে আমার বিশ্বাস, আমরা একদিন ওয়ার্ল্ড কাপ খেলব আর সেদিন বেশি দূরে নয়..

আমি মনে করি বাংলাদেশ জাতীয় হকি দল থেকে অবসর নেয়ার এটাই আমার উপযুক্ত সময়…
কালকে কোরিয়ার সাথে ম্যাচ হবে আমার জাতীয় দলে খেলা শেষ ম্যাচ..
আমার ফ্যামিলি সেটাই চায়..
আমি আমার বাবা মার একমাত্র ছেলে..
আর আমারও একটাই ছেলে, ওর বয়স তিন বছর..
আমার ছেলেটা কিভাবে বড় হলো..
কিভাবে হাঁটা শিখলো..
কিভাবে কথা বলা শিখছে..
আমি কিছুই দেখতে পারি নাই। সবকিছু ফোনে শুনতে হয়েছে। আর কতো ঈদ যে দেশের বাইরে করেছি, তার হিসেব নেই। এখন থেকে আমার পুরোটা সময় আমি আমার ফ্যামিলিকে দিতে চাই। আমার ছেলেকে দিতে চাই…

হয়তো বুকে আর জাতীয় পতাকা দৃশ্যমান থাকবে না..
তবে দেশের প্রতি ভালোবাসা সব সময় থাকবে..
হকির প্রতি ভালোবাসা সবসময় থাকবে..
অনেক মিস করবো আমার সাথে জাতীয় দলে খেলা সকল খেলোয়াড়কে..
কত যে মজার স্মৃতি আছে বলে শেষ করা যাবে না…
অনেক মিস করবো খেলার আগে শুরু হওয়া আমাদের জাতীয় সংগীতকে…
অন্য দেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে আমাদের নিজেদের জাতীয় সংগীত গাওয়ার অনুভূতি যে কি, তা বলে বোঝানো যাবে না..

যাই হোক আপনারা সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন..
আমি যেন আমার ফ্যামিলিকে নিয়ে ভালো থাকতে পারি এবং আমার কর্মস্থান বাংলাদেশ নৌ বাহিনী হকি দলকে সকল প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারি..

আমি মামুনুর রহমান চয়ন সজ্ঞানে স্বইচ্ছায় কারো প্রতি কোন অভিযোগ ছাড়া বাংলাদেশ জাতীয় হকি দল থেকে অবসর গ্রহণ করলাম…
আসসালামালাইকুম..”