টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর যেতেই তিন ঘণ্টা, যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক এবং ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ব্যবহার করে যাতায়াত করে দেশের ৪৬টি জেলার মানুষ। অথচ গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কটি দিনের পর দিন ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে উঠছে। এতে করে যাত্রীদের ভোগান্তি পৌঁছেছে চরমে। সারা বছরই এই মহাসড়কটিতে বিভিন্ন পণ্যবাহী ও যাত্রীবাহী বাসের চাপ থাকলেও ঈদ এলে সেই চাপ আরও বেড়ে যায়। গত ঈদুল ফিতরেও ঘরমুখো লাখো মানুষকে এই মহাসড়কে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। ঈদুল আজহায় কোরবানির পশুর হাটের কারণে সেই ভোগান্তি আরও প্রকট আকার ধারণ করবে বলে মনে করছেন সাধারণ যাত্রীরা।

পবিত্র ঈদুল আজহার আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। দুই একদিনের মধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কে শুরু হবে ঘরমুখী মানুষের ঢল। কিন্তু ঈদের আগেই প্রতিনিয়ত যানজটে নাকাল হচ্ছে জনজীবন। সকাল থেকে শুরু হয় যানজট। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই সেই যানজট রূপ নেয় তীব্র যানজটে। সন্ধ্যার পর যানজটের কারণে মহাসড়কটি প্রায় অচল হয়ে পড়ে, ভেঙে পড়ে ট্রাফিক ব্যবস্থা।

গত কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী ব্রিজ থেকে গাজীপুর চান্দনা-চৌরাস্তা এবং টঙ্গী-কালীগঞ্জ সড়কের স্টেশন রোড থেকে মিরেরবাজার পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে হাঁটু পরিমাণ পানি জমে ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। শিল্পনগরী হওয়ায় প্রচুর কল-কারখানা, ঘর-বাড়ি নির্মিত হলেও সে তুলনায় ড্রেনেজ ব্যবস্থার তেমন উন্নতি হয়নি। ফলে সামান্য বৃষ্টিপাতে ড্রেনের পানি জমে রাস্তায় উঠে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করে। এতে করে মহাসড়কে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য ছোট বড় খানা-খন্দের। ফলে টঙ্গী ব্রিজ থেকে চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে সময় লাগছে তিন থেকে চার ঘণ্টা। অপর দিকে টঙ্গী-কালীগঞ্জ মহাসড়কে টঙ্গী থেকে মিরেরবাজার পর্যন্ত প্রায় আট কিলোমিটার রাস্তাজুড়ে যানজটের ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। প্রতিনিয়ত চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। যাত্রার শুরুতেই অনাহুত ভোগান্তিতে মানুষের চোখেমুখে দেখা দিচ্ছে একরাশ বিরক্তি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, টঙ্গী স্টেশন রোড, চেরাগআলী, গাজীপুরা সাতাইশ, বোর্ডবাজার, সাইনবোর্ড, মালেকের বাড়ি, বাসন সড়ক ও ভোগড়া বাইপাস এলাকায় অতিরিক্ত বৃষ্টির পানি জমে গর্ত তৈরি হওয়ায় ধীরগতিতে যানবাহন চলাচল করছে। অপরদিকে সড়কের বাম লেন কর্দমাক্ত ও ময়লার ডাম্পিং স্টেশন থাকায় বড় গাড়িগুলো এক লাইন দিয়ে চলছে। এতে মহাসড়কটি সরু হয়ে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে মহাসড়কগুলোতে পণ্যবাহী ও যাত্রীবাহী যান চলাচলও বেড়েছে। আর এই সময় মহাসড়কে চলছে উন্নয়ন কাজ। ছোট বড় গর্তগুলোকে সামান্য ইট-শুরকি, বিটি বালু ও পিচ দিয়ে অস্থায়ীভাবে সংস্কার করা হচ্ছে। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই অস্থায়ী সেই সংস্কার কাজ ভেস্তে যাচ্ছে। তবে মহাসড়কে বেশ কিছুদিন ধরে চলা জোড়াতালির সংস্কার কাজকে লোক দেখানো বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। চলতি বর্ষার শুরু থেকে গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কটির বিভিন্ন অংশের কার্পেটিং উঠে গর্ত সৃষ্টি হলে মহাসড়কটি বেহাল হয়ে পড়ে।

একদিকে মহাসড়কে জোড়াতালির সংস্কার কাজ চলছে অন্যদিকে ঈদ উপলক্ষে যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি ও ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে খানাখন্দ সৃষ্টি হয়ে যানজট যেন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে প্রতিনিয়ত। অতিরিক্ত বৃষ্টিতে খানাখন্দগুলো আরও গভীর হচ্ছে। গর্তে পড়ে বিকলও হচ্ছে অনেক গাড়ি, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবে সেগুলো সরাতেও বেগ পেতে হচ্ছে পুলিশকে। এছাড়া অতিরিক্ত পণ্য বহন করতে গিয়ে যান বিকল হয়ে যাওয়ায় প্রায় মহাসড়কে সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ যানজট। আরও রয়েছে ওভারটেক, যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা, গাড়ি পার্কিং এবং সড়কের দুই পাশের অবৈধ দোকান-পাট, ও কাপড়ের বাজার। আর এসব কারণে কমানো যাচ্ছে না গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কটির যানজট। ফলে তীব্র যানজটে দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকার কারণে যাত্রী, অ্যাম্বুলেন্সে থাকা রোগী, নারী, বৃদ্ধ ও শিশুদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

এ ব্যাপারে গাজীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাহিন রেজা জানান, সওজ ও বিআরটি যৌথভাবে মহাসড়কের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মেরামতের কাজ করছে। তবে এ সমস্যা খুব দ্রুতই সমধান হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

গাজীপুরের হাইওয়ে পুলিশ সুপার শফিকুল ইসলাম বলেন, যানজট নিরসনে গাজীপুর ট্রাফিক পুলিশ তৎপর রয়েছে, তবে রাস্তার বেহাল দশার কারণে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এ কর্মকর্তা।

গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন অর-রশিদ জানান, যানজট নিরসনের লক্ষে ফুটপাতে ও রাস্তার দুই পাশে গড়ে উঠা সব দোকান ও বাজার ইতোমধ্যে উচ্ছেদ করা হয়েছে। ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি মহাসড়কে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছে কমিউনিটি পুলিশের সদস্যরা। আশা করছি এবার ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের কোনোরকম ভোগান্তি হবে না।