জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকটের যৌক্তিক সমাধান

শাহিনুর রহমান শাহিন, জাবি প্রতিনিধি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলমান সংকটের যৌক্তিক সমাধান হয়েছে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে দীর্ঘ ৯ ঘণ্টার আলোচনার পর উভয় পক্ষ সমঝোতা পৌঁছায় বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর মধ্য দিয়ে দুই মাসের বেশি সময় ধরে চলা পরিস্থিতির আপাত সমাধান হলো।

আলোচনা শেষে উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম জানান, ছাত্র-শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে আলোচনার মাধ্যমে এমন যৌক্তিক ও সম্মানজনক সিদ্ধান্তই নেওয়া হয়েছে। এ সময় চলমান সংকট নিরসনে প্রশংসাসূচক মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করার জন্য শিক্ষক সমিতিকে ধন্যবাদ জানান উপাচার্য। চলমান সংকট নিরসনে ভূমিকা পালনকারী শিক্ষক সমিতির সম্পাদক অধ্যাপক ড. ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘আমরা সব সময় সম্মানজনক সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে এসেছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সমর্থন পেয়েছি, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। ’

আন্দোলনকারীদের পক্ষে ছাত্রফ্রন্ট জাবি সংসদের সাধারণ সম্পাদক সুস্মিতা মরিয়ম বলেন, চলমান সংকটের সম্মানজনক সমাধান প্রক্রিয়াধীন থাকায় আন্দোলন প্রত্যাহার করা হয়েছে।

উপাচার্যের বাসভবনে হামলা ও শিক্ষক লাঞ্ছনার অভিযোগে প্রশাসনের করা এ মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে প্রায় দুই মাস ধরে মানববন্ধন, মৌন মিছিল, আমরণ অনশন, প্রশাসনিক ভবন অবরোধসহ বিভিন্ন আন্দোলন চালিয়ে আসছে শিক্ষার্থীরা। টানা চতুর্থ দিনের মতো প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করলে উপাচার্যের আশ্বাসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে সমঝোতার জন্য আলোচনায় বসে শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষে আলোচনায় অংশ নেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবুল হোসেন, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. আমির হোসেন, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক শেখ মনজুরুল হক, প্রক্টর অধ্যাপক তপন কুমার সাহা ও রেজিস্ট্রার আবু বকর সিদ্দিক। শিক্ষার্থীদের পক্ষে প্রতিনিধিদলে অংশ নেয় জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি তৌহিদ হাসান শুভ্র, সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হোসাইন, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সভাপতি ইমরান নাদিম, সাধারণ সম্পাদক নজির আমিন চৌধুরী জয়, ছাত্রফ্রন্ট জাবি সংসদের সভাপতি মাসুক হেলাল অনিক, সাধারণ সম্পাদক সুস্মিতা মরিয়মসহ ১৫ জনের প্রতিনিধিদল। এ ছাড়া প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ আহমদ, সাধারণ সম্পাদক সহযোগী অধ্যাপক ফরিদ আহমেদসহ কয়েকজন শিক্ষক নেতা আলোচনায় অংশ নেন।

উল্লেখ্য, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত দুই শিক্ষার্থীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে গত ২৭ মে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। সেখানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের পর উপাচার্যের বাসভবনে বিক্ষোভ করে তারা। পরে উপাচার্যের বাসভবনে ভাঙচুর ও শিক্ষক লাঞ্ছনার অভিযোগে ৫৬ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। মামলা করার পর থেকে তা প্রত্যাহারের দাবিতে ‘শিক্ষক-শিক্ষার্থী ঐক্যমঞ্চ’ ও ‘প্রতিবাদের নাম জাহাঙ্গীরনগর’-এর ব্যানারে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছিল শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে ‘সন্ত্রাস ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে শিক্ষকবৃন্দ’-এর ব্যানারে মাঠে নামার ঘোষণা দেন শিক্ষকরা। তা ছাড়া চতুর্থ দিনের মতো সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করে। শেষ পর্যন্ত আলোচনার মধ্য দিয়ে বিষয়টির সম্মানজনক সমাধান হলো।