জিপিএ-৫ পেয়েও পড়াশুনা নিয়ে সংশয়ে আশিক!

ইয়াজিম ইসলাম পলাশ, রাবি প্রতিনিধি: সড়ক দুূর্ঘটনায় অস্স্থু হয়ে শয্যাশায়ী বাবা। পাঁচ সদস্যের পরিবার। ছোটভাই চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ারত। সবমিলে টানাপোড়ার মধ্যে চলে সংসার। এমতাবস্থায় অসুস্থ বাবার ঔষধ খরচসহ পরিবারের ভোরণপোষনের দায়িত্ব এখন এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া আশিকের। হকারি করেই জোগান দেয় সব খরচ। বাবার হকারির পেশা এখন নিজেই বেঁছে নিতে বাধ্য হয়েছেন। কলেজে ভর্তি হতে চায় আশিক। কিন্তু অজানা সংশয় ঘিরে ধরেছে আশিককে। ভর্তির টাকা পাবো কোথায়? সংসার চালাবো কীভাবে? এমন হতাশাজনক প্রশ্নই ঘোঁরপাক খায় আশিকের মনে।

আশিক আলীর বাড়ি রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার ইউসুফপুর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত বাদুড়িয়া গ্রামে। বাবা আহসান হাবিব ছিলেন পত্রিকার হকার।

আশিকের সংগ্রাম শুরু এসএসসি পরীক্ষার তিনমাস পূর্বে। পত্রিকা বিক্রি করে চালাতে শুরু করে চিকিৎসা ও নিজের পড়াশোনা। এভাবে সারাদিন হকারি করেও ২০১৭ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষায় সর্বোচ্চ সফলতা অর্জন করে আশিক। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে সে জিপিএ-৫ অর্জন করে। কিন্তু জীবন যুদ্ধ তার থেমে যায়নি। এসএসসিতে ভালো ফলাফল করলেও টাকার অভাবে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তার কলেজে ভর্তি হওয়া।

প্রতিদিন ভোর ৫টায় ঘুম থেকে ওঠেই দীর্ঘপথ পেরিয়ে এজেন্টের কাছ থেকে পত্রিকা নিয়ে বিলি করতে বেরিয়ে পড়ে আশিক। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুরের বিভিন্ন মেস এবং কাটাখালি বাজারে পত্রিকা বিক্রি করেই এখন কোনো রকমে চলছে তাদের সংসার।

একদিকে সংসার চালানো যেমন কষ্টকর হয়ে পড়েছে, অন্যদিকে কলেজে ভর্তি হওয়ার খরচ জোগাড় করাও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বলে হতাশা ব্যক্ত করেন আশিক আলী।

তিনি বলেন, ‘এসএসসি পরীক্ষার ৩-৪ মাস আগে বাবা সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন। তখন থেকেই আমি নিজেই পত্রিকার হকারি শুরু করি। পরীক্ষার মধ্যেই এই কাজ করতাম। এক পরীক্ষা থেকে অন্য পরীক্ষার মধ্যে ছুটির দিনগুলোতেও পত্রিকা বিক্রি করেছি। সারাদিন পত্রিকা বিক্রি করে রাতে এসে পড়াশুনা করা খুব কষ্টকর হলেও মা-বাবা মুখে দিয়ে চেয়ে পড়াশুনা চালিয়ে যেতাম।’

আশিকের বাবা আহসান হাবিব বলেন, ‘আমি কখনও চাই নি আমার ছেলে এই কাজ করুক। কিন্তু এক্সিডেন্ট করে বিছানায় পড়ে ছিলাম। সুস্থ হতে দেরি হলে কাজটা হারাতাম। তাই কাজটি ধরে রাখতেই ছেলেকে পাঠাতে হয়। এতো কষ্ট করেও আশিক পড়াশুনা করেছে। আল্লাহ ওর মুখের দিকে চাওয়ায় এ+ পেয়েছে।’

পরক্ষণে মুখের কোণের ইষৎ হাসি মিলিয়ে যায় আহসান হাবিবের। ছেলের এমন সাফল্যের পরও শঙ্কিত বাবা বলেন, ‘ছেলেকে ভালো কলেজে ভর্তি করাতে চাই। কিন্তু ভর্তির এতো টাকা পাব কোথায়? ওর স্বপ্ন, আমাদের স্বপ্ন পূরণের বড় বাধা অর্থ।’ সমাজের বিত্তশালী সহৃদয়বান ব্যক্তিদের কাছে সহায়তা কামনা করেন তিনি।

চলতি মাসের ১১ তারিখের দিকে কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য অনলাইনে আবেদন করে আশিক। আসন্ন জুন মাসের ১১ তারিখের দিকে কলেজ সিলেকশন হলে ভর্তি শুরু হবে।

হঠাৎ বাবার অসুস্থতায় তার আকাশ ছোঁয়া স্বপ্নগুলো মলিন হয়ে গেছে। বড় হয়ে কী হতে চাই এমন প্র¤œ নিরবতা ভাঙতে পারে না তার। আশিকের এখন একটায় চিন্তা, কীভাবে সে কলেজে ভর্তি হবে?